ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদন: বিশ্বে গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা আরও কমেছে

টানা ১৪ বছর ধরে বিশ্বে গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা কমছে। বিশ্বজুড়েই মার খাচ্ছে গণতন্ত্র ও বহুত্ববাদ। এই পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশও বাদ পড়েনি। এখানেও কয়েক বছর ধরে সংকুচিত হচ্ছে গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ফ্রিডম হাউসের বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। ‘গণতন্ত্রের সংগ্রাম নেতৃত্বহীন’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে গত বুধবার।

১০০ পয়েন্টের মধ্যে এবার ২ পয়েন্ট কমে বাংলাদেশের স্কোর ৩৯। অর্থাৎ, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা এখন ‘আংশিক মুক্ত’ দেশের কাতারে। আগের বছর ২০১৯ সালে স্কোর ছিল ৪১। তার আগে ২০১৮ সালে ৪৫ এবং ২০১৭ সালে ছিল ৪৭। ওই তিন বছরও বাংলাদেশ ‘আংশিক মুক্ত’ দেশের কাতারে ছিল।

১৯৫টি দেশ ও ১৫টি অঞ্চলের গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। এবারের প্রতিবেদনে রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার-দুই বিষয় বিবেচনায় নিয়ে গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার স্কোর নির্ণয় করা হয়েছে। দেশ ও অঞ্চলগুলোকে তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে-মুক্ত, আংশিক মুক্ত, মুক্ত নয়। এবারের প্রতিবেদনে ইন্টারনেট স্বাধীনতাও যোগ করা হয়েছে।

ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদনে বলা হয়, একনায়কেরা গণতান্ত্রিক ভিন্নমত দমন করছেন এবং নিজেদের ক্ষতিকর প্রভাব বিশ্বের কোনায় কোনায় ছড়িয়ে দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মতো বড় গণতন্ত্রের দেশগুলোর নির্বাচিত নেতারা প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষা ভেঙে ফেলতে চাইছেন। লোকরঞ্জনবাদী অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তাঁরা সমালোচক ও সংখ্যালঘুদের অধিকার উপেক্ষা করছেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে ৬৪টি দেশে রাজনৈতিক অধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতা খর্ব হয়েছে। তবে ৩৭টি দেশে এই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে।

মূল্যায়নের মোট স্কোর ১০০। এর মধ্যে রাজনৈতিক অধিকারে ৪০ এবং নাগরিক স্বাধীনতায় ৬০। বাংলাদেশের স্কোর ৪০-এর মধ্যে ১৫ এবং ৬০-এর মধ্যে ২৪। অর্থাৎ, বাংলাদেশের মোট স্কোর ৩৯।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অনলাইনে মতপ্রকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিতে বাংলাদেশের সরকার বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। রাজনৈতিক বিরোধী, তাদের মিত্র, সংবাদমাধ্যম, নাগরিক সমাজের সমালোচকসহ বিরোধীদের দমন-পীড়নের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতা সুসংহত করেছে।

ভারতেও গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার অবনতি ঘটেছে। দেশটির এবারের স্কোর ৭১। আগের বছর ছিল ৭৫। প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামে গত আগস্টে এনআরসি করা হয়। এই তালিকা থেকে বাদ পড়ে প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দা, যাদের বেশির ভাগই স্থানীয় বাঙালি। গত নভেম্বরে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের বিতর্কিত জায়গায় মন্দির নির্মাণের নির্দেশ দেন ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। ডিসেম্বরে সিএএ পাস হয়, যার প্রতিবাদে এখনো সেখানে বিক্ষোভ চলছে।