পাবনা-৪ উপনির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াল বিএনপি

পাবনা-৪,(ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনের উপ-নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয় সকাল নয়টায়। তবে সকাল থেকেই ভোটার উপস্থিতি একদম নেই বললেই চলে। ছিল না ভোটারের সারি। প্রায় ফাঁকা কেন্দ্রে ভোট দিয়ে বের হচ্ছেন এক বৃদ্ধা। আ. জব্বার খান স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়, কালীকাপুর, ঈশ্বরদী, পাবনা
ছবি: হাসান মাহমুদ

ভোট গ্রহণ শুরুর তিন ঘণ্টার মধ্যে পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনের উপনির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে সরে দাঁড়ালেন বিএনপির প্রার্থী হাবিবুর রহমান। তিনি নতুন করে ভোট গ্রহণের দাবি করেছেন।

আজ শনিবার সকাল নয়টায় শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। তবে গতকাল শুক্রবার এ উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করে নানা অভিযোগ তোলা হয়।

আজ দুপুর ১২টার দিকে ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুর গ্রামে নিজের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির প্রার্থী হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এই ভোটকে ভোট মনে করি না। আমাদের নেতা-কর্মীরা ভোট দিতে যায়নি।’

তাহলে ভোট বর্জন করছেন কি না, এ প্রশ্নের জবাবে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ভোটই তো হয়নি। এখানে বর্জন করব কী?’ বিএনপির প্রার্থী নতুন করে নির্বাচনের অনুষ্ঠান আয়োজনের দাবি জানান।

আজ এই প্রতিবেদক সকাল থেকে ঈশ্বরদী উপজেলার সাতটি এবং আটঘরিয়ার দুটি কেন্দ্রে ঘোরেন। কেন্দ্রগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি ছিল কম। প্রতিবেদক কোনো কেন্দ্রে বিএনপির কোনো পোলিং এজেন্ট পাননি। ভোটকেন্দ্রের বাইরেও বিএনপির নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি দেখা যায়নি। এ বিষয়ে হাবিবুর রহমানকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এটা ভোট হয়নি, তাই যায়নি।

এর আগে গতকাল রাতে হাবিবুর রহমান সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, শান্তিপূর্ণভাবেই তাঁরা ভোটের কাজ করছিলেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে তাঁদের কথা ছিল, ভোটের আগে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হবে না। কাউকে গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হবে না। কিন্তু সেই কথা রক্ষা করা হয়নি। মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের হয়রানি ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে নেতা-কর্মীদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এতে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘ্নিত হয়েছে।

হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নির্বাচনে নিজেদের ভরাডুবি টের পেয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন শুরু করেছে। এটা কিছুতেই মেনে নেওয়ার মতো নয়। আমরা নির্বাচনী এলাকার ১২৯ কেন্দ্রে নির্বাচন কমিশনের নিয়ম মেনে এজেন্ট দিয়েছি। ভোট শুরুর আগে তাঁদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এজেন্টরা যদি ভোটকেন্দ্রে না যেতে পারে এবং রাতে যদি কোনো নেতা-কর্মীকে হয়রানি করা হয়, তাহলে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব।’

আজ হাবিবুর রহমান গতকালের কথাগুলোই পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গতকাল রাতে মামলা প্রত্যাহারের দাবি করেছিলাম। কিন্তু সেটা হয়নি। হুমকি বন্ধ হয়নি। তাই আমাদের কেউ ভোটকেন্দ্রে যায়নি।’

কাল রাতে অবশ্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। এ নির্বাচন পরিচালনায় ছিলেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল। তিনি গতকাল বলেছিলেন, ‘আমরা বিএনপির প্রার্থীকে নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ রাখার অঙ্গীকার করেছিলাম। সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রেখেছি। নির্বাচনী এলাকার কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে দেওয়া হয়নি। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অন্তত ১০ জন নেতা মাঠে নেমে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়েছেন। সাধারণ মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করেছেন। কিন্তু বিএনপি তাদের দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে ভোট চাইতে পারেনি। কোনো প্রচারে অংশ নেয়নি। দলের কোনো ঊর্ধ্বতন নেতা মাঠে এসে ভোট প্রার্থনা করেননি। এখন নির্বাচনে ভরাডুবি দেখতে পেরে, পরিবেশ ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে।’

আজ দুপুরের দিকে আওয়ামী লীগ আবার সংবাদ সম্মেলন করবে।

গত ২ এপ্রিল পাবনা-৪ আসনের সাংসদ ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফের মৃত্যুতে আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এরপর ভোট গ্রহণের দিন ধার্য হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির তিনজন প্রার্থী অংশ গ্রহণ করছেন। ভোটে ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়া উপজেলার ১২৯টি কেন্দ্রে ৩ লাখ ৮২ হাজার ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

এই করোনা পরিস্থিতির মধ্যে গত জুলাইয়ে যশোর-৬ আসনের উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে ৬৩ দশমিক ৫ শতাংশ। আর বগুড়া-১ আসনে ভোট পড়েছিল ৪৫ দশমিক ৫ শতাংশ। দুটি আসনে গড় ভোটের হার ৫৫ শতাংশ।