বিএনপিতে স্থবিরতা, মামলা সামলাতে দৌড়াচ্ছেন নেতা-কর্মীরা

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত
>

• মামলা সামাল দিতে দৌড়াচ্ছেন নেতা-কর্মীরা
• বেশির ভাগ নেতা-কর্মী আত্মগোপনে
• দলীয় কার্যালয়ে কেউ থাকেন না

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপর্যয়ের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেনি চট্টগ্রাম বিএনপি। বেশির ভাগ নেতা-কর্মী এখনো আত্মগোপনে কিংবা কারাগারে আছেন। ফলে দলীয় কর্মসূচি পালনের জন্য কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিষ্ঠার পর চট্টগ্রাম বিএনপির এমন বেহাল কখনো ছিল না বলে দলীয় নেতা-কর্মীরা স্বীকার করেছেন। দুই মাস ধরে খাঁ খাঁ করছে বিএনপির দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবন এলাকা।

দলীয় সূত্র জানায়, ১৯ জানুয়ারি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রামে কোনো আলোচনা সভা হয়নি। ৪০ বছরের ইতিহাসে এবারই সংগঠনটি জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে মিলাদ মাহফিল ছাড়া কোনো কর্মসূচি নিতে পারেনি। কেবল বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেন। নগর যুবদলও অনুরূপ মিলাদ মাহফিলের মাধ্যমে দলটির প্রতিষ্ঠাতার জন্মদিন পালন করেছে।

দলীয় একাধিক নেতা-কর্মী জানান, নির্বাচনের পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতির দৃশ্যমান কোনো উন্নতি হয়নি। উল্টো যাঁরা উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়ে এসেছিলেন, নিম্ন আদালতে তাঁদের জামিন বাতিল হয়ে যাচ্ছে। কারণ, মামলার ধারাগুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং অজামিনযোগ্য। এতে নেতা-কর্মীদের আতঙ্ক কমেনি, বরং বাড়ছে। এ জন্য নেতা-কর্মীরা সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না।

গত দুই মাসে একাধিকবার দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে নীরবতা বিরাজ করছে। তফসিল ঘোষণার পর আগে থেকেই নেতা-কর্মীরা সেখানে ঘেঁষতে পারছেন না কিংবা কেউ যাচ্ছেন না। ধরপাকড়ের আশঙ্কায় নেতা-কর্মীরা সেখানে যাচ্ছেন না বলে জানা গেছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মীর মোহাম্মদ হেলালউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের যুবদলের এক নেতার জানাজা নাসিমন ভবন চত্বরে পড়তে দেয়নি পুলিশ। এর আগে নেতা-কর্মীরা দলীয় কার্যালয়ে যেতে বাধা পেয়েছেন কি না, তা স্থানীয় নেতারা ভালো বলতে পারবেন।’

সংগঠনের স্থবিরতা প্রসঙ্গে মীর হেলাল বলেন, ‘নির্বাচন কী রকম হয়েছে, তা দেশবাসী জানে। তবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরও হাজার হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে মামলার শিকার নেতা-কর্মীদের মুক্ত করতে আমাদের লিগ্যাল টিম কাজ করছে। এটাও সাংগঠনিক কাজের একটি অংশ। এরপর জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য আমরা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামব।’

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে থেকে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানের মুখে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। নির্বাচনের আগে চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় সাড়ে চার হাজারের বেশি নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হন। আর সক্রিয় নেতা-কর্মীরা মামলার কারণে নির্বাচনী কাজে অংশ নিতে পারেননি। এখনো গ্রেপ্তার অভিযান চলছে বলে দলীয় নেতারা জানিয়েছেন।

চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সহসভাপতি আবদুস সাত্তার এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কারাগারে। দলের দুই কান্ডারি ছাড়াও হাজার হাজার নেতা-কর্মী কারাগারে। তাহলে আমরা দাঁড়াব কীভাবে?’

আবদুস সাত্তার বলেন, ‘আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চলছে। কেন্দ্র থেকে কী কর্মসূচি আসছে, সে জন্য অপেক্ষায় আছি আমরা। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি নিয়ে চট্টগ্রাম বিএনপি মাঠে নামলে নেতা-কর্মীরা আবার সংগঠিত হবেন। কারণ, বিএনপি বড় সংগঠন। আমাদের সংগঠনের এই স্থবিরতা সাময়িক।’