পরিবহন খাত নিয়ন্ত্রণ করছে কে, কাদেরের প্রশ্নে মসিউরের মুচকি হাসি

জি এম কাদের ও মসিউর রহমান
ফাইল ছবি : সংগ্রহ

গণপরিবহনের ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্যের সমালোচনা করে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের উপনেতা জি এম কাদের প্রশ্ন রেখেছেন, পরিবহন খাত আসলে কে নিয়ন্ত্রণ করছে? সরকার নাকি মালিক ও শ্রমিক সমিতিগুলো? সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাব্যক্তিরা কি এ খাতের নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করছেন? অনেকেই এ অভিযোগ করেন।

আজ রোববার একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে জি এম কাদের এসব প্রশ্ন তোলেন। তিনি যখন এই বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন তাঁর পাশেই ছিলেন পরিবহন মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান। এ সময় মসিউরকে মুচকি হাসতে দেখা যায়। মসিউর রহমান রংপুর–১ আসন থেকে নির্বাচিত জাতীয় পার্টির সাংসদ।

জি এম কাদের বলেন, ‘তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে পরিবহনমালিকেরা বাসের ভাড়া বৃদ্ধির দাবি করতেই পারেন, বিষয়টি স্বাভাবিক। কিন্তু সরকারি প্রজ্ঞাপন জারির সঙ্গে সঙ্গে সরকারকে কোনো প্রকার নোটিশ না করেই পরিবহন সেক্টর দেশব্যাপী তাদের সব বাস চলাচল বন্ধ করে দিল। দেশব্যাপী সাধারণ মানুষ নির্বিচারে অমানবিক নির্যাতন, অত্যাচারের শিকার হলো। তেলের মূল্যবৃদ্ধির জন্য তেলচালিত বাস বন্ধ হলো, সেটা মানলাম, কিন্তু গ্যাসচালিত বাসগুলো বন্ধ হলো কেন? বিষয়টি বোঝা গেল না। বিষয়টি কেন্দ্রীয় কোনো নেতৃত্ব থেকে নির্দেশ না পাওয়া গেলে এ ধরনের সমন্বিত উদ্যোগ সম্ভব হতো না। এটা অঘোষিত ধর্মঘট।’

জি এম কাদের আরও বলেন, টেকসই, নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল পরিবেশবান্ধব আধুনিক সড়ক পরিবহনব্যবস্থা গড়ে তোলা বিআরটিএর কাজ। কোনো নোটিশ না করে নিয়ম–বহির্ভূতভাবে ধর্মঘটের মাধ্যমে যাঁরা সম্পূর্ণভাবে সড়ক পরিবহনব্যবস্থাকে অচল করে রাখেন, জনগণকে জিম্মি করে দাবি আদায়ে বাধ্য করেন, সরকারের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার উচিত এ ব্যপারে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু কখনো এমনটি হতে দেখা যায় না।

জি এম কাদের বলেন, পরিবহন মালিক সমিতির দাবির মুখে নতুন একটি ভাড়ার তালিকা প্রকাশ করেছে বিআরটিএ। সেখানে গ্যাস ও ডিজেলচালিত পরিবহনের ভাড়া আলাদা আলাদা নির্ধারিত করা হয়েছে। গ্যাসচালিত মোটরযানের ভাড়া কম ও ডিজেলচালিত পরিবহনের ভাড়া বেশি। কিন্তু যখন নতুন ভাড়া নির্ধারণের পর গণপরিবহন চলাচল শুরু হলো, তখন দেখা গেল সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে ডিজেল এবং গ্যাসচালিত উভয় পরিবহন এবং একই হারে ভাড়া আদায় করছে যাত্রীদের কাছ থেকে। যাত্রীদের হয়রানি ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ব্যাপক অনিয়মের চিত্র বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত প্রচারিত হচ্ছে। এমনকি যাত্রীরা সরকার নির্ধারিত ভাড়া প্রদান করে তাঁদের গন্তব্যে যেতে চাইলে বাসের সুপারভাইজার ও চালকের সহকারী জোর করে তাঁদের মাঝপথে নামিয়ে দিচ্ছেন। হাতাহাতি ও লাঞ্ছনার মতো ঘটনাও ঘটছে অহরহ।

জ্বালানি তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করার দাবি জানিয়ে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, বিশ্ব বাজারে তেলের মূল্য এখন নিম্নগামী। গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া কার্যকর করারও দাবি জানান তিনি।

চাল, ভোজ্য তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরে জাতীয় সংসদে জি এম কাদের বলেন, বেকারত্ব, দারিদ্র্যের মধ্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মরার উপর খাড়ার ঘা। জীবন বাঁচাতে হিমশিম খেতে হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এ দুর্দশাকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে এবং প্রতিদিন বৃদ্ধি করেই চলছে।