বিএনপি দলটাই হত্যার রাজনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত: তথ্যমন্ত্রী

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ
ফাইল ছবি

তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, হত্যা-গুমের ওপরই বিএনপির রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক ও প্রদর্শক সমিতির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
‘আওয়ামী লীগ অবলীলায় হত্যা, খুন, গুম করে যাচ্ছে’—সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন মন্তব্যের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি পুরো দলটাই তো হত্যার রাজনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। জিয়াউর রহমান নিজে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। হত্যার মাধ্যমেই জিয়াউর রহমানের উত্থান এবং হত্যার মাধ্যমেই জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় টিকেছিল। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনীর কয়েক হাজার অফিসার এবং জওয়ানকে হত্যা করে ক্ষমতায় টিকে থেকে পরবর্তী সময়ে নিজেও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের বিচারটাও করেনি, জিয়াউর রহমানের হত্যার পর তাঁরা আবদুস সাত্তারের নেতৃত্বে একবার ও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দুইবার ক্ষমতায় ছিল—তখনো তারা জিয়া হত্যার বিচার করেনি।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন বাংলাদেশে যে গুম, খুন হয়েছে, সেটি নজিরবিহীন। আপনাদের মনে আছে, ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর ২০০২ সালে অপারেশন ক্লিনহার্ট পরিচালনা করা হয়েছিল। তখন ডজন-ডজন মানুষ হত্যা করা হয়েছে এবং সেই সব হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ার জন্য আবার সংসদে ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে না। যেভাবে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৯ সালের পার্লামেন্টে তারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ার জন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করেছিল, একই কাজ খালেদা জিয়া করেছিল ২০০২ সালে।
‘বিএনপি, যাদের রাজনীতিটাই হত্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত, তারা যখন এ নিয়ে কথা বলে, তখন সেটি হাস্যকর হয়ে দাঁড়ায়’ উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যেকোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিপক্ষে।

বিএনপি রাজপথে আন্দোলনে নামতে পারে—বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর এমন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এখন দেশে এবং সারা পৃথিবীতে করোনাভাইরাসের মারাত্মক প্রাদুর্ভাবে মানুষের জীবন পর্যুদস্ত। প্রায় সব দেশেই অর্থনীতি স্থবির হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর সময়োচিত পদক্ষেপের কারণে আমাদের দেশে অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে। গত বছরের জুলাইয়ের তুলনায় এ বছরের জুলাই মাসে আমাদের রপ্তানি ১৩ শতাংশ বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে দলের সাংগঠনিক কর্মসূচিও আমরা সীমিত করে ফেলেছি। এমন পরিস্থিতিতে তারাই রাজপথে নামার কথা বলতে পারে, যারা শুধু নিজের দলের স্বার্থের কথা ভাবে এবং নিজেদের নিয়ে ভাবে, জনগণ নিয়ে ভাবে না।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপির গত সাড়ে ১১ বছরের রাজনৈতিক চিন্তা, চেতনা, কর্মসূচির ক্ষেত্রে আমি যেটি ব্যক্তিগতভাবে সবচেয়ে বড় দুর্বলতা মনে করি, তারা কখনো জনগণের কথা ভাবেনি, তারা সব সময় ভেবেছে নিজেদের দলের কথা, কীভাবে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে, কীভাবে যেকোনো উপায়ে সরকারকে ফেলে দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে। সে জন্য তাদের সব আন্দোলন হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন—এ নিয়ে অথবা তারেক জিয়া বা খালেদা জিয়ার মামলা-শাস্তি নিয়েই। তারা যে দেশের জনগণকে নিয়ে ভাবে না, সেটিরই বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে রিজভী আহমেদের বক্তব্যে।

১৫ সেপ্টেম্বরের পর সিনেমা হলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত

চলমান করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পর্যবেক্ষণের পর সিনেমা হল খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক ও প্রদর্শক সমিতির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস, চলচ্চিত্র পরিচালক বদিউল আলম খোকন, কবিরুল ইসলাম রানা, আবদুস সামাদ খোকন, মুস্তাফিজুর রহমান মানিক, চলচ্চিত্র প্রদর্শক মিঞা আলাউদ্দিন, আওলাদ হোসেন প্রমুখ সভায় অংশ নেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সিনেমা হলগুলো খোলার ব্যাপারে চলচ্চিত্রশিল্পের অংশীজনদের সঙ্গে এর আগেও আলোচনা হয়েছে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে হল খোলাটা কতটুকু যৌক্তিক হবে, সেটি একটি বড় প্রশ্ন। ভারতে এখনো সিনেমা হল খোলেনি। সেখানে সিনেমার দর্শক অনেক বেশি। আবার এখন সিনেমা হল খুললে সেখানে দর্শক যাবে কি না, সেটিও একটি প্রশ্ন। সুতরাং আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী মাসের ১৫ তারিখের (১৫ সেপ্টেম্বর) পরে আমরা বসে এ ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি, কখন থেকে হলগুলো খোলা যায়।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলচ্চিত্রশিল্পের গৌরব ফিরিয়ে আনতে বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমা হল চালু করা এবং সিনেমা হলগুলোর আধুনিকায়নে স্বল্প সুদ ও দীর্ঘমেয়াদে ব্যাংকঋণের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছেন বলে জানান হাছান মাহমুদ।