তাজরীনের সেই দেলোয়ার এখন ঢাকা উত্তর মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি

মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন
প্রথম আলো ফাইল ছবি

আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনসের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২০১২ সালে পুড়ে মারা যান ১১১ জন পোশাকশ্রমিক। সেই ঘটনার মূল আসামি তাজরীনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। মামলার সুরাহা হয়নি ১০ বছরেও। অথচ এই দেলোয়ার হোসেনকে ঢাকা মহানগর উত্তর মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি করা হয়েছে।

১১ মে ঢাকা মহানগর উত্তর মৎস্যজীবী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেলোয়ার হোসেনকে সভাপতি ও আবদুল জলিলকে সাধারণ সম্পাদক চূড়ান্ত করা হয়। এ নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে আওয়ামী লীগের এ সহযোগী সংগঠনের নেতাদের মধ্যে। তাঁরা বলছেন, ২০১৮ সালে রাজনীতি শুরু করেছেন দেলোয়ার। সরকারের কাছ থেকে সুবিধা নিতে টাকার বিনিময়ে নেতৃত্বের পদ বাগিয়ে নিচ্ছেন এখন।

মৎস্যজীবী লীগের একাধিক নেতা অভিযোগ করেছেন, খুনের মামলার বিচার শেষ হয়নি। দলীয় রাজনীতিতেও দেলোয়ারের তেমন কোনো অংশগ্রহণ নেই। হঠাৎ করেই তিনি মৎস্যজীবী লীগ শুরু করেন। এরপর মহানগর উত্তরের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পান। এখন তাঁকেই সভাপতি বানানো হয়েছে। বিতর্কিত এমন লোক নির্বাচন করার মধ্য দিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর নস্কর প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৮ থেকেই দলে আছেন দেলোয়ার। আগের নেতারা তাঁকে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক পদ দিয়েছেন। এখন তাঁকে মহানগর উত্তরের সভাপতি করা হয়েছে। খুনের আসামিকে দলীয় নেতৃত্বে আনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি সংগঠনের সভাপতি (সাইদুর রহমান) ভালো বলতে পারবেন।

তবে মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি সাইদুর রহমানকে দুই দফায় ফোন করা হলেও তিনি কথা বলতে রাজি হননি। এ বিষয় নিয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন প্রথম আলোকে।

দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, একসময় মন দিয়ে ব্যবসা করেছেন। ব্যবসা বন্ধ হওয়ার পর এখন পুরোদমে রাজনীতি করছেন। ২০১৮ সাল থেকে দুই দফায় প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করে এখন সভাপতি হয়েছেন। তাজরীন ফ্যাশনসের মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ১০৪ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে মামলায়। সাক্ষী আদালতে আসেন না, তাই দীর্ঘদিন ধরে মামলাটি চলছে।

২০১২ সালে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন ফ্যাশনসের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুন লাগার পরপরই কারখানার তৃতীয় তলার ফটকে তালা মেরে দেওয়া হয়েছিল। এতে ১১১ জন শ্রমিক নিহত হন। অগ্নিদুর্ঘটনার পরের বছর সিআইডি অভিযোগপত্র দেয়। আসামিরা হলেন তাজরীনের এমডি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, তাঁর স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার, প্রকৌশলী এম মাহবুবুল মোর্শেদ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা দুলাল, স্টোর ইনচার্জ হামিদুল ইসলামসহ ১৩ জন। বর্তমানে আসামিরা সবাই জামিনে আছেন। মামলার সাক্ষী ১০৪ জন। তাজরীনের ঘটনায় ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানটির এমডিসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়। তবে সাক্ষী হাজির না করতে পেরে বারবার সময় নেয় রাষ্ট্রপক্ষ।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি কল্পনা আক্তার নিন্দা জানিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই তাজরীন অগ্নিকাণ্ডে শ্রমিকেরা মারা যান। মালিকের গাফিলতি ছিল এ ঘটনায়। এত মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী একজনকে সরকারদলীয় নেতা বানানো ন্যক্কারজনক। এতে ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রশ্ন উঠতে পারে।