বাংলাদেশে স্বাধীনভাবেই কাজ করছে গণমাধ্যম: তথ্যমন্ত্রী

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ডিজিটাল মিডিয়া ল্যাব উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। ঢাকা, ১৭ জুন
ছবি: সংগৃহীত

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশে স্বাধীনভাবেই কাজ করছে গণমাধ্যম। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যম যে পরিমাণ স্বাধীনতা ভোগ করে, সেটি অনেক দেশেই করে না। এমনকি বাংলাদেশে যেমন স্বাধীনভাবে গণমাধ্যমের মাধ্যমে মানুষ মতপ্রকাশ করতে পারে, সংবাদ পরিবেশিত হয়, অনেক উন্নত দেশেও সে ক্ষেত্রে অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে। আমরা অনেক দেশের তুলনায় অনেক বেশি এগিয়ে আছি।’

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ডিজিটাল মিডিয়া ল্যাব উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন। উপাচার্য আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম এ কাশেম।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা চাই এই গণমাধ্যমের অবাধ বিকাশ। কারণ, গণমাধ্যমের অবাধ বিকাশ ছাড়া রাষ্ট্রের বিকাশ সম্ভবপর নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আমাদের দেশে গণমাধ্যমের অবাধ বিকাশ ঘটেছে। গত ১২ বছরের খতিয়ান যদি আমি দিই, তাহলে দেখা যায়, আমাদের দেশে বেসরকারি টেলিভিশনের যাত্রা শুরু হয়েছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই। ১২ বছর আগে টেলিভিশন ছিল ১০টি। এখন বেসরকারি টেলিভিশন ৩৫টি চালু এবং আরও ১০টি সম্প্রচারের অপেক্ষায়। আমাদের বেসরকারি রেডিও চ্যানেল ২২টি এবং হাজার হাজার অনলাইন পত্রিকা চালু রয়েছে। অনেকগুলো আইপি রেডিও এবং টেলিভিশন চালু রয়েছে। একই সঙ্গে পত্রিকার সংখ্যা সাড়ে ১২ বছর আগে ছিল ৪৫০টি। এখন সেটি সাড়ে ১ হাজার ২০০, অর্থাৎ প্রায় তিন গুণ বেড়েছে।’

এই ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেখেছি বহু অনলাইন বা আইপি টিভি খুলে অনেকে সেটি ভিন্ন উদ্দেশ্যে পরিচালনা করছে এবং সেখানে নানা ধরনের বিষয় প্রচার করা হয়, যেগুলো আমাদের সমাজ, সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না, যেগুলো তরুণসমাজকে বিপথে পরিচালিত করে। আমরা এই সমস্ত আইপি টিভির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান আইপি টিভি চালু করবে, আমরা সেটিকে সাধুবাদ জানাই, অভিনন্দন জানাই। এটি শিক্ষার প্রসার ও ছাত্রছাত্রীদের মেধা বিকাশের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে এবং একই সঙ্গে প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীসহ সবাইকে সংযুক্ত রাখার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব টিভি ও রেডিও ছাত্রদের মেধা বিকাশের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যদি আমার নিজের জীবনের পেছনে ফিরে তাকাই, তাহলে দেখতে পাই, আমার স্কুলের শিক্ষা, কলেজের শিক্ষা আমাকে শুধু ডিগ্রি দিয়েছে, তা নয়, ডিগ্রির পাশাপাশি আমার অন্য সুপ্ত বিষয়গুলো যদি বিকশিত করার সুযোগ করে না দিত, তাহলে আমি আজকের এই জায়গায় কখনো আসতে পারতাম না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুধু বিশ্বমানের শিক্ষাই দেবে না, এমন উন্নত মানুষ তৈরি করবে, যারা পৃথিবীকে পথ দেখাবে।’

হাছান মাহমুদ বলেন, ছাত্রদের শুধু জ্ঞান দিলেই হয় না, পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে একজন ছাত্রকে গড়ে তুলতে হলে তার মেধার সঙ্গে মূল্যবোধ, দেশাত্মবোধ, মমত্ববোধের সমন্বয় ঘটানো প্রয়োজন। কারণ, আজকের পৃথিবীতে মানুষ শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবে, অপরের জন্য ভাবে না। মানুষ যখন কর্মজীবনে প্রবেশ করে, পশ্চিমা দেশের মতো তারা নিজের মা-বাবার জন্যও ভাবে না। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পারিবারিক মূল্যবোধ, পারিবারিক বন্ধন, সামাজিক মূল্যবোধ এবং সামাজিক বন্ধন পশ্চিমা দেশের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত এবং অনেক গভীরে প্রোথিত। আধুনিকতার ছোঁয়া অবশ্যই দরকার, আধুনিক হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু আধুনিক হতে গিয়ে আমরা যেন পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণ না করি। আমাদের পারিবারিক-সামাজিক মূল্যবোধগুলো যেন হারিয়ে না যায়, আমরা যেন ক্রমাগত আত্মকেন্দ্রিক হয়ে না যাই।’

অনুষ্ঠানে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইট থেকে পরিচালিত এনএসইউ রেডিও এবং এনএসইউ টিভির অনুষ্ঠান দেখানো হয় এবং তথ্যমন্ত্রী একটি সংক্ষিপ্ত ‘টক শো’তে অংশ নেন।