রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সরস বাণী

l ভারতবর্ষের ইতিহাসে দাসরাজাদের রাজত্বকাল সুখের ছিল না। আমার জীবনের ইতিহাসেও ভৃত্যদের শাসনকালটা যখন আলোচনা করিয়া দেখি, তখন তাহার মধ্যে মহিমা বা আনন্দ কিছুই দেখিতে পাই না।

‘জীবনস্মৃতি’

l যে জিনিসটা পাতে পড়িলে উপাদেয়, সেইটাই মাথায় পড়িলে গুরুতর হইয়া উঠিতে পারে। ভাষা শিখাইবার জন্য ভালো কাব্য পড়াইলে তরবারি দিয়া ক্ষৌরী করাইবার মতো হয়। তরবারির তো অমর্যাদা হয়ই, গণ্ডদেশেরও বড় দুর্গতি ঘটে।

‘বাংলা শিক্ষার অবসান’

l ইহার (ইস্কুলে) ঘরগুলা নির্মম, ইহার দেয়ালগুলা পাহারাওয়ালার মতো, ইহার মধ্যে বাড়ির ভাব কিছুই নাই, ইহা খোপওয়ালা একটা বড়ো বাক্স।

‘বাংলা শিক্ষার অবসান’

l ...চিরকাল গানের বই ছাপাইতে সংকোচ বোধ করি। কেননা, গানের বইতে আসল জিনিসই বাদ পড়িয়া যায়। সংগীত বাদ দিয়া সংগীতের বাহনগুলিকে সাজাইয়া রাখিলে কেমন হয়, যেমন গণপতিকে বাদ দিয়া তাঁহার মূষিকটাকে ধরিয়া রাখা।

‘গান সম্বন্ধে প্রবন্ধ’

l কবিতা শুনিয়া কেহ যখন বলে, ‘বুঝিলাম না’, তখন বিষম মুশকিলে পড়িতে হয়। কেহ যদি ফুলের গন্ধ শুঁকিয়া বলে, ‘কিছু বুঝিলাম না’, তাহাকে এই কথা বলিতে হয়, ইহাতে বুঝিবার কিছু নাই, এ যে কেবল গন্ধ।

‘প্রভাত সংগীত’

l প্রাচীন যুগের ঘোড়া আর এখনকার ঘোড়ায় প্রভেদ আছে বিস্তর, কিন্তু তাদের কঙ্কালের ছাঁদ দেখলে বোঝা যায়, তারা এক বংশের।

‘বাংলা ভাষা-পরিচয়’

l অহংটাই পৃথিবীর মধ্যে সকলের চেয়ে বড়ো চোর।

‘আত্মপরিচয়’

l যে লোক ধনী, ঘরের চেয়ে তাহার বাগান বড়ো হইয়া থাকে।

‘পনেরো আনা’

l মানুষ দুই শ্রেণিতে বিভক্ত—পনেরো আনা এবং বাকি এক আনা। পনেরো আনা শান্ত এবং এক আনা অশান্ত।

‘পনেরো আনা’

l সকল ঘাস ধান হয় না। পৃথিবীতে ঘাসই প্রায় সমস্ত, ধান অল্পই।

‘পনেরো আনা’

l য়ুরোপে আজকাল প্রধান সমস্যা এই জিনিসপত্র, না মনুষ্যত্ব, কাহার দাম বেশি?

‘সাময়িক সারসংগ্রহ’

l আমরা যে-সকল জায়গায় সুবিচারপূর্বক পাটকেল নিক্ষেপ করি তাহা নহে, অধিকাংশ স্থলে অন্ধকারেই ঢেলা মারি।

‘ইংরাজ ও ভারতবাসী’

l যাহারা রীতিমতো বাঁচিতে চাহে, মুমূর্ষুভাবে কালযাপন করিতে চাহে না, তাহারা দুঃখ দিয়াও সুখ কেনে।

‘সুখ-দুঃখ’

l কোনো প্রাণীকে প্রচুর বাঁধা খোরাক দিয়া কেবলমাত্র মেদ বৃদ্ধি করিলে তাহার মাংস অন্যের পক্ষে বড়ো উপাদেয় হয় কিন্তু তাহাতে তাহার নিজের সুবিধা দেখি না; আমরা ঘরে বসিয়া কেবলই চিন্তার খোরাকে পরিপুষ্ট হইয়াছি, তাহাতে অন্যান্য মাংসাশী জাতির বিশেষ উপকার হইয়াছে, এখন বুঝিতেছি শিং নাড়িয়া গুঁতা দিবার শিক্ষাটা আমাদের নিজের পক্ষে বিশেষ কার্যকরী।

‘পলিটিক্স’