যেকোনো বিচারে পদ্মা সেতুর ব্যয় সাশ্রয়ী: সংসদে প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদের অষ্টাদশ অধিবেশনের (বাজেট অধিবেশন) সমাপনী ভাষণ দেন
ছবি পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় যেকোনো বিচারে সাশ্রয়ী। সমসাময়িক সময়ে নির্মিত সব সেতুর তুলনায় এই সেতুর ব্যয় অত্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ। যৌক্তিকতার বাইরে কোনো কাজ বা ব্যয় অন্তর্ভুক্তির কোনো সুযোগ এখানে ছিল না।

বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদের অষ্টাদশ অধিবেশনের (বাজেট অধিবেশন) সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের প্রায় পুরোটাই ছিল পদ্মা সেতু নিয়ে। তিনি বলেন, সেতু নির্মাণের ব্যয় নিয়ে বেশি বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে। নদীশাসন, পুনর্বাসন, ইউটিলিটি সুবিধাসহ অন্যান্য ব্যয় বাদ দিয়ে শুধু মূল সেতুর ব্যয় ১১ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। যেকোনো বিচারে এই ব্যয় সাশ্রয়ী। এই ব্যয় যেকোনো বিচারে অত্যন্ত কৃতিত্বপূর্ণ সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হবে। এখানে দুর্নীতির কোনো সুযোগই ছিল না।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় বাড়ার বিভিন্ন কারণ তুলে ধরে বলেন, যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এই সেতুর পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তখন তাতে অনেক কিছুই ছিল না। সড়কসেতুর সঙ্গে রেলপথ যুক্ত করা, নদীশাসনের পরিমাণ বৃদ্ধি, অধিগ্রহণকৃত জমির পরিমাণ ও মূল্য বৃদ্ধি, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন, পাইলিংয়ের গভীরতা বৃদ্ধিসহ যেসব কারণে ব্যয় বেড়েছে, তার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন তিনি।

পদ্মা সেতুকে বড় অর্জন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই সেতু সমগ্র জাতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সবাই বলছে, “আমরা পারি।” মানুষের ভেতর একটি শক্তি উৎসারিত হয়েছে। এই সেতুর কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। সমালোচনাকারীরা নিজেদের দেশের শক্তি, মানুষের সাহস সম্পর্কে অজ্ঞ।’

শেখ হাসিনা বলেন, মিথ্যা অজুহাত ও দুর্নীতির ধুয়া তুলে বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য দাতা পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন থেকে সরে গিয়েছিল। তখন তিনি বলেছিলেন, নিজেদের অর্থায়নেই পদ্মা সেতু করা হবে। এতে অনেক বিশেষজ্ঞ, এমনকি রাজনৈতিক নেতারাও ভেবেছিলেন, বিশ্বব্যাংক ছাড়া এই সেতু নির্মাণ সম্ভব নয়। অনেকে অনেক জুজুর ভয় দেখিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এই সেতুর মাধ্যমে এখন বিশ্বে নতুন উচ্চতায় স্থান করে নিয়েছে।

নির্ধারিত সময়ের আগেই পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় উঠে আসবে—এমন আশার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ফিজিবিলিটি স্টাডি অনুযায়ী টোল আদায়ের মাধ্যমে ২৫ থেকে ২৬ বছরে খরচ উঠে আসার পূর্বাভাস ছিল। তবে তার আগেই ব্যয় উঠে আসবে। কারণ, এ সেতুর যোগাযোগ আরও বিস্তৃত হবে। এতে ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ব্যয় উঠে আসবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদের অষ্টাদশ অধিবেশনের (বাজেট অধিবেশন) সমাপনী ভাষণ দেন ছবি
ছবি পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজস্ব অর্থায়নের এই খরচের টাকা সেতু কর্তৃপক্ষ সরকারের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে। ১ শতাংশ সদুসহ ২৫ বছরে সরকারকে ফেরত দেবে, সেই চুক্তি করে সেতু কর্তৃপক্ষ ঋণ নিয়েছে। এই সেতু হয়েছে বাংলাদেশের টাকায়।

সংসদের বাজেট অধিবেশন অত্যন্ত প্রাণবন্ত ছিল মন্তব্য করে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধী দল, বিশেষ করে বিএনপির সংসদ সদস্যরা বক্তব্য দেওয়ার যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছেন। ইচ্ছেমতো কথা বলতে পেরেছেন। যারা ‘অফিশিয়াল বিরোধী দল’, তারাও সুযোগ পেয়েছে। বাজেট অধিবেশনে ২২৮ জন সংসদ সদস্য বাজেটের ওপর আলোচনা করেন। মোট ৩৮ ঘণ্টা ৫৭ মিনিট আলোচনা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা সংক্রমণ ও রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দ্রব্যমূল্য, বিশেষ করে যেসব পণ্য আমদানি করতে হয়, সেগুলোর দাম বেড়েছে। দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে নিয়মিত বাজার মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সামনে দক্ষিণাঞ্চলে বন্যা হবে, এটি ধরে নিয়ে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে।

৫ জুন থেকে শুরু হওয়া বাজেট অধিবেশন বৃহস্পতিবার শেষ হয়। অধিবেশনের শেষ পর্যায়ে পদ্মা সেতু নিয়ে নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র সংসদে দেখানো হয়।