যেই নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসছে, তারা আবার ত্রাস সৃষ্টি করছে: মির্জা ফখরুল

জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান বিএনপির নেতা-কর্মীরাপ্রথম আলো

‘সরকার আবার পুরোনো কায়দায় ত্রাস সৃষ্টি করছে’ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘আমরা শপথ নিয়েছি, কোনো ভয়ভীতি আমাদের দমন করতে পারবে না, বাংলাদেশের মানুষকে কোনো দিন দমন করতে পারেনি।’

আজ সোমবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর মির্জা ফখরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। এর আগে তিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে কবরে শ্রদ্ধা জানান।

ঢাকায় ছাত্রদলসহ বিভিন্ন জেলায় দলীয় কর্মসূচিতে সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের হামলার ঘটনা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘কিছুদিন ধরে আমরা লক্ষ করছি, যেই নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসছে, তারা আবার সেই পুরোনো কায়দায় ত্রাস সৃষ্টি করছে। আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা, তাঁদের বাড়িঘরে হামলা করে ভয়াবহ ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে তারা।’

কোনো ভয়ভীতি বিএনপিকে দমন করতে পারবে না বলে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা সবকিছু মোকাবিলা করে দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে অবশ্যই এই ভয়াবহ যে ফ্যাসিস্ট সরকার, যারা পাথরের মতো চেপে বসে আছে, তাদের সরিয়ে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হব।’

জিয়াউর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘১৯৭৫ সালের পর সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্র, একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে বাংলাদেশকে নতুন করে একটি বহুদলীয় গণতন্ত্র উপহার দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। তাঁর সফল নেতৃত্বে “তলাবিহীন ঝুড়ি”র বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশে করার যে ভিত্তি তিনি রচনা করেছিলেন, সেই নেতার প্রতি আমরা গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। দুর্ভাগ্যের বিষয়, যে গণতন্ত্রকে তিনি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন, খালেদা জিয়া হারিয়ে যাওয়া সেই গণতন্ত্রকে আবার ফিরিয়ে আনার জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম-লড়াই করেছিলেন, তিনি এখনো এই গণতন্ত্রের জন্য অন্তরীণ। সেই বাংলাদেশে আজকে গণতন্ত্র সম্পূর্ণভাবে অনুপস্থিত।’

এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করেন। নেতা-কর্মীরা সবাই কালো ব্যাজ ধারণ করে শোক প্রকাশ করেন।

জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে খাবার ও বস্ত্র বিতরণ করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
সংগৃহীত

স্থায়ী কমিটির সদস্যদের পর মহানগর বিএনপির উত্তর-দক্ষিণের কমিটিসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর রাজধানীর দক্ষিণ ও উত্তরের মোট ৭০টি স্থানে দুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী ও বস্ত্র বিতরণ কর্মসূচিতে অংশ নেন বিএনপির মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। এর মধ্যে দুপুরে ধানমন্ডির সুগন্ধা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে থেকে দুস্থ মানুষের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কর্মসূচি শুরু করেন বিএনপির মহাসচিব। শেষ হয় বিকেলে উত্তরার আবদুল্লাহপুরে।

১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে একদল বিপথগামী সেনাসদস্যের অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হন। এই দিনকে বিএনপি তাঁর ‘শাহাদাত দিবস’ হিসেবে পালন করে। দিবসের শুরুতে ভোরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। এ উপলক্ষে নয়াপল্টনে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) দিনব্যাপী বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ বিতরণের জন্য ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প করে।