ফারুক পদ ছাড়ার পর মেয়ে সভাপতি

প্রায় ২৬ বছর পর নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলা বিএনপির সভাপতির পদ ছেড়েছেন সাবেক বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক। গতকাল শুক্রবার এই পদে ফারুকের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন তাঁর মেয়ে তামান্না ফারুক।

উপজেলা বিএনপির বর্ধিত সভায় তামান্নাকে সেনবাগ উপজেলা কমিটির সভাপতি করা হলেও বিষয়টি নিয়ে দলের অনেকে ক্ষুব্ধ। তাঁরা মনে করছেন এর মধ্য দিয়ে উপজেলা বিএনপিতে পরিবারতন্ত্র কায়েম হলো। এবার বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতেও দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের স্ত্রী, ছেলে-মেয়েদের অনেকে জায়গা পেয়েছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এক নেতা একটির বেশি পদে থাকতে পারবেন না। ফারুক বিএনপির নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হয়েছেন। এর আাগে তিনি ছিলেন প্রচার সম্পাদক। একই সঙ্গে তিনি ১৯৯১ সাল থেকে সেনবাগ উপজেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্বেও ছিলেন। গঠনতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতার কারণে এবার তাঁকে এই পদটি এবার ছাড়তে হয়েছে।

সূত্র জানায়, গতকাল শুক্রবার বিকেলে সেনবাগ উপজেলার ইয়ারপুর গ্রামে ফারুকের নিজ বাড়িতে উপজেলা বিএনপির বর্ধিত ফারুক উপজেলা বিএনপির সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন এবং নতুন সভাপতি নির্বাচনের বিষয়ে মতামত চান। এই ঘোষণার পর উপজেলা বিএনপির অন্তত ২০ জন সভাপতি পদে ফারুকের মেয়ে তামান্না ফারুকের নাম প্রস্তাব করেন। এর আগে গত অক্টোবরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে তামান্নাকে উপজেলা বিএনপির সদস্য করা হয়েছিল।

উপজেলা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কেউ সভাপতি হবেন বলে তাঁরা মনে করেছিলেন। কিন্তু ফারুকের অনুসারীরা একে একে তামান্নার নাম প্রস্তাব করায় অন্যদের কিছু বলার ছিল না।

এমন পদক্ষেপের কারণে উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। অনেকেই বিষয়টিকে মেনে নিতে পারছেন না, আবার প্রকাশ্যে কিছু বলতেও পারছে না। তবে দলের একটি অংশ বিষয়টি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সভাপতি পদত্যাগ করলে তাঁরই সভাপতি হওয়ার কথা। কিন্তু বৈঠকে উপস্থিত দলের নেতাদের বেশির ভাগই ফারুকের মেয়ের নাম প্রস্তাব করেছেন। তাই তিনিও দ্বিমত করেননি। করলে কেবল ঝামেলাই বাঁধত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জয়নুল আবদিন ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, কোথায় কে কী বলেছে সেটা নিয়ে তিনি সাংবাদিকের সঙ্গে কোনো কথা বলবেন না।

উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোক্তার হোসেন পাটোয়ারী প্রথম আলোকে বলেন, দলের গঠনতন্ত্র মেনেই নতুন সভাপতি নির্বাচন করা হয়েছে।

বর্ধিত সভার প্রধান অতিথি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ বলেন, উপস্থিত নেতাদের প্রস্তাব ও সমর্থনের ভিত্তিতে তামান্না ফারুককে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে। এ নিয়ে তাৎক্ষণিক কাউকে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাতে দেখা যায়নি।

এবার বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতার পরিবারের সদস্যরা কমিটিতে পদ পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছেলে খন্দকার মারুফ হোসেন, তরিকুল ইসলামের ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মেয়ে অপর্ণা রায়, মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস ও আব্বাসের ভাই মির্জা খোকন, রফিকুল ইসলাম মিয়ার স্ত্রী শাহিদা রফিক, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ভাই মির্জা ফয়সাল আমিন, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল, নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর প্রমুখ।