ডাকসুতে ছাত্রলীগ ছাড়া কেউ কাজ করেনি: ছাত্রলীগ সভাপতি

ট্যালেন্ট হান্ট প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। ১২ মার্চ, টিএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: আসিফ হাওলাদার
ট্যালেন্ট হান্ট প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। ১২ মার্চ, টিএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: আসিফ হাওলাদার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেল সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ থেকে জয়ী ২৩ প্রতিনিধির বাইরের অন্য দুজন (ভিপি নুরুল হক ও সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন) কোনো কাজ করেননি বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান। ছাত্রলীগ সভাপতি বলেছেন, সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদের মতো কাজ আর কেউই করতে পারেনি। অন্য দুজন তাঁদের ‘কথার ফুলঝুরিই’ ফুটিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) মাঠে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ট্যালেন্ট হান্ট’ শীর্ষক প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আল নাহিয়ান খান এসব কথা বলেন। শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক প্রতিভা অন্বেষণে ডাকসুর সংস্কৃতি সম্পাদক আসিফ তালুকদারের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো ক্যাম্পাসব্যাপী এই প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়।

অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান বলেন, গত বছরের মার্চে অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেল সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ ডাকসুর মাধ্যমে অনেক কাজ করেছে। তিনি আশা করেন, ডাকসু আরও ভালো ভালো কিছু প্রোগ্রাম আয়োজন করবে। শিক্ষার্থীরা ডাকসুর মাধ্যমে উপকৃত হয়েছে। আল নাহিয়ান খান বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভাই হিসেবে শিক্ষার্থীদের সুখে-দুঃখে পাশে আছি এবং থাকব।’

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমি ও সভাপতি (আল নাহিয়ান খান) একসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ট্যালেন্ট হান্টের বেশির ভাগ পারফরম্যান্স ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পারফরম্যান্স বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের রিয়্যালিটি শোগুলোর চেয়ে কোনো অংশ কম নয় বরং অনেক ভালো। এই আয়োজনটাকে সাধুবাদ জানাচ্ছি।’ ছাত্রলীগের ডাকসু প্রতিনিধিদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে দীর্ঘ ২৮ বছরের অচলায়তন ভেঙে গত বছর যে ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল, সেখানে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে ২৩ জন নির্বাচিত হয়েছিলেন। আমি মনে করি, গত এক বছরে ২৩ জনই ছাত্রলীগের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে সুষ্ঠুভাবে কাজ করেছেন।’

ডাকসুর সব সফলতাই ছাত্রলীগের প্রাপ্য— এমন মন্তব্য করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) সাদ্দাম হোসেন অনুষ্ঠানে বলেন, ‘ডাকসুর ছাত্র অধিকার আদায়ের সংগ্রামগুলো সফল করার জন্য আমাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র ও হাতিয়ার ছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ ডাকসুকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। শিক্ষার্থীদের স্বার্থ ও অধিকার আদায়ে আমরা যতটুকু সফল হয়েছি, এর পুরো সফলতাই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রত্যেকটি নেতা-কর্মীর প্রাপ্য। আজকে আমরা নির্বাচিত নেতৃত্বের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারছি। এই সমস্ত কিছুর জন্যই ছাত্রলীগের কাছে আমাদের ঋণ রয়েছে। ছাত্রলীগ আমাদের যে শিক্ষা দিয়েছে, সেই শিক্ষা আমরা ডাকসুতে রূপায়িত করার চেষ্টা করেছি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ডাকসু ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’

