তারেকের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলবে আ. লীগ

তারেক রহমান। ফাইল ছবি
তারেক রহমান। ফাইল ছবি
>

*গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে দুটি ইতিবাচক দিক খুঁজে পেয়েছে আওয়ামী লীগ
*সরকারি দল তারেক রহমানের ফাঁসি আশা করেছিল।
*বিএনপি ‘খুনি-সন্ত্রাসীদের দল’-প্রচারণাও চালানো হবে

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানের যাবজ্জীবন সাজা হওয়ায় বিএনপিতে তাঁর নেতৃত্বে থাকার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে বিএনপি ‘খুনি-সন্ত্রাসীদের দল’-এই প্রচারণাও চালানো হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

ক্ষমতাসীন দলের উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র জানায়, রাজনৈতিক বিষয় ছাড়াও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে দুটি ইতিবাচক দিক খুঁজে পেয়েছে আওয়ামী লীগ। প্রথমত, তারেকের সাজা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশের মাধ্যমে সরকারি দল এটা বোঝাতে চাইছে যে বিচার বিভাগ স্বাধীন। সরকারি দল তারেক রহমানের ফাঁসি আশা করেছিল। কারণ, তারেক রহমান ওই হামলার মূল হোতা হিসেবে মামলায় প্রমাণিত হয়েছে। আরেকটি হচ্ছে, তারেকের ফাঁসি হলে তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনা কঠিন হতো। যাবজ্জীবন সাজা হওয়ায় ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা থাকছে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেনেড হামলায় আহত হিসেবে তিনি রায়ে সন্তুষ্ট। তারেক রহমান যেহেতু মূল হোতা হিসেবে প্রমাণিত, তাই তাঁর সর্বোচ্চ শাস্তি তিনিসহ অনেকেই আশা করেছিলেন। তবে স্বাধীন বিচার বিভাগ যে রায় দিয়েছেন, সেটা নিয়ে তাঁদের কোনো প্রশ্ন নেই।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, এই রায়কে কেন্দ্র করে সরকারি দলের নেতারা বক্তৃতা-বিবৃতিতে তারেক রহমানকে লক্ষ্যবস্তু করা হবে। নেতৃত্ব থেকে তারেক রহমানকে বিএনপি সরিয়ে দিক-এটাই মূল চাওয়া।
এর আগে দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সাজা হওয়ার পর বিএনপিকে দুর্নীতিবাজদের দল হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল আওয়ামী লীগ ও তাদের জোট। এখন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় রায়ের পর বিএনপিকে ‘সন্ত্রাসী ও খুনিদের দল’ বলে জোরেশোরে প্রচার করা হবে বলে আওয়ামী লীগ ও ১৪-দলীয় জোট সূত্র জানিয়েছে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের একটা সাধারণ হিসাব হচ্ছে, আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির মূল কেন্দ্র বিএনপি। তাই দলটিকে একেবারে দুর্বল করে ফেলতে হলে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান নেতৃত্ব থেকে সরানো জরুরি। এ ক্ষেত্রে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা একটা আইনি ভিত্তি দিয়েছে।

আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের সূত্র বলছে, আইনি প্রক্রিয়ায় ২১ আগস্ট মামলায় বিএনপির পাওয়ার কিছু নেই। আর উচ্চ আদালতে আপিল বা চূড়ান্ত সুরাহা হওয়ার আগেই নির্বাচন চলে আসবে। নির্বাচনের পর পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ সরকারের হাতে থাকছেই। কিন্তু বিএনপিকে সন্ত্রাসীদের দল তকমা নিয়েই নির্বাচনে যেতে হবে। আর নির্বাচন প্রতিহত করা বা নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলনে নামলে সন্ত্রাসীদের দল হিসেবে কঠোরভাবে দমন করা হবে।

ওই সূত্রগুলো বলছে, তারেক রহমান আগেই দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। এত দিন ড. কামাল হোসেন ও বদরুদ্দোজা চৌধুরীসহ ‘বৃহত্তর ঐক্য’ প্রক্রিয়ার নেতাদের দুর্নীতিবাজের সঙ্গে ঐক্য করার চেষ্টার সমালোচনা করা হয়েছে। এখন খুনের মামলার সাজাপ্রাপ্ত নেতার দলের সঙ্গে ঐক্যের সমালোচনায় মুখর হবে আওয়ামী লীগ। ইতিমধ্যে তা শুরু হয়ে গেছে। পরবর্তী আওয়ামী লীগ ও জোটের সভা-সমাবেশ থেকে এসব বিষয়ে জোরালো সমালোচনা করা হবে।

ড. কামাল হোসেন ও সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘২১ আগস্টের খুনিরা, মাস্টারমাইন্ড-প্ল্যানার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত। তিনি (তারেক রহমান) যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, সেই দলের সঙ্গে কোন নৈতিকতায় ঐক্য করেন? এই খুনি দলের সঙ্গে আপনারা তথাকথিত জাতীয় ঐক্য করছেন?’

আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেনেড হামলা মামলার রায় যা হয়েছে, অপ্রত্যাশিত ছিল না। তারেক রহমানের ফাঁসি না-ও হতে পারে-এটা মোটামুটি আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে আলোচনায় ছিল। তারেক রহমান এক দশক ধরে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। আইনের চোখে তিনি পলাতক। তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনারও তৎপরতা আছে। কিন্তু যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে তেমন কোনো চুক্তি করা সম্ভব হয়নি। যাবজ্জীবন সাজা হওয়ার ফলে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় এলে যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি নিয়ে চুক্তি বা সমঝোতার চেষ্টা করতে পারবে। তবে নির্বাচনের পর সবকিছু আবার নতুন করে শুরু হবে। তখন রাজনীতিতে কী পরিস্থিতি দাঁড়ায়, এর ওপর পরবর্তী কৌশল নির্ভর করবে।