বিএনপি ও তারেককে নিয়ে কথা বলায় জাফরুল্লাহকে বাধা

‘শিক্ষায় প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি: করোনাকালীন শিক্ষা বাজেট ২০২১-২২’ শীর্ষক সভায় কথা বলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী
ছবি: প্রথম আলো

বিএনপি ও তারেক রহমান নিয়ে কথা বলায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে বাধা দেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা। এ সময় ওই নেতা পরবর্তী সময়ে কোনো ঘটনা ঘটলে তাঁর দায় তাঁরা নেবেন না বলে জাফরুল্লাহকে প্রচ্ছন্ন হুমকি দেন।

রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আজ শনিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় এই ঘটনা ঘটে। ‘শিক্ষায় প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি: করোনাকালীন শিক্ষা বাজেট ২০২১-২২’ শীর্ষক এই সভার আয়োজন করে এডুকেশন রিফর্ম ইনিশিয়েটিভ (ইআরআই)।

ওহি লন্ডন থেকে আসে

ওই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বক্তব্যের একপর্যায়ে বিএনপির নেতৃত্বের সমালোচনা করেন। জাফরুল্লাহ বলেন, ‘বিএনপির ক্ষমতায় আসারই ইচ্ছা নেই। ক্ষমতায় আসতে হলে ইচ্ছা, আগ্রহ থাকতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে পরিকল্পনা করতে হবে যে কী কী জায়গায় পরিবর্তন আনব। সেগুলো নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ‘আজকে বিএনপি পরিচালিত হচ্ছে ওহি নিয়ে। আর সে ওহি লন্ডন থেকে আসে। আমরা লক্ষ করছি, সম্প্রতি নির্বাচনে দাঁড়ানোর লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই মনে করি, স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটাতে হলে সবাইকে একাত্ম হতে হবে। সে পরিবর্তন আনতে হবে বিএনপির নিজ ঘর থেকে।’

আরও পড়ুন

তারেককে লেখাপড়া করতে বলেছি

বক্তব্যের একপর্যায়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমি বারবার বলেছি, তারেক দুই বছর চুপচাপ বসে থাকো। পারো তো বিলেতে লেখাপড়ার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাও। সেখানে বহুভাবে লেখাপড়া করা যায়।’

আপনি বিএনপির কে

এ সময় সভায় উপস্থিত থাকা ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ওমর ফারুক কাওছার জাফরুল্লাহর বক্তব্যের মধ্যে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি বিএনপির কে? আপনি বিএনপি নিয়ে কেন উল্টোপাল্টা কথা বলেন?’ জাফরুল্লাহ জবাবে বলেন, ‘নাহ, কিছু নই। এটা তো গণতন্ত্রে আমার বলার অধিকার আছে।’ ওমর ফারুক বলেন, ‘আপনি বিএনপির কেউ নন। অথচ আমাদের নেতা নিয়ে কথা বলেন।’

এ কথা শুনে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আমার কথা শেষ হোক, বোঝেন, এরপর কথা বলেন। আপনাদের ভালোর জন্যই বলছি। আপনাদের ভালোই বোঝেন না আপনারা।’ তখন ছাত্রদলের ওই নেতা বলেন, ‘না না, আমরা অবশ্যই বুঝি, আমরা আমাদেরটা বুঝি, আপনি আপনারটা বোঝেন। আপনি আমাদের নেতাকে নিয়ে কখনো কথা বলবেন না। আপনি আপনাকে নিয়ে কথা বলেন। আপনি বলেন আর পরবর্তী সময়ে কিছু হলে আমরা দায়ী নই।’ তখন জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আপনারা কেন দায়ী হবেন।’ পরে ওই যুবক ওই সভা থেকে দ্রুত চলে যান। তাঁর সঙ্গে আরও চার–পাঁচজন ছিলেন।

খালেদা জিয়ার মনে হতাশা আছে

খালেদা জিয়া
Sarfuddin Ahmed

এর আগে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘এই স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের পতন ঘটাতে হলে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন ঘটাতে হবে বিএনপির নিজের ঘরে। আপনারা কি খালেদা জিয়ার চেহারা দেখেছেন? তাঁর মনের মধ্যে একটা হতাশা আছে। বিএনপির লোকেরা হয়তো উপলব্ধি করতে পারেন না।’

শিক্ষা প্রসঙ্গে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এই সরকার মানুষের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে গণতান্ত্রিক অধিকারের পরেই শিক্ষায় অব্যবস্থাপনা দিয়ে। তারা সম্পূর্ণ ধ্বংস করেছে এটা।

করোনায় সীমাহীন ক্ষতির মুখে শিক্ষা খাত

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী বলেন, শিক্ষা খাতে বরাদ্দ অনেক কম। এই অপ্রতুলতা কমাতে হবে। যত বেশি শিক্ষা খাতে ব্যয়, বিনিয়োগ হবে তত বেশি সমৃদ্ধ হবে।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দেশে শিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে বলা হয়। কিন্তু তার মধ্যে শুভংকরের ফাঁকি আছে। যেভাবেই হোক শিক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়টা এই দেশে নেই।

সভায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, শিক্ষা নিয়ে বারবার কমিশন গঠন করা হয়েছে। কিন্তু কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়িত হয় না। শিক্ষা ধ্বংস হলে মেরুদণ্ড ধ্বংস হয়ে যায়। তখন দেশ চালানোর ক্ষমতা হারিয়ে যায়। আর যখন দেশে হাল ধরার কেউ থাকে না, তখন অন্য শক্তি খুব সহজেই দেশকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও ইআরআই চেয়ারম্যান আ ন ম এহসানুল হক বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে শিক্ষা থেমে থাকেনি। শুধু আফ্রিকার চারটি, লাতিন আমেরিকার নয়টি, দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র বাংলাদেশসহ মোট ১৪টি দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। বর্তমানে করোনা মহামারির কবলে অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি সীমাহীন ক্ষতির মুখে পড়েছে শিক্ষা খাত।

সভায় আরও বক্তব্য দেন অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, অধ্যাপক এম আবদুল আজিজ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ প্রমুখ।