রায় দেখে কর্মসূচি দেবে জামায়াত

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলে হরতাল কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামবে তাঁর দল। এটা আগে থেকেই জামায়াতে ইসলামীর নীতিগত সিদ্ধান্ত। আর যদি রায়ে যাবজ্জীবন বা অন্য কোনো মেয়াদে সাজা হয়, সে ক্ষেত্রে হরতালের পরিবর্তে বিক্ষোভ কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে বলে দলটির একটি সূত্র জানিয়েছে।
দলটির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, কর্মসূচি দেওয়ার ক্ষেত্রে জামায়াতের নীতিনির্ধারকেরা এবার সতর্কতা অবলম্বন করছেন। এর আগে নেতাদের মামলার রায় ঘোষণার দিন থেকেই হরতালের কর্মসূচি দিয়েছিল জামায়াত। এবার রায় দেখে তারপর কর্মসূচি ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
এ কারণে গতকাল মঙ্গলবার কোনো কর্মসূচি না দিয়ে সাঈদীর জন্য ‘দোয়া’ করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ। একই সঙ্গে সাঈদীর মুক্তির দাবি করেন। তিনি বিবৃতিতে দাবি করেন, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। ‘মিথ্যা’ ও ‘কাল্পনিক’ অভিযোগ এনে এবং ‘মিথ্যা সাক্ষীর’ ওপর ভিত্তি করে তাঁকে সাজা দেওয়া হয়েছে।
সাঈদীর মামলার চূড়ান্ত রায় আজ জামায়াতের রাজনীতির অন্যতম চিন্তাশীল একজন ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, এবার জামায়াত আগের মতো উগ্র প্রতিক্রিয়া না-ও দেখাতে পারে। সর্বোচ্চ আদালত মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখলে এক দিনের হরতাল দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে সাঈদী মুক্তি পরিষদ বা এ ধরনের কোনো নামে কর্মসূচি পালন করা হতে পারে।
জামায়াতের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করার খবরটি ছিল জামায়াতের কাছে আকস্মিক। গতকাল দুপুরের দিকে এ খবর শুনে দলের নীতিনির্ধারকেরা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন। তাঁরা এ জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন না। এই সময়ে কেন রায় ঘোষণা করা হচ্ছে, তা বুঝতে দলের নেতারা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করছেন।
জামায়াতের নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, সরকার আজ বুধবার জাতীয় সংসদে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা-সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিল পাস করিয়ে নিতে পারে। এই বিলটি নিয়ে ইতিমধ্যে দেশের আইনজ্ঞ, বুদ্ধিজীবী ও নাগরিক সমাজ ঘোরতর আপত্তি প্রকাশ করেছে। এ অবস্থায় সাঈদীর মামলার রায় ঘোষণা করে সংবিধান সংশোধনের বিষয়টি আলোচনার বাইরে নিতে চাইছে সরকার।
এ ছাড়া বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট ঈদের পর আন্দোলনে নামার যে ঘোষণা দিয়েছে, তা দুর্বল করার কৌশল হিসেবে সাঈদীর রায়কে সামনে আনা হতে পারে বলেও জামায়াতের নেতাদের কেউ কেউ মনে করছেন।
জামায়াতের ঢাকা মহানগরের দুজন নেতা বলেন, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক দলের যেকোনো নেতাদের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখানোর বিষয়ে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। তবে তাঁদের কাছে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার রায় অন্যদের চেয়ে ভিন্ন ও স্পর্শকাতর। দলে তাঁর বিশাল ভক্ত-অনুরাগী আছে। এ ছাড়া ওয়াজ মাহফিলের কারণে দলের বাইরেও সারা দেশে সাঈদীর বড় সমর্থকগোষ্ঠী রয়েছে। তাই সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলে নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা সাধ্যমতো প্রতিক্রিয়া দেখানোর চেষ্টা করবেন।