ঢাবি ক্যাম্পাসে আসতে হলে ছাত্রদলকে ক্ষমা চাইতে হবে: ছাত্রলীগ সভাপতি

আল নাহিয়ান খান
ফাইল ছবি: সংগৃহীত

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে যাঁরা ধৃষ্টতা দেখাবেন, তাঁদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসার কোনো দরকার নেই বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান। ছাত্রদলের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘যারা আমাদের নেত্রীকে নিয়ে ধৃষ্টতা দেখিয়েছে, ক্যাম্পাসে আসতে হলে তাদের ক্ষমা চাইতে হবে। ক্ষমা না চাইলে তরুণ প্রজন্ম ও শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিহত করবে। ছাত্রলীগও শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে তাদের প্রতিহত করবে।’

আজ রোববার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে আল নাহিয়ান খান এসব কথা বলেন। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের ওপর বহিরাগত ছাত্রদল ক্যাডারদের সশস্ত্র হামলার প্রতিবাদে এবং সব শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।

ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধুকন্যাকে নিয়ে যারা ধৃষ্টতা দেখাবে, তাদের ক্যাম্পাসে (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) আসার কোনো দরকার নেই। তারা ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে রাজনীতি করুক।

সন্ত্রাসের আস্তানা এই ক্যাম্পাসে হবে না। যারা আমাদের নেত্রীকে নিয়ে ধৃষ্টতা দেখিয়েছে, ক্যাম্পাসে আসতে হলে তাদের ক্ষমা চাইতে হবে। ক্ষমা না চাইলে তরুণ প্রজন্ম ও শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিহত করবে। ছাত্রলীগও পাশে থেকে তাদের প্রতিহত করবে। যারা জাতির পিতার আদর্শকে ভূলুণ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখে, তাদের প্রতিহত করার জন্য ছাত্রলীগ একাই যথেষ্ট। ছাত্রলীগের কোনো প্রশাসনের সহযোগিতা দরকার হয় না। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র করছেন। এই ষড়যন্ত্র সফল হবে না। ছাত্রলীগ রাজপথে দাঁতভাঙা জবাব দেবে। শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রদল বা অন্য কেউ অরাজকতা সৃষ্টি করতে চাইলে তাদের দাঁতভাঙা জবাব দিতে ছাত্রলীগ প্রস্তুত আছে। ধরি ধরি ধরি না, ধরলে কিন্তু ছাড়ি না। শিক্ষাঙ্গনে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতিটি যৌক্তিক দাবিদাওয়ার পাশে থেকে ছাত্রলীগ কাজ করবে।’

আল নাহিয়ান খান আরও বলেন, ‘স্বৈরাচার জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে বিএনপি গঠন করেছিলেন। সেই অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য অছাত্রদের সংগঠন ছাত্রদল তৈরি করেছিলেন। তিনি প্রমোদতরিতে নিয়ে ছাত্রদলের হাতে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও টাকা তুলে দিয়েছিলেন। ছাত্রসমাজকে নষ্ট করার প্রয়াসে জিয়াউর রহমান এ কাজ করেছিলেন। তখন বাইরে থেকে টোকাই এনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভয় দেখানো হতো। কিন্তু শেখ হাসিনার শাসনামলে টেন্ডারবাজি-অস্ত্রের ঝনঝনানি নেই।

শেখ হাসিনার উন্নয়ন দেখে ওই বুড়োদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। অছাত্রদের তথাকথিত ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলা করেছে। ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রীকে নিয়ে ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে নিয়ে যখন ওই সংগঠনের নেতা-কর্মীরা খারাপ কথা বলার ধৃষ্টতা দেখায় ও বাজে মন্তব্য করে, তখন শুধু ছাত্রলীগ নয়, দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়। ছাত্রদলের শীর্ষ নেতা বাঁশ ও লাঠি হাতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছেন। হামলা করলে শিক্ষার্থীরা কি বসে থাকবে? তারা কি বসে বসে মার খাবে? শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিহত করেছে। ছাত্রলীগ তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে।’

আজ সবাই আরামে আছেন তো, এ জন্য অনেক কিছু ভুলে গেছেন

এ সময় ছাত্রলীগকে নিয়ে নেতিবাচক সংবাদ করায় গণমাধ্যমেরও সমালোচনা করেন ছাত্রলীগের সভাপতি। গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে শিবিরকে নিয়ে রগ কাটা শুরু করেছিল বিএনপি। আজকে সবাই আরামে আছেন তো, ঘুমাতে পারেন তো, এ জন্য অনেক কিছু ভুলে গেছেন। আপনারা মনে করে দেইখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রতিটি ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করত ছাত্রদল। জিয়াউর রহমানের পথ ধরেই খালেদা জিয়াও তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের হাতে বই-খাতা তুলে দিয়েছেন। দেশের স্বাধীনতার জন্য ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন। এ ইতিহাস আপনারা ভুলে গেছেন? ছাত্রলীগ গানে-গানে, কবিতার মাধ্যমে কথা বলতে পারে, আবার ছাত্রদলের গুণ্ডাদের রাজপথেও মোকাবিলা করতে পারে। আমাদের খারাপ দিকগুলো নিয়ে সংবাদ করলে আমরা সাধুবাদ জানাব। কিন্তু তথাকথিত সুশীল হবেন না।’

ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নিঃস্বার্থভাবে দিনরাত পরিশ্রম করেন, তাঁরা অর্থের পেছনে ছোটেন না বলে দাবি করেন আল নাহিয়ান। সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘মধুর ক্যানটিন, রাজু ভাস্কর্যে তারা (ছাত্রদল) রাজনীতি করেছে। ছাত্রলীগ তাদের কোনো বাধা দেয়নি। কিন্তু বহিরাগত এনে তারা ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইছে। এর দায়দায়িত্ব কে নেবে? আপনারা নেবেন? কিছু হলেই আপনারা বলেন যে ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কথা বললেই কি সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগ হয়ে যায়? এ ধরনের কথাবার্তা থেকে সরে এসে আপনারা সত্য তুলে ধরুন। তথাকথিত অছাত্রদের মায়াকান্না দেখে বিভ্রান্ত হবেন না। গেস্টরুমকে বারবার টর্চার সেল বলে মিথ্যাচার করে কেন আপনারা ছাত্রলীগকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করেন? ছাত্রলীগ আছে বলেই আপনারা আরামে আছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা ছাত্রদলের পক্ষে সংবাদ করেন। তাঁদের বলতে চাই, আপনারা সত্যকে সত্য আর মিথ্যাকে মিথ্যা বলবেন। দয়া করে ছাত্রলীগকে মিথ্যা অপবাদ দেবেন না।’

ছাত্রত্ব না থাকায় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধু খুঁজে পান না
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘ক্ষমতায় থাকার সময় যারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অকার্যকর করে তুলেছিল, যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে নিয়ে বিভিন্ন কটূক্তিমূলক বক্তব্য ও স্লোগান দেয় এবং পঁচাত্তরের হাতিয়ারকে আবারও গর্জে ওঠার হুঁশিয়ারি দেয়, তাদের এ বিশ্ববিদ্যালয়সহ কোনো শিক্ষাঙ্গনেই ঢুকতে দেওয়া হবে না। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছেন। তাঁর ওই হাতকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেকোনো মুহূর্তে যেখানেই পাবে, সেখানেই গুঁড়িয়ে দেবে বলে আমি বিশ্বাস করি। সেখানে ছাত্রলীগের কোনো দোষ থাকবে বলে আমি মনে করি না। ছাত্রত্ব না থাকায় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা কোনো হলে অবস্থান করতে পারে না, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে কোনো বন্ধুবান্ধব খুঁজে পায় না। ছাত্ররাজনীতিকে কলুষিত করার এই অপরাজনীতি ছাত্রলীগসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা আর মেনে নেবে না। তাদের তীব্রভাবে প্রতিহত করা হবে।’

ছাত্রদলের ‘সন্ত্রাসী বাহিনীর’ স্থায়ী পরাজয় না হওয়া, সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন নিশ্চিত না হওয়া এবং এদের (ছাত্রদল) নির্মূল না করা পর্যন্ত ছাত্রসমাজ ঘরে ফিরে যাবে না বলে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন।

তিনি বলেন, ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে নিয়ে যখনই ষড়যন্ত্র করা হবে, বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ কারও নির্দেশের অপেক্ষায় থাকবে না। দুর্বার আন্দোলন নিয়ে রাজপথে নেমে এসে দুর্বার লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসী তাণ্ডববাহিনীকে পরাজিত করার জন্য ছাত্রসমাজ প্রস্তুত রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যারাই সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে ছাত্রসমাজের মধ্যে আতঙ্ক তৈরির চেষ্টা করবে, ছাত্রসমাজ তাদের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের অস্ত্র নয়, শিক্ষার্থীদের গিটার বাজবে। দুর্নীতিবাজ ও জঙ্গিবাদীদের পক্ষে সাফাই গাওয়ার মিছিল এই ক্যাম্পাসে হবে না, এখানে দেশরত্ন শেখ হাসিনার আধুনিক স্বনির্ভর বাংলাদেশের মিছিল হবে। তারেক রহমানকে লাশ উপহার দেওয়ার জন্য এই ক্যাম্পাস নয়, এই বিশ্ববিদ্যালয় মধ্যবিত্ত পিতা-মাতার স্বপ্নপূরণের ঠিকানা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সামনে আজকে প্রশ্ন এসেছে, ছাত্রদলের রাজনীতি করার প্রাসঙ্গিকতা আছে কি না।’

এ কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী অংশ নেন। সকাল নয়টায় কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা ছিল। কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী সকাল আটটা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জড়ো হন। কিন্তু ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌঁছান বেলা ১১টার পর। দুপুর ১২টার মধ্যে কর্মসূচি শেষ করে তাঁরা চলে যান।