রাজদরবারেও অত দূরত্ব থাকে না: কাদের সিদ্দিকী

কাদের সিদ্দিকী
ফাইল ছবি

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান নিয়ে আক্ষেপ জানিয়েছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী। তিনি বলেছেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে দর্শক সারি থেকে বক্তাদের যে দূরত্ব ছিল, তা রাজদরবারেও থাকে না।  
আজ রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন কাদের সিদ্দিকী। ‘দুঃশাসন উত্তরণে বীর মুক্তিযোদ্ধার চোখে আজ ও আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক ব্যানারে এ আলোচনার আয়োজন করে গণফোরাম।

কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘গত ১২ বছর রাষ্ট্রীয় কোনো কিছুতে আমার আফসোস হয় না। দাওয়াত পেলাম কি পেলাম না, রাস্তায় জায়গা পেলাম কি পেলাম না, সম্মান কেউ দেখাল কি দেখাল না। এগুলো নিয়ে কোনো মাথাব্যথা হয় না।’

এই রাজনীতিক বলেন, ‘গত ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। আমি গিয়েছিলাম। সামনেই আসন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বক্তারা ছিল আমাদের থেকে ৬০-৭০ ফুট দূরে। সেখানে কোনো নৈকট্য ছিল না, সান্নিধ্য ছিল না। রাজদরবারেও অত দূরত্ব থাকে না। যেটা আমি সেদিন দেখে এসেছি।’

কাদের সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘আমন্ত্রণ কার্ডে লেখা ছিল ফোন ও কলম নেওয়া যাবে না। আমি ফোনও নিইনি, কলমও নিইনি। গিয়ে দেখি সবার কাছেই ফোন, সবার কাছেই কলম। সবার কাছেই হয়তো ছুরি-চাকু থাকতে পারে। আমার মতো একজন ভিতু কিছুই নেয়নি।’

আলোচনা সভায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘যে কারণে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, তা উপেক্ষিত। উন্নয়ন ধুয়ে খাওয়া যাবে না, যদি মানুষের অধিকার না থাকে। যে জন্য আমরা যুদ্ধ করেছিলাম, মানুষের ভোটের অধিকার, কথা বলার অধিকার, সেসব হচ্ছে না। যে উদ্দেশ্য নিয়ে স্বাধীনতাসংগ্রাম হয়েছিল, সেটি এখনো পূরণ হয়নি।’

সভাপতির বক্তব্যে গণফোরামের এক অংশের সভাপতি মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, এ দেশের মানুষের পথ নির্দিষ্ট হয়ে গেছে। আর কোনো আপস নয়। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠিত হবে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর দেশে আর গণতন্ত্র নেই। দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে আবার লড়তে হবে।

রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে আজ রোববার সন্ধ্যায় এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী
ছবি: আহমেদ দীপ্ত

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘আমাদের এখানে শাসক পরিবর্তন হয়েছে, রাষ্ট্র পরিবর্তন হয়নি। এখানে পাকিস্তানি-ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থা রয়ে গেছে। এ নিয়ে আত্মসমালোচনা, আত্মপর্যবেক্ষণ নেই। এই জালিম-জুলুমের শেষ কোথায় আমি দেখে যেতে চাই। এখন যা চলছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। জনগণ এ দেশের মালিক। তাদের হাতেই ক্ষমতা দিতে হবে।’

গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, ‘একাত্তরে সামরিক স্বৈরতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হয়েছিল। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে মনে হচ্ছে সেই স্বৈরতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, কর্তৃত্ববাদী শাসন আবার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। বরং পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর হয়েছে। এই কর্তৃত্ববাদী শাসনে জনগণের মালিকানা নেই, ভোটাধিকার নেই।’