‘ভাসানীকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে’

মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী পরিষদের উদ্যোগে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতাস্তম্ভের সামনে।
ছবি: প্রথম আলো

মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, এই দেশ ও দেশের ইতিহাস যত দিন থাকবে, সেখানে মাওলানা ভাসানী থাকবেন। যতই চেষ্টা ও ষড়যন্ত্র হোক, তাঁকে কিছুতেই মুছে ফেলা যাবে না।

বুধবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এসব কথা বলেন। মাওলানা ভাসানীর ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী পরিষদ এই সভার আয়োজন করে।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘উপমহাদেশের ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা অনেক নেতাকে দেখব। কিন্তু মাওলানা ভাসানীর মতো আরেকজন নেতাকে পাব না, যিনি বিপ্লব ও মেহনতি মানুষের মুক্তির জন্য আপসহীনভাবে সারা জীবন কাজ করে গেছেন। তাঁর মতো মানুষের জন্য মৃত্যুটা সত্য নয়। মাওলানা ভাসানীকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। বুর্জোয়ারা সেই চেষ্টা করবেই। কিন্তু মাওলানা কখনোই মুছে যাবেন না। যত দিন এদেশের মেহনতি মানুষের মুক্তির সংগ্রাম আছে, তত দিন মাওলানা থাকবেন। এই দেশ ও দেশের ইতিহাস যদি থাকে, সেখানে মাওলানা ভাসানী থাকবেন। তাঁকে কিছুতেই মুছে ফেলা যাবে না যতই চেষ্টা ও ষড়যন্ত্র হোক।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা রাজনীতিতে দেখি, রাজনৈতিক দল ও নেতারা মিত্র বা বন্ধু খোঁজেন। খুঁজতে গিয়ে তাঁরা নানা ধরনের বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েন। এমনকি বামপন্থীরাও মিত্র খোঁজেন। কেউ রুশপন্থী, কেউ চীনপন্থী হন আর বুর্জোয়ারা সাম্রাজ্যবাদীদের খোঁজেন নিজেদের মিত্র হিসেবে। কিন্তু মাওলানার মিত্রের কোনো অভাব ছিল না। তাঁর মিত্র চারদিকে ছড়িয়ে ছিল, দেশের সব মানুষ তাঁর মিত্র ছিলেন। শত্রু চিনতেও তাঁর কখনো কোনো রকম ভ্রান্তি দেখা যায়নি।

মাওলানা ভাসানীকে নিয়ে থাকা নানা সমালোচনারও জবাব দেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, বুর্জোয়ারা মাওলানা ভাসানীকে রহস্যময় বলে। মাওলানা নাকি পাকিস্তান সরকারের টাকায় চীনে গিয়েছিলেন। তিনি চীনে গিয়েছিলেন চীন সরকারের আহ্বানে তাদের অতিথি হিসেবে। মাও সে–তুং নাকি মাওলানার কানে কানে তখন বলে দিয়েছিলেন, ‘ডোন্ট ডিস্টার্ব আইয়ুব।’ সেটা কে যেন শুনেছিল এবং সারা দেশময় প্রচার হয়েছিল, মাওলানা আইয়ুব খানের দালাল হয়ে গেছেন। আইয়ুব খান ক্ষমতায় এসে প্রথমে যাঁদের গ্রেপ্তার করেছিল, তাঁদের মধ্যে মাওলানা ছিলেন এবং তিনি চার বছর আবদ্ধ ছিলেন। বেরিয়ে এসে আবার সেই আন্দোলন শুরু করেছিলেন। এই যে নানান রকম কথা হয়, এগুলো দিয়ে তাঁকে ব্যাখ্যা করা যাবে না। আসল সত্য হলো মেহনতি মানুষের মুক্তির সংগ্রামে তিনি ছিলেন।

সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদের সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম প্রমুখ।

সভায় সভাপতিত্ব করেন ভাসানী পরিষদের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আকমল হোসেন।