মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির জন্য ভর্ৎসনা

জেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তোফায়েল আহমেদ।  ছবি: প্রথম আলো
জেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তোফায়েল আহমেদ। ছবি: প্রথম আলো

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাংসদ মাহবুব উল আলম হানিফ সিলেটে দলের বিভিন্ন মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি নিয়ে স্থানীয় নেতাদের ভর্ৎসনা করেছেন। গতকাল বুধবার জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় তিনি এই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জাতীয় সম্মেলনের আগে আগামী নভেম্বরের মধ্যে জেলা ও মহানগরের সম্মেলন করার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

সভায় হানিফ বলেন, ‘২০১৫ সালে সিলেটে এসে শুনে গিয়েছিলাম যে কয়টা কমিটি আছে, ২০১৯ সালেও এসে শুনি সেগুলোই আছে। নতুন করে কোনো ইউনিটের কমিটি করা হয়নি। এটা অবশ্যই ব্যর্থতার পরিচয়। দায়িত্বশীলদের উচিত ছিল এই ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করা।’

সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে আওয়ামী লীগের জেলা ও মহানগরের সম্মেলন করে কমিটি গঠিত হয়েছিল ২০০৫ সালে। ২০১১ সালে সম্মেলন ছাড়াই কমিটি গঠিত হয়েছিল। এ হিসেবে সিলেটে সম্মেলন নেই প্রায় ১৪ বছর। আর আট বছর আগে সম্মেলন ছাড়াই গঠিত তিন বছর মেয়াদি জেলা ও মহানগরের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে পাঁচ বছর আগে। এ অবস্থায় সাংগঠনিক তৎপরতা স্থবিরতার মুখে পড়েছে। এ অবস্থা কাটাতে গতকাল কেন্দ্রীয় নেতাদের সাংগঠনিক সফরে জেলা ও মহানগর শাখার বর্ধিত সভা হয়।

সকালে জেলার ও বিকেলে মহানগর কমিটির বর্ধিত সভা হয়। বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জেলার বর্ধিত সভা হয় নগরের রিকাবীবাজারে কবি নজরুল মিলনায়তনে। বিকেল পাঁচটায় মহানগরের বর্ধিত সভা হয় মির্জাজাঙ্গাল এলাকার একটি রেস্তোরাঁর সম্মেলনকক্ষে। দুটো শাখার বর্ধিত সভায় কেন্দ্রীয় নেতা হানিফ ছাড়াও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাংসদ তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাংসদ নুরুল ইসলাম নাহিদ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ও মিসবাহউদ্দিন সিরাজ উপস্থিত ছিলেন।

জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লুৎফুর রহমান। সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। সভায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকালীন দলীয় প্রার্থীদের বিরোধিতার বিষয়টি উঠে আসে। পাশাপাশি সাংগঠনিক পরিস্থিতি আগের যেকোনো অবস্থার চেয়ে খারাপ, বিষয়টি তৃণমূলের নেতাদের বক্তব্যে প্রকাশ পায়। অন্যদিকে মহানগরের বর্ধিত সভায়ও বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পরাজয় ও মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটি নিয়ে আলোচনা হয়। এই বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আসাদউদ্দিন আহমদ।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ সভায় বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের নেতাই ছিলেন না, বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেতা ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর মতো দয়ালু, এত হৃদয়বান নেতা বিরল। একসময় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ আমরা বাজাতে পারতাম না। বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে চেয়েছিল জিয়াউর রহমান। কিন্তু সেই অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।’

এর আগে গত ২৬ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আ ন ম শফিকুল হকের শোকসভায় অংশ নিতে সিলেটে এসেছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনিও এখানে আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। গতকাল কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক দলের উপস্থিতিতে বর্ধিত সভায়ও একই তাগাদা দেওয়া হয়েছে। 

সভা শেষে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সুজাত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা নভেম্বরের মধ্যে জেলা সম্মেলন করার প্রস্তুতি নেব।’ ওয়ার্ড কমিটি পুনর্গঠন করে মহানগরের সম্মেলনও নভেম্বরের মধ্যে করা হবে বলে জানিয়েছেন মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদউদ্দিন আহমদ।