রাজপথ থেকে বড় ঐক্য চায় বাম জোট

ফাইল ছবি

বাম গণতান্ত্রিক জোট মনে করে, দেশের রাজনীতিতে একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় সমমনাদের নিয়ে বড় ঐক্য চায় জোটের নেতারা। তাঁরা মনে করেন, রাজপথ থেকেই বড় ঐক্য গড়ে উঠতে পারে। এ জন্য সমমনাদের রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হতে আহবান জানাচ্ছেন তাঁরা।

প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ও জোটের তুলনায় সাংগঠনিক শক্তি–সামর্থ্য অনেক কম হলেও বাম জোট বা জোটের শরিক দলগুলো করোনার মধ্যেও বিভিন্ন ইস্যুতে নানা কর্মসূচি পালন করেছে। জোটের নেতারা মনে করছেন, দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির দাপট আবার বাড়ছে। এর পেছনে সরকারের প্রশ্রয় রয়েছে। এটি থামাতে বাম প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলের ঐক্য প্রয়োজন। এ বিষয়ে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে জোটটি।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দ্বিদলীয় রাজনীতির বাইরে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই বাম গণতান্ত্রিক জোট গঠিত হয়। শুরুতে জোটে আটটি দল ছিল।

কাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন বা বৃহত্তর ঐক্য করতে চান, এ বিষয়ে জোটে একাধিক শীর্ষ নেতা বলেন, লুটপাটতন্ত্র, গণতন্ত্রহীনতা, সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে তাঁদের আন্দোলন। এসবের বিরুদ্ধে যারা আছে, তাদের সবার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন হতে পারে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও এতে যুক্ত হতে পারে। তবে ঐক্য হতে হবে আন্দোলনের মাঠে, কর্মসূচির মধ্য দিয়ে। যদিও বিএনপির সঙ্গে জোট বা যুগপৎ কর্মসূচিতে যেতে রাজি নয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। দলটির অবস্থান আওয়ামী লীগ ও বিএনপির তৈরি দ্বিদলীয় রাজনীতির বাইরে নতুন শক্তি গড়ার পক্ষে। সিপিবির নেতারা বলছেন, সরকার হঠাতে তাঁরা বাম দিক থেকে আঘাত করছেন। বিএনপি বা তাদের জোট চাইলে ডান দিক থেকে আঘাত করতে পারে। তবে বিএনপির সঙ্গে একই জোটে কাজ করতে রাজি নন তাঁরা।

সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
প্রথম আলো ফাইল ছবি

সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, দেশ শাসনের নবসংস্করণ অনেক দেখেছে মানুষ। তাই বিকল্প শক্তি হতে হবে। আর সে জন্য বাম শক্তি এখনো তৈরি হয়নি। প্রতিকূলতার মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে। প্রয়াস চালিয়ে যেতে হবে, কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দ্বিদলীয় রাজনীতির বাইরে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই বাম গণতান্ত্রিক জোট গঠিত হয়। শুরুতে জোটে আটটি দল ছিল। দলগুলো হলো সিপিবি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী), গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লিগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন। গত বছর বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে একটা অংশ বেরিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্ক্সবাদী) নামে নতুন দল করে। এই দলটিও বাম জোটে যুক্ত হয়। জোটভুক্ত দলগুলোর মধ্যে কেবল তিনটির—সিপিবি, বাসদ ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন রয়েছে। ১৯৯৬ সালের পর এই জোটের শরিক কোনো দল থেকে কেউ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারেননি। ১৯৯১ সালে সিপিবির পাঁচজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়।

বাম জোট গঠনের পর থেকেই তিন মাসের ব্যবধানে একজন করে নতুন সমন্বয়ক নির্বাচিত করে আসছে। সর্বশেষ গত ১৬ অক্টোবর এ দায়িত্ব পেয়েছেন সিপিবির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুল্লাহ আল কাফি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি জোটের বাইরে থাকা সব বামপন্থী দল ও সংগঠন একত্রে কাজ করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন থেকেই তা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে বাম জোট। এটিকে ‘ভোট ডাকাতির’ নির্বাচন বলছে তারা। এ নির্বাচন বাতিল করে নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আরও বেগবান করতে চায় জোট।

জোনায়েদ সাকী
ফাইল ছবি

বাম জোটের নেতারা বলছেন, করোনাকালে দুর্নীতি, ধর্ষণ, স্বাস্থ্যব্যবস্থার নাজুক দশা নিয়ে করোনার মধ্যেও কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন তাঁরা। ব্যাপক মানুষকে আন্দোলনে যুক্ত করাই এখন তাঁদের লক্ষ্য। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বাম জোট। নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কার চায় তারা। জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা চালু করার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে কয়েক বছর ধরে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান স্বৈরাচারবিরোধী সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর শক্তি গড়ে তুলতে জোট প্রসারিত করার চেষ্টা আছে। তাই সবাইকে সংগ্রামে নামতে হবে। সংগ্রামের মধ্য দিয়েই জোটের সমীকরণ তৈরি হতে পারে। জোট না যুগপৎ হবে, আন্দোলনের মধ্য দিয়েই তা ঠিক হবে।

আরও পড়ুন