বর্তমান মেয়র, নাকি প্রশাসক

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্তমান পরিষদের মেয়াদ আগামী ৫ আগস্ট শেষ হচ্ছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে ইঙ্গিত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। মেয়াদ শেষ হলে বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন দায়িত্ব পালন করে যাবেন, নাকি সরকার নতুন প্রশাসক নিয়োগ দেবে—এ নিয়ে বন্দরনগরীতে নানা জল্পনা চলছে। যদিও নির্বাচন কমিশন এই বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন গত ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেশে করোনা সংক্রমণের বিস্তার ঘটায় অন্যান্য নির্বাচনের মতো এই নির্বাচনও ২১ মার্চ অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। কবে নাগাদ হবে, তা এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। স্থগিত হওয়া নির্বাচনে সিটি মেয়র প্রার্থী ছিলেন ছয়জন।

সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের নেতৃত্বাধীন পঞ্চম পরিষদের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৫ সালের ৬ আগস্ট। ওই বছরের ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ফলে মেয়র এবং নির্বাচিত কাউন্সিলরদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৫ আগস্ট।

স্থানীয় সরকার আইন, ২০০৯ (সিটি করপোরেশন)-এর ৬ ধারা অনুযায়ী, সিটি করপোরেশনের মেয়াদ প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার তারিখ থেকে পাঁচ বছর হবে। তবে শর্ত থাকে, সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও তা পুনর্গঠিত না হওয়া পর্যন্ত মেয়রের নেতৃত্বে পরিষদ দায়িত্ব পালন করে যেতে পারবে। এতে নির্বাচন করার সাংবিধানিক কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে সরকার চাইলে প্রশাসকও নিয়োগ দিতে পারে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা।

স্থগিত হওয়া নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হন বর্তমান মেয়র ও চট্টগ্রাম নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। তাঁর বদলে মনোনয়ন পান একই কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী। বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন নগর শাখার সভাপতি শাহাদাত হোসেন।

চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতি নাজুক বলে মন্তব্য করেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এই অবস্থায় নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হলে করোনা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। তাই মানুষের জীবন রক্ষার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের তা চিন্তাভাবনা করা উচিত।

নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন না হলে বর্তমান পরিষদেরই দায়িত্ব চলমান থাকার কথা উল্লেখ করে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, নির্বাচিত পরিষদকেই দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া উচিত। সচরাচর তা-ই হয়, তবে সরকার চাইলে প্রশাসকও নিয়োগ দিতে পারে। সবকিছু নির্ভর করছে সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ১৯৯০ সালের ৩০ জুলাই চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন থেকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করা হয়। তৎকালীন প্রশাসক মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীকে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯৯৪ সালের জানুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম সিটির প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম নির্বাচিত মেয়র ছিলেন এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। টানা তিনবার তিনি মেয়র হিসেবে জয়ী হন। মহিউদ্দিন চৌধুরীর পর মোহাম্মদ মন্‌জুর আলম এবং সর্বশেষ আ জ ম নাছির উদ্দীন মেয়র নির্বাচিত হন।

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন দ্রুত অনুষ্ঠিত হবে কি না, তা ঠিক করবে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের জন্য নতুন তফসিল প্রয়োজন হবে না।

যোগাযোগ করা হলে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনা এখন বৈশ্বিক সমস্যা। এই সমস্যার মধ্যে বাংলাদেশও আছে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। ফলে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন নিয়ে আমরা কোনো চিন্তাভাবনা করিনি। তবে কমিশন বসে এ বিষয়ে যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নেবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে রফিকুল ইসলাম বলেন, জাতীয় সংসদের মতো স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচন নির্ধারিত সময়ে করারও কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। চট্টগ্রাম সিটিতে মেয়াদ শেষে বর্তমান পরিষদ দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবে কি না, তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।

নির্বাচনের দাবি চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের একটি অংশ দ্রুত সিটি নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে। তাঁদের মতে, দুটি সংসদীয় আসনে উপনির্বাচন হতে পারলে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনও স্বাস্থ্যবিধি মেনে করা সম্ভব।

চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, দুটি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন চাইলে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনও করা সম্ভব। দলের একটি বড় অংশ এবং চট্টগ্রামবাসী দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে আছে। তবে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী সবকিছু নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবির নির্বাচন আয়োজনের বিরোধিতা করছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে নির্বাচন করার মতো পরিবেশ নেই। এতে বিপদ বাড়বে।