প্রেসক্লাবকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার অপরাধের শামিল: তথ্যমন্ত্রী

তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ
ছবি: প্রথম আলো

তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, নিরপেক্ষ জাতীয় প্রতিষ্ঠান প্রেসক্লাবকে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বা সংঘর্ষের ঢাল হিসেবে অপব্যবহার করা কখনোই উচিত নয় এবং তা অপরাধের শামিল। তিনি বলেন, প্রেসক্লাব একটি নিরপেক্ষ জাতীয় প্রতিষ্ঠান, সাংবাদিকদের প্রতিষ্ঠান। এটি সব মত–পথের মানুষ এবং সব রাজনৈতিক দলের জন্য উন্মুক্ত। সুতরাং সেখান থেকে পুলিশের ওপর হামলা খুবই অনভিপ্রেত।

মন্ত্রী আজ সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সিনেমা হল নির্মাণ-সংস্কারে সহজে ব্যাংকঋণ চালু হওয়ায় তথ্যমন্ত্রীকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানানো হয়। অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।

সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস, সহসভাপতি মিঞা আলাউদ্দিন, সহসাধারণ সম্পাদক শরফুদ্দিন এলাহী সম্রাট, কোষাধ্যক্ষ আজগর হোসেন ও নির্বাহী সদস্য ফারুক হোসেন মানিক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

প্রেসক্লাবে তো কোনো পাথর থাকে না
জাতীয় প্রেসক্লাবে গতকাল রোববার পুলিশ ও ছাত্রদলের মুখোমুখির ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘প্রেসক্লাবকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ছাত্রদল হাজার হাজার ইটের টুকরা, পাথরের টুকরা পুলিশের ওপর নিক্ষেপ করে হামলা চালিয়েছে। প্রেসক্লাবে তো কোনো পাথর থাকে না। এগুলো আগে থেকেই সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে।...এ ধরনের ঘটনা অবশ্যই অনভিপ্রেত, দুঃখজনক, অনুচিত এবং কেউ যাতে এভাবে প্রেসক্লাবকে অপব্যবহার করতে না পারে, সে জন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’

এটিএন বাংলার একজন সাংবাদিক ছাত্রদলের ছুড়ে মারা ইটের আঘাতে আহত হলেন কেন, সেই প্রশ্ন আগে আসা উচিত ছিল—এমন মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ছাত্রদল গতকাল দেশে একটি ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করেছে। একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশে একটি মহল পানি ঘোলা করার চেষ্টা করছে। এ অপচেষ্টা অতীতেও হয়েছে, কোনো লাভ হয়নি। এবারও কোনো লাভ হবে না।

বিভিন্ন দেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে এ সময় তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের এ আইনের ৬ষ্ঠ অধ্যায়ে যে শাস্তির বিধান রয়েছে, তা ভারতের ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যাক্টের ১১তম অধ্যায়ে এবং পাকিস্তানের প্রোটেকশন অব ইলেকট্রনিক ক্রাইমস অ্যাক্টের ১৮ ধারায় আছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে কম্পিউটার ফ্রড অ্যান্ড অ্যাবিউজ অ্যাক্ট, যুক্তরাজ্যে কম্পিউটার মিসইউজ অ্যাক্ট, নেপালে ইলেকট্রনিক ট্রানজেকশন অ্যাক্ট, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফেডারেল ডিক্রি ল অব ২০১২ অন কমব্যাটিং সাইবার ক্রাইমস, জার্মানিতে নেটওয়ার্ক এনফোর্সমেন্ট অ্যাক্ট ২০১৭, অস্ট্রেলিয়ায় সাইবার ক্রাইম লেজিসলেশন অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট ২০১২, সিঙ্গাপুরে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট ২০১৮ এ ধরনের আইন আছে। এ শুধু কয়েকটা দেশের উদাহরণমাত্র। উন্নত দেশগুলোতেও এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে গ্রেপ্তার এবং শাস্তির বিধান করা হয়। তবে অবশ্যই আমিও আপনাদের মতো এ আইনের যাতে কোনো অপপ্রয়োগ না হয়, সে জন্য সতর্ক থাকার পক্ষে।’

সিনেমা হল সংস্কারে ৫০০ কোটি টাকার তহবিল
মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক আপাতত ৫০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে, যা প্রয়োজনে ১ হাজার কোটি টাকা বা তারও বেশি করা যাবে এবং সাধারণভাবে ৮ বছরে পরিশোধযোগ্য এ ঋণ গ্রহণের ১ বছর পর থেকে শোধ করা শুরু হবে। এ তহবিল আসলে প্রণোদনা প্যাকেজ। তফসিলি ব্যাংকের মাধ্যমে এটি বিতরণ করা হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ১ দশমিক ৫ শতাংশ সুদে অর্থটা তফসিলভুক্ত ব্যাংকগুলোকে দেবে। ব্যাংকগুলো জেলা-উপজেলায় সেটি ৪ দশমিক ৫ শতাংশ আর ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে ৫ শতাংশ সুদে ভোক্তাদের কাছে এ ঋণ বিতরণ করা হবে। ঋণ তাঁরাই পাবেন, যাঁরা সিনেমা হল সংস্কার করতে চান, বন্ধ হয়ে গেছে এমন সিনেমা হল পুনরায় চালু করতে চান অথবা নতুন সিনেমা হল বানাতে চান এবং একই সঙ্গে কোনো মার্কেটের ভেতরে যদি কোনো সিনেপ্লেক্স, সিনেমা হল কেউ করতে চান সেই ক্ষেত্রেও পাবেন বলে জানান তথ্যমন্ত্রী। অচিরেই দেশের চলচ্চিত্রজগতের বিশাল ইতিবাচক অগ্রযাত্রা সবার দৃষ্টিগোচর হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।