বাংলাদেশ বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ফাইল ছবি

শত বাধা অতিক্রম করে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আরও সামনে এগিয়ে যেতে হবে এবং বাংলাদেশ সারা বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে, এমন মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, দেশকে আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন দেশে উন্নীত করতে চান তিনি।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বুধবার জাতীয় সংসদে এক বিশেষ আলোচনায় সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। এর আগে বিশেষ আলোচনার জন্য সংসদের কার্যপ্রণালি বিধির ১৪৭ ধারায় সংসদে সাধারণ প্রস্তাব তোলেন তিনি। এরপর প্রস্তাবের পক্ষে বক্তব্য দেন। পরে প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন সাংসদেরা। বৃহস্পতিবারও এ বিশেষ আলোচনা চলবে। পরে প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের শোষিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আজীবন কাজ করেছেন। এ জন্য তিনি নিজের সব আশা-আকাঙ্ক্ষা বিসর্জন দিয়েছিলেন। দিনের পর দিন কারাগারে ছিলেন।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, তাঁরা পিতার স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। কিন্তু এ নিয়ে তাঁদের আফসোস ছিল না। পিতার কাছ থেকে তাঁরা দেশপ্রেম শিখেছেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতীক্ষায় ছিলাম কখন আমাদের পিতা ঘরে আসবেন। কিন্তু আমরা বাবাকে পাই পরে, জনগণ পায় আগে। তাঁর কাছে জনগণই ছিল সবচেয়ে বড়।’

সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর আকাঙ্ক্ষা ছিল, দেশটাকে গড়ে তুলবেন। বাংলাদেশকে এমনভাবে সাজাবেন, যেন প্রত্যেক মানুষ নাগরিক সুবিধা পায়। জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। দেশের উন্নয়নে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ শুরু করেছিলেন। একটি প্রদেশ থেকে দেশে উন্নীত করার যত আইন, নিয়ম-নীতিমালা, সবই করে গেছেন।

টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন দেশ চালাচ্ছি। প্রতিটি ক্ষেত্রে যখন কোনো কাজ করতে যাই, দেখতে পাই প্রতিটি কাজের ভিত্তি জাতির পিতা তৈরি করে দিয়ে গেছেন। আমার কাছে বিস্ময় মনে হয়, এত অল্প সময়ে কীভাবে এত কাজ করে যেতে পারেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, চক্রান্ত মোকাবিলা করেই জাতির পিতা দেশকে গড়ে তুলছিলেন। দেশ যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, কারও কাছে যেন হাত পাততে না হয়, সে জন্য তিনি দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি দেন। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূর করতে ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করেন। স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করেন। আর পাঁচটি বছর তিনি হাতে সময় পেলে বাংলাদেশ উঠে দাঁড়াত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে যে সম্মানজনক অবস্থানে আমরা আসতে পেরেছি, জাতির পিতা বেঁচে থাকলে সেই জায়গায় আমরা স্বাধীনতার ১০ বছরে পৌঁছে যেতে পারতাম।’
দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণ আমাদের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে বারবার ভোট দিয়ে সরকার গঠনের সুযোগ দিয়েছে, যে কারণে আজ আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে। ১২ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, অনেক উন্নত দেশও বিনা মূল্যে জনগণের করোনা পরীক্ষা করে না বা তাদের টিকা দেয় না। কিন্তু তাঁর সরকার বাংলাদেশে তা করছে। ধনী-দরিদ্র সবাই টিকা পাচ্ছে। টিকার কোনো অভাব হবে না।

সরকার ক্ষমতাকে ভোগের বস্তু মনে করে না মন্তব্য করে সরকারপ্রধান বলেন, তাঁরা ক্ষমতাকে জনগণের সেবা, জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করার সুযোগ মনে করেন। সরকার দারিদ্র্যের হার ২০-এ নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। করোনা মহামারি না থাকলে দারিদ্র্য ১৭ শতাংশে নামিয়ে আনা যেত। তারপরও উন্নয়নের চাকা থেমে থাকেনি। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ। অর্থনৈতিকভাবে ৪১টি শক্তিশালী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি।

এর আগে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সংসদে বিশেষ আলোচনার জন্য আনা প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশ আজ এক ‘উন্নয়ন-বিস্ময়’। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৪৮ থেকে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৫ মার্চ গণহত্যা, ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা, ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন এবং এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১-এ পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।

দেশের অগ্রযাত্রার কথা তুলে ধরে সংসদ নেতা বলেন, ‘সংসদীয় গণতন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণের মধ্য দিয়ে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার সফল বাস্তবায়ন ও প্রত্যাশা পূরণে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপনের এই ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণে তারুণ্যোদীপ্ত বাংলাদেশ সব চ্যালেঞ্জ উতরে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, শোষণ-বৈষম্যহীন, উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা রূপে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হোক, এই হোক আমাদের প্রত্যয়।’