ড. কামালকে ‘অসাংগঠনিক’ কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার অনুরোধ

‘উদ্ভুত পরিস্থিতিতে গণফোরামকে রক্ষার প্রত্যয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নেতারা
ছবি: প্রথম আলো

গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড.কামাল হোসেনকে তাঁর ‘অসাংগঠনিক’ কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করেছেন দলটির বিদ্রোহী অংশের নেতারা। তাঁরা আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অনুরোধ জানান।

‘উদ্ভুত পরিস্থিতিতে গণফোরামকে রক্ষার প্রত্যয়’ শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিদোহী অংশের মুখপাত্র সুব্রত চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও মোস্তফা মহসীন মন্টু।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বিগত কিছু দিন থেকে গণফোরাম সাংগঠনিক এবং রাজনৈতিক সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে। গত ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন লাভের আশায় দলে কিছু সুবিধাবাদী লোকের অনুপ্রবেশ ঘটে। তাদের মধ্যে অন্যতম রেজা কিবরিয়া। তাঁকে ২০১৯ সালের ৫ মে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন ড.কামাল হোসেন। এই ঘটনা সবাইকে বিস্মিত করে। এরপর থেকে ড. কামাল হোসেন সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়াকে সঙ্গে নিয়ে যে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তা গ্রহণযোগ্য নয়। এমতাবস্থায় দলের দুই তৃতীয়ংশ সদস্য লিখিতভাবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে কেন্দ্রীয় কমিটির সভা আহ্বান করার অনুরোধ জানান। কিন্তু সভা করা হয়নি। বরং দুই তৃতীয়ংশ সদস্যের মতামত উপেক্ষা করে দলের সম্পাদকীয় পরিষদের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত চারজন সদস্যকে বহিষ্কার করা হয়।

এ ছাড়া গণফোরাম ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের ফল প্রত্যাখান করে। কিন্তু সুলতান মোহাম্মদ মনসুর এবং লন্ডন প্রবাসী মোকাব্বির খান দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করে সাংসদ হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ড. কামাল হোসেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি এবং তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ভাবে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে দেননি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গণফোরামের গঠনতন্ত্রে কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির বিধান নেই। তবু জাতীয় কাউন্সিলে গঠিত কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করে ড.কামাল হোসেন সভাপতি এবং রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে আহ্বায়ক কমিটি করেছেন। দলের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে আগামী ২৬ ডিসেম্বর গণফোরামের ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছে। এর আগে রেজা কিবরিয়াকে সঙ্গে নিয়ে ড. কামাল হোসেনকে কোনো ধরনের অগ্রহণযোগ্য আচরণ না করতে অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায় তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে গঠনতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিদ্রোহী অংশের অন্যতম নেতা মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, ড.কামাল হোসেন সম্মানীয় ব্যক্তি। তাঁর প্রতি সবার শ্রদ্ধা রয়েছে। তিনি যদি এর মধ্যে কোনো অসাংগঠনিক কার্যক্রম না করে ২৬ ডিসেম্বর গণফোরামের (বিদ্রোহী অংশের ডাকা) জাতীয় সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করেন, তবে তাঁর সম্মানের মর্যদা দিয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, ‘গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে কামাল হোসেনের মর্যদা রেখেই আমরা অগ্রসর হতে চাই। তিনি রাজনীতির বিবেক ও অভিভাবক হিসেবে পরামর্শ দিতে পারেন। এখন আমাদের মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কাজ করতে হবে।’ তিনি বলেন, দেশের বড় দলগুলো ব্যক্তিকেন্দ্রীক। এই ব্যক্তিকেন্দ্রীকতা থেকে বেরিয়ে এসে যৌথনেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অগ্রসর হতে হবে। দলের ভেতরে গণতন্ত্রের চর্চা করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিদ্রোহী অংশের নেতা এ কে এম জগলুল হায়দার, হেলাল উদ্দিন, লতিফুল বারী, আইয়ুব খান, নীলুফার ইয়াসমিন প্রমুখ।