মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে মোদির গ্রেপ্তার হওয়া নিয়ে জাফরুল্লাহর প্রশ্ন

জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘কণ্ঠরোধ, হত্যা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও সংহতি সভা’ শিরোনামে আলোচনার আয়োজন করে এবি পার্টি। জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মাহমুদুর রহমান মান্না ও রেজা কিবরিয়াসহ অনেকে এই আলোচনায় অংশ নেন। ঢাকা, ২৯ মার্চ
ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলনে নেমে গ্রেপ্তার হওয়ার যে দাবি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি করেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এই মুক্তিযোদ্ধার মতে, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বলিষ্ঠ অবস্থান নেওয়ায় এ ধরনের ঘটনা ঘটার কথা নয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকার আয়োজিত ‘মুজিব চিরন্তন’ উৎসবের সমাপনী পর্বে সম্মানিত অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত শুক্রবার ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘নতুন প্রজন্মকে আমি বলতে চাই, বাংলাদেশের মুক্তির জন্য শামিল হওয়া ছিল আমার জীবনের প্রাথমিক আন্দোলনগুলোর একটি।’ তখন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল বলে জানান তিনি।

আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সভায় বক্তব্যে বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদির ওই বয়ান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘মোদি সাহেব বলেছেন উনি মুক্তিযুদ্ধের সময় জেলে গিয়েছিলেন, কারণ কী? মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তো ভারতীয় নেতা-কর্মীদের বিরোধিতা ছিল না। বরং ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে এক কোটি শরণার্থী অসহায় বাঙালির সহায়তা এবং কীভাবে দ্রুত যুদ্ধ শেষ করা যায়, সেই পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছিল। এ জন্য রুশ-ভারত চুক্তি হয়েছিল।

এটার বিরুদ্ধে বিরোধিতা করেছিল হিন্দু মহাসভা। সম্ভবত পাকিস্তানেরও কিছু অর্থ-শর্ত তারা পেয়েছিল কি না, আমি জানি না। সেই কারণেই তাঁকে জেলে যেতে হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের জন্য নয়, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করার জন্য জেলে যেতে হয়েছিল।’

নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সহিংসতায় নিহতদের ‘হত্যা’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন জাফরুল্লাহ। তাঁদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি করেছেন তিনি।

হেফাজতে ইসলামের হরতাল ও বিক্ষোভের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদ্রাসাছাত্রদের ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের যে খবর এসেছে, সে বিষয়েও প্রশ্ন রয়েছে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর। আসলেই তাঁরা পুড়িয়েছে, নাকি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন এটা করেছে, তা খুঁজে বের করতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন তিনি।

পরক্ষণেই জাফরুল্লাহ চৌধুরী আবার বলেছেন, পুলিশসহ সরকারি কর্মকর্তারা রাতের আঁধারে যেভাবে ভোটের বাক্সে ‘ভোট ভরেছে’, তা নিয়ে জনমনে যে ক্ষোভ সেটা থেকে এটা করা হয়ে থাকতে পারে। সহিংসতায় নিহতদের জন্য শোক দিবস পালনের প্রস্তাব করেছেন তিনি। এর সঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি নিয়ে একদিন ঢাকায় শোকযাত্রা করার প্রস্তাবও দিয়েছেন তিনি।

ভারত থেকে মুক্ত না হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ভারতের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু ভারত লাভবান হয়েছে অনেক বেশি।’

নরেন্দ্র মোদির এই সফরেও বাংলাদেশ তেমন কিছু পায়নি বলে মন্তব্য করেন জাফরুল্লাহ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘অন্ধকার ঘরে রেখে’ তাঁর দৃষ্টি সরিয়ে রাখা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আপনি আপনার বোনকে বরং আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আনেন। শেখ রেহানারও তো অধিকার আছে শেখ মুজিবের কন্যা হিসেবে তাঁরও দায়িত্ব পালনের।’

জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘কণ্ঠরোধ, হত্যা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও সংহতি সভা’ শিরোনামে এই আলোচনার আয়োজন করে এবি পার্টি।

সভায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে একটি দল কুক্ষিগত করে রেখেছে। আজ মুক্তিযুদ্ধের বীরশ্রেষ্ঠদের ‘সম্মান দেওয়া হয় না’। আহতরা সম্মান পায় না।

রেজা কিবরিয়া বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরেও মানুষ আজ স্বাধীন হতে পারেনি। দেশে ৯৮ ভাগ মানুষই স্বাধীন হতে পারেনি। তাঁর দাবি, দেশের ৯০ ভাগ মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগের পক্ষে কোনো জনমত নেই এবং থাকবে না। তারা যে অন্যায়গুলো করেছে, তারা জানে সে অন্যায়ের কৈফিয়ত দেওয়ার মতো সাহস তাদের নেই। আর জনগণের সামনে তারা দাঁড়াতে পারে না।

দলের সদস্যসচিব মজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন এবি পার্টির আহ্বায়ক, সাবেক সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী।

সভায় সভাপতির বক্তব্যে সোলায়মান চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের পার্টি মানুষের সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দ্রুত আমরা রাস্তায় নামব।’

ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি এবং জামায়াতে ইসলামীর সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘স্বাধীনতার উপহার হিসেবে আমরা পেয়েছি গুলি। সাধারণ মানুষের টাকায় কেনা বুলেট গেঁথে গেছে জনগণের বুকে। ১৯৭১-এ ঘুমন্ত মানুষের ওপর গুলি চলেছে আর এখন সজাগ মানুষের ওপর হামলা হচ্ছে।’

এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, এবি পাটির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল ওহাব, আসাদুজ্জামান ফুয়াদ প্রমুখ।