এক বছরের পথচলায় ডাকসুর কিছু ভুল, ব্যর্থতা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলে স্বীকার করে ডাকসুর অর্জনও তুলে ধরেন সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, ‘ডাকসুর মাধ্যমে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জবাবদিহিমূলক ছাত্ররাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি, গণতান্ত্রিক প্রতিযোগিতার ছাত্ররাজনীতি আমরা উপহার দিতে পেরেছি। শিক্ষার্থীদের বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করেই যেন ছাত্ররাজনীতি পরিচালিত হয়, সেটি আমরা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি। জাতীয় রাজনীতির এক্সটেনশন হিসেবে ছাত্ররাজনীতি পরিচালনার ধারায় আমরা ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসতে পেরেছি। কারও ক্যানটিনের মান ভালো না খারাপ, কারও বিভাগের পরীক্ষার ফি বেশি না কম, নিয়মিত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা আদায় করতে পারছে কি না—এসব বিষয়কে কেন্দ্র করেই আমরা ছাত্ররাজনীতি পরিচালনা করার চেষ্টা করেছি। ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ডাকসু ছাত্ররাজনীতিতে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেন যুগোপযোগী হয়, যেন একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপযোগী হয়, যেন সাংস্কৃতিকভাবে আরও পরিশীলিত ও ঋদ্ধ হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ প্রজন্ম যেন মননশীল হয়ে ওঠে- সেই জায়গা থেকে ডাকসু কাজ করার চেষ্টা করেছে। কয়েক দিন পর হয়তো আমরা দায়িত্বে থাকব না, কিন্তু আমাদের অনেক কাজের সুফল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতেও ভোগ করবেন।

ট্যালেন্ট হান্ট প্রতিযোগিতার প্রধান সমন্বয়ক আসিফ তালুকদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, আয়োজনের পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান জেএমআই গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুর রাজ্জাক, প্রতিযোগিতার প্রধান বিচারক বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান আহমেদুল কবীর প্রমুখ বক্তব্য দেন। অতিথিরা বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

যাঁরা পুরস্কার পেলেন
গত বছরের ১ থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি আবাসিক হলে পর্যায়ক্রমে ট্যালেন্ট হান্ট প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, লোকসংগীত, আধুনিক গান, একক নৃত্য, একক অভিনয় ও আবৃত্তি— এই সাতটি ক্যাটাগরিতে অনেক শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। হল পর্যায়ে বিজয়ীদের নিয়ে গত মাস থেকে শুরু হয় কেন্দ্রীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা।

প্রতিযোগিতায় রবীন্দ্রসংগীত বিভাগে মনিকা দেবনাথ কথা প্রথম মেরাজ উন নবী দ্বিতীয় ও মো. রাকিবুল হক তৃতীয় হয়েছেন। নজরুলসংগীতেও প্রথম হয়েছেন মনিকা দেবনাথ কথা, দ্বিতীয় তৌহিদুল ইসলাম আর তৃতীয় হয়েছেন আকতারী সারা সাবা। আধুনিক গানে প্রথম তৌহিদুল ইসলাম, এই বিভাগে দ্বিতীয় হয়েছেন এইচএম সালমান সাকিব, তৃতীয় হয়েছেন আকতারী সাবা। একক অভিনয় বিভাগে প্রথম হয়েছেন প্রণব বালা, এই বিভাগে দ্বিতীয় হয়েছেন মোহনা হোসেন আর তৃতীয় আবু বকর সিদ্দিক। আবৃত্তিতে প্রথম হয়েছেন সুপ্তি দাস চৈতী, এই বিভাগে দ্বিতীয় মোকাররাবিন হক আশফি আর তৃতীয় হয়েছেন হুমায়ারা তাবাসসুম। লোক সংগীত বিভাগে প্রথম হয়েছেন নূরেজান্নাত আফরিস, এই বিভাগে দ্বিতীয় হয়েছেন মাহী আহসাব স্বপ্নীল এবং তৃতীয় মোকাররাবিন হক আশফি। একক নৃত্যে প্রথম হয়েছেন হৃদয় সাহা, দ্বিতীয় হয়েছেন শাহ আলম আর তৃতীয় হয়েছেন মোতমাইনা মনি। বিজয়ীরা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের, বিভিন্ন বিভাগ ও বর্ষে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী।