প্রথম মেয়াদে অসমাপ্ত কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি আরিফুল হকের

প্রথম মেয়াদে যেসব কাজ করতে পারেননি, সেসব কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। আজ সোমবার বেলা সাড়ে তিনটায় তিনি নির্বাচিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করে বলেছেন এ কথা। 

এর আগে বেলা তিনটার দিকে আরিফুল হক চৌধুরী ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নিয়ে হজরত শাহজালালের (রহ.) মাজার জিয়ারত করেন। নগর ভবনে গিয়ে তিনি সেখানে আয়োজন করা মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেন। এর আগে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করেন। এ সময় সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ বিএনপির নেতা-কর্মীরা মেয়র আরিফুল হকের সঙ্গে ছিলেন। মিলাদ শেষে মেয়র সিটি করপোরেশনের সচিব মো. বদরুল হকের কাছ থেকে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্বভার গ্রহণ করে একটি ফাইলে সই করেন।
মেয়রের চেয়ারে বসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আরিফুল হক চৌধুরী। প্রথম মেয়াদে অসম্পূর্ণ কাজগুলো দ্বিতীয় মেয়াদে সম্পূর্ণ করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করতে পরিকল্পনা গ্রহণ করব। সেই সঙ্গে অতিগুরুত্বপূর্ণ কাজ, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে এসেছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করব। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে ছড়া-খাল পুনঃখনন করা হবে, যা বর্ষা মৌসুমে সম্ভব নয়। রাস্তাঘাট মেরামত, ফুটপাত দখলমুক্ত ও যানজটমুক্ত পরিচ্ছন্ন নগর গড়ার কাজ করব।’
সিলেটকে আধ্যাত্মিক নগর উল্লেখ করে মেয়র বলেন, ‘সিলেট আধ্যাত্মিক নগরী বলে নানা নামে পরিচিতি পাচ্ছে। পর্যটন সম্ভাবনায় সিলেটকে পর্যটন নগরীও বলা হয়। এখানে ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক সম্প্রীতি রয়েছে। আমাদের শুধু কাজ করলেই হবে না, সম্প্রীতির জন্য গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। আমি আশা করি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অত্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের কাজগুলো সমাপ্ত করব।’
মহানগরের উন্নয়নে মহাপরিকল্পনার উদ্যোগ গ্রহণের ব্যাপারে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, ১১ অক্টোবর প্রখ্যাত প্রকৌশলী জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। সেই সময়ে তাঁর দেওয়া দিকনির্দেশনা ও পরিকল্পনা 

গ্রহণ করে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় মনোনিবেশ করবে সিটি করপোরেশন।
যানজটমুক্ত নগরের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মেয়র বলেন, ‘নিটল-নিলয় গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছি। আমরা তাদের বলেছি, শহরে যানজট কমাতে ও বাসিন্দাদের যাতায়াতের সুবিধার্থে টাউন বাস চালু করতে। আমরা তাদের বিনিয়োগ করতে আহ্বান জানিয়েছি। আর সকল ধরনের সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছি। ওই প্রতিষ্ঠান থেকে ২৬ আসনের একটি বাস সিটি করপোরেশনকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছে, যা দিয়ে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের সকাল ৯টায় বাসা থেকে কার্যালয়ে এবং বিকেল পাঁচটায় নগর ভবন থেকে বাসায় পৌঁছে দেবে।’

আরিফুল হক চৌধুরী
আরিফুল হক চৌধুরী

গত ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন আরিফুল হক চৌধুরী। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল ২০১৩ সালের ১৫ জুন প্রথম মেয়র পদে নির্বাচন করেন। বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে একটানা প্রায় ১৮ বছর মেয়রের দায়িত্ব পালন করা নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন। গত ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে আরিফুল হক আওয়ামী লীগের প্রার্থী কামরানকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন।
এর আগের মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার এক বছরের মাথায় সাবেক অর্থমন্ত্রীর ওপর গ্রেনেড হামলার মামলায় সম্পূরক অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি হয়ে ২৯ মাস কারাবন্দী ছিলেন। এ জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে দুই দফায় বরখাস্ত হয়েছিলেন। জামিনে মুক্ত হলে উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় আরিফুল হক আবার মেয়র পদে আসীন হয়েছিলেন। আরিফুল হকের দাবি, মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় তাঁকে মামলায় জড়ানো হয়েছে এবং জেল খাটতে হয়েছে। ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনে এ বিষয়টি ভোটারদের মধ্যে সহানুভূতির সৃষ্টি করেছিল।
আরিফুল হক চৌধুরী গত ৫ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ গ্রহণের পর ৮ সেপ্টেম্বর সপরিবারে লন্ডনে চলে যান। সেখানে তিনি প্রায় ২৩ দিন অবস্থানের পর গত ২৭ সেপ্টেম্বর সিলেটে ফেরেন।