নির্বাচন নিয়ে নানামুখী আলোচনা

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্তমান নির্বাচিত পরিষদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৫ আগস্ট। এ অবস্থায় পুরোনো নাকি নতুন তফসিলে নির্বাচন হবে, তা নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। নতুন তফসিল ঘোষিত হলে প্রার্থী বদলের সম্ভাবনাও দেখছেন বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীরা। করোনাকালে মেয়রের বিভিন্ন তৎপরতা অনুসারীদের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে। তবে আওয়ামী লীগের অভিজ্ঞ মহল মনে করছে, নির্বাচনের নতুন সূচি হলেও মেয়র পদে প্রার্থী বদলের সম্ভাবনা নেই।

স্থানীয় সরকার আইন (সিটি করপোরেশন) ২০০৯-এর ৩৮(১)র ক ধারায় বলা হয়েছে, করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। আইনের ৬ ধারায় রয়েছে, প্রথম সভা থেকে পাঁচ বছর গণ্য হবে। ২০১৪ সালের ৬ আগস্ট নির্বাচিত পরিষদের প্রথম সভা হয়েছিল। সে হিসেবে আগামী ৫ আগস্ট করপোরেশনের বর্তমান পরিষদের পাঁচ বছর পূর্ণ হচ্ছে।

এটা মাথায় রেখে গত ২৯ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। করোনা সংক্রমণের কারণে ২১ মার্চ তা স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরপর ইসি এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়, জুলাই মাসের মধ্যে আর কোনো স্থানীয় সরকার পরিষদের নির্বাচন করবে না। ফলে জুলাইয়ের পর এক সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান কার্যত অসম্ভব। এ ছাড়া করোনা পরিস্থিতি তত দিনে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসবে—এ রকম সম্ভাবনাও নেই। ফলে মেয়াদোত্তীর্ণ মেয়রের দায়িত্বের সময়কাল বৃদ্ধি করা হবে, নাকি প্রশাসক নিয়োগ করে করপোরেশন চালানো হবে, তা নিয়েও আলোচনা রয়েছে।

আবার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর স্থগিত তফসিলে নির্বাচন করা যাবে কি না, তা নিয়েও দ্বিধান্বিত নির্বাচন কর্মকর্তারা। স্থগিত তফসিলে প্রার্থী হওয়া কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ইতিমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন। তাই বেশির ভাগ কর্মকর্তা মনে করছেন, আগস্টের পর নির্বাচন হলে নতুন করে তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে।

জানতে চাইলে স্থগিত নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, আপাতত নির্বাচন স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। আগস্টের প্রথম সপ্তাহে বর্তমান পরিষদের মেয়াদ পূর্তি হবে। এ ক্ষেত্রে নতুন তফসিলে নির্বাচন হবে, নাকি স্থগিত তফসিলে হবে, তা ইসি সিদ্ধান্ত নেবে। সব সিদ্ধান্ত হবে করোনা পরিস্থিতি মাথায় রেখে।

স্থগিত হওয়া নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বর্তমান মেয়র নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনকে মনোনয়ন দেয়নি। একই কমিটির যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরীকে নৌকার দায়িত্ব দেওয়া হয়। অন্যদিকে বিএনপি থেকে প্রার্থী হন নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন।

নির্বাচন স্থগিত হওয়ার পর করোনা সংক্রমণের প্রথম দিকে প্রার্থীদের নানামুখী তৎপরতা চোখে পড়ে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী বিভিন্ন স্থানে ত্রাণ বিতরণে অংশ নেন। সর্বশেষ গত সপ্তাহে নগরের বাকলিয়ায় ৭০ শয্যার একটি করোনা আইসোলেশন সেন্টার করেন রেজাউল করিম চৌধুরী। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এই আইসোলেশন সেন্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন নগরের হালিশহরে সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় আইসোলেশন সেন্টার করেছেন। এ ছাড়া ত্রাণ, পরিচ্ছন্নতা এবং চিকিৎসা কার্যক্রমে মাঠে অবস্থান করছেন তিনি। মেয়রের এই তৎপরতা তাঁর অনুসারীদের মধ্যে নতুন করে আশা জাগিয়েছে।

আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের মেয়র অনুসারীদের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা রয়েছে। করোনায় মেয়রের কার্যক্রম নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন অনেকে। নতুন তফসিল হলে হাইকমান্ড পুনরায় আ জ ম নাছিরের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।

তবে নতুন করে প্রার্থী হওয়ার চেষ্টার বিষয়টি আ জ ম নাছির উদ্দিন উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনাকালে আমার দায়িত্ব আমি পালন করে যাচ্ছি। মাঠে আছি বলেই হয়তো অনেকে অনেক কথা বলবে। কিছু হওয়ার জন্য নয়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন, তা পালন করব।’

প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘দলীয় প্রার্থী এবং রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে মানুষের পাশে আছি। মেয়াদ পার হওয়ার পরও সিইসি চাইলে তিন মাসের মধ্যে পুরোনো তফসিলে নির্বাচন করতে পারে। দল আমার ওপর আস্থা রেখেছে। নতুন পুরোনো কোনো তফসিলে সমস্যা নেই। দলের সিদ্ধান্ত শিরোধার্য।’
তবে আওয়ামী লীগের অভিজ্ঞ মহল মনে করছে, নির্বাচনের নতুন সূচি হলেও মেয়র পদে প্রার্থী বদলের সম্ভাবনা নেই। কেবল কয়েকটি ওয়ার্ডে প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে। দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাংসদ মোশাররফ হোসেনের পরামর্শ নিয়ে থাকে মনোনয়ন বোর্ড। মেয়র প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের নেতাদের একটি পক্ষ আ জ ম নাছির উদ্দীনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল।

করোনার সময়ে মেয়র নাছির তৎপর ছিলেন। নতুন তফসিল ঘোষণা হলে মেয়র প্রার্থী বদলের সুযোগ আছে কি না এমন প্রশ্নে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আই ডোন্ট থিংক সো। প্রশ্নই আসে না। পুরোনো প্রার্থীই বহাল থাকবেন। যতই দৌড়ঝাঁপ করুক, কয়লা ধুইলে ময়লা যায় না।’