বামজোটের ঢাবি উপাচার্য কার্যালয় ঘেরাও

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র করাসহ ছয় দফা দাবিতে উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করে প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্রঐক্য। ঢাকা, ১৮ ফেব্রুয়ারি। ছবি: সাজিদ হোসেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র করাসহ ছয় দফা দাবিতে উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করে প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্রঐক্য। ঢাকা, ১৮ ফেব্রুয়ারি। ছবি: সাজিদ হোসেন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরুর পর থেকেই নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র হলের পরিবর্তে একাডেমিক ভবনে করার দাবি জানিয়ে আসছে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো। হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র করাসহ ছয় দফা দাবিতে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করে প্রতিবাদ জানালো সংগঠনগুলোর দুই মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্রঐক্য।

দাবি মানতে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চার দিনের আলটিমেটাম দিয়েছিল বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর এই দুই মোর্চা। এই সময়ের মধ্যে দাবি না মানলে উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করার ঘোষণা দেয় তারা। গতকাল রোববার সেই সময়সীমা শেষ হলেও প্রশাসন দাবি মানেনি। এর প্রতিবাদে আজ সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিন থেকে মিছিল বের করে প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্রঐক্য।

মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার ও টিএসসি হয়ে উপাচার্য কার্যালয়ে যায়। একই সময়ে লাইব্রেরি কমপ্লেক্সের দাবিতে গ্রন্থাগারের সামনে মানববন্ধন করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। বেলা পৌনে একটার দিকে উপাচার্যের কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ শুরু করেন বামপন্থী দুই ছাত্রজোটের নেতা-কর্মীরা। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা এই অবস্থান ও সমাবেশ চলে।

সমাবেশে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সভাপতি ইকবাল কবীর বলেন, ‘ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন বাদে বেশির ভাগ সংগঠন হলের বাইরে ভোটকেন্দ্রের বিষয়ে একমত। তাদের দখলদারি ও সন্ত্রাসের পরিস্থিতিতে হলের ভেতরে ভোটকেন্দ্র করার বাস্তব পরিস্থিতি নেই। ছাত্রলীগ নেতাদের দাবি বাস্তবায়ন করতেই বসে ছিলেন উপাচার্য। আমাদের আলটিমেটামে তাঁরা কর্ণপাত করেননি। দাবি আদায়ে ঘেরাও দিয়ে কর্মসূচি শুরু হলো, এরপর আরও বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। ইতিহাস বলে, শিক্ষার্থীরা যেমন অনেক শিকক্ষককে বুকে লালন করেছে, অনেককে প্রত্যাখ্যানও করেছে।’

ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি জি এম জিলানী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অবরুদ্ধ গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ায় আমরা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম। কিন্তু পরে দেখতে পেলাম, আমাদের শিক্ষকেরা একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন। বর্তমান বাস্তবতায় ভিসি যদি বলেন গণতান্ত্রিক পরিবেশ আছে, সেটা গণতন্ত্রের নতুন তত্ত্ব গেলানোর চেষ্টা। আমরা যুক্তিসঙ্গত দাবি উত্থাপন করছি, কিন্তু তা মানা হচ্ছে না। প্রশাসনকে বলছি, দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দেবেন না। তাহলে এই আন্দোলন প্রশাসনিক স্বৈরতন্ত্র উচ্ছেদের আন্দোলনে রূপ নেবে।’

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের জাতীয় নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মতো অন্য সব নির্বাচনকেও সুষ্ঠু করতে চান। সিইসির সেই কথারই প্রতিধ্বনি করছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ক্ষমতাসীনরা ক্যাম্পাসে রামরাজত্ব কায়েম করেছে। ছাত্রদল মধুর ক্যানটিনে এলেই সহাবস্থান নিশ্চিত হয়ে যায় না। গণরুম-গেস্টরুম সংস্কৃতি এখনো চলছে। আজকে ঘেরাও করেছি, প্রশাসনের মনে রাখা উচিত ক্যাম্পাস অচল করে দেওয়ার মতো কর্মসূচিও ছাত্ররা দিতে পারে।’

সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্রঐক্যের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের সভাপতি আতিফ অনীকের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম মোস্তফা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাসুদ রানা প্রমুখ বক্তব্য দেন। সমাবেশ শেষে দুই জোটের নেতারা ফিরে যান। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আজ তাঁদের কোনো আলোচনা হয়নি।