নিপুণ রায়ের অডিওটি ‘বানোয়াট’: ফখরুল

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
ফাইল ছবি

২৮ মার্চ হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালের দিন দলের কেন্দ্রীয় নেতা নিপুণ রায় চৌধুরীর ফাঁস করা অডিওকে ‘বানোয়াট’ বলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সেদিন একটি বেসরকারি টেলিভিশন জনৈক আরমানের সঙ্গে নিপুণ রায়ের কথোপকথনের একটি বানোয়াট অডিও প্রচার করে, যা প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করা। এটি বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন।

শুক্রবার বিকেলে এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, নিপুণ রায়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁর বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে এবং তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। নিপুণ রায় একজন আইনজীবী, সক্রিয় মানবাধিকারকর্মী এবং সচেতন রাজনীতিক। কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তাঁর জড়িত থাকার প্রশ্নই উঠতে পারে না। এটি সম্পূর্ণভাবে ষড়যন্ত্রমূলক এবং তৈরি করা।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, গত কয়েক দিনে সরকারি বাহিনী ও পুলিশ কর্তৃক হত্যা, আওয়ামী এজেন্টদের দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সারা দেশে আওয়ামী সন্ত্রাস সৃষ্টির জন্য অডিও নাটক সাজিয়ে বিএনপির নেত্রী নিপুণ রায়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মিথ্যা মামলায় হাজার হাজার অজ্ঞাতনামা আসামি করে সারা দেশে বিএনপি নেতা-কর্মীদের হয়রানির নতুন পরিকল্পনা করছে সরকার।

এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা এবং গ্রেপ্তারের কথা উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ঢাকায় আটটি মামলায় কয়েক হাজার আসামি, অথচ চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে কোনো মামলা হয়নি। বিএনপির শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশের হামলায় প্রায় ৫০ জন আহত হয়েছেন। সেখানে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেনসহ ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে শাহাদাতসহ ১৫ জনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। হবিগঞ্জে একটি মামলায় ৪০০ জন অজ্ঞাতনামা আসামি। এর মধ্যে বিএনপির নেতা সাবেক মেয়র জি কে গউছের ছেলে মঞ্জুরুল কিবরিয়াসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে সাতটি মামলায় ৩ হাজার ৯০০ আসামি। এর মধ্যে বিএনপির নেতা-কর্মী ১৬৬ জন। কিশোরগঞ্জের দুটি মামলা বিএনপির ৬৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, জনমতকে দমন করতে মিথ্যা মামলা করা বর্তমান সরকারের একটা বড় ষড়যন্ত্র। ইতিমধ্যে বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনসহ রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠানকেই চূড়ান্তভাবে দলীয়করণ করেছে। এখন প্রমাণিত হয়েছে যে এই সরকার তাদের বেআইনি ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে গণতন্ত্রের সব মূল্যবোধকে ধ্বংস করে একদলীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার হীন চক্রান্ত করছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য আবারও মিথ্যা প্রচারণা, মিথ্যা মামলা ও গ্রেপ্তারের পথ বেছে নিয়েছে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জা​নান। অন্যথায় দুঃশাসন, দুর্নীতি ও গণতন্ত্র হত্যার দায়ে এই অবৈধ সরকারকে জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে বলে হুঁশিয়ারি জানান।
বিএনপির মহাসচিব অভিযোগ করেন, কোভিড-১৯ মোকাবিলার কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এবারের করোনার আক্রমণ ইতিমধ্যে সেই সত্যকে জনগণের সামনে আতঙ্কের সঙ্গে তুলে ধরেছে। অনির্বাচিত সরকারের উদাসীনতা, ব্যর্থতা, দুর্নীতির কারণে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক হারে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।