শপথ আটকাতে মরিয়া বিএনপি

বিএনপি থেকে নির্বাচিত ছয় নেতা—মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, হারুন উর রশিদ, মোশাররফ হোসেন, আবদুস সাত্তার, আমিনুল ইসলাম ও জাহিদুর রহমান।
বিএনপি থেকে নির্বাচিত ছয় নেতা—মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, হারুন উর রশিদ, মোশাররফ হোসেন, আবদুস সাত্তার, আমিনুল ইসলাম ও জাহিদুর রহমান।

বিএনপির আরও কয়েকজন সাংসদ আজ-কালের মধ্যে জাতীয় সংসদে যোগ দিতে পারেন বলে জোর গুঞ্জন চলছে। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, এ নিয়ে দলের ভেতরে ক্ষোভ ও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। আর কোনো সাংসদ যাতে শপথ না নেন, সে জন্য নানাভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন দলের নীতিনির্ধারকেরা।

বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, বিজয়ী ব্যক্তিরা যাতে শপথ নেন, সে জন্য সরকার নানাভাবে চাপ তৈরি করছে এবং তাঁদের নজরদারিতে রেখেছে। এ অবস্থায় বিএনপির নির্বাচিতদের সঙ্গে দলীয় নেতাদের যোগাযোগ করাও দুরূহ হয়ে পড়েছে। আবার বিজয়ী কেউ কেউ দলের শীর্ষ নেতাদের এড়িয়ে চলছেন।

অবশ্য জাহিদুর রহমান সাংসদ হিসেবে শপথ নেওয়ার আগে নির্বাচিতদের সঙ্গে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কথা বলেছেন। দলীয় অবস্থান সম্পর্কে জানিয়েছেন। কিন্তু জাহিদুরের শপথের পর বিপাকে পড়া বিএনপি আবারও নির্বাচিতদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, জাহিদুরের পর আরও দু–একজন শপথ নিতে পারেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন গতকাল শনিবার এক কর্মসূচিতে দলীয় সংশয়ের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দু-একজন শপথ নিলে বিএনপির কোনো ক্ষতি হবে না।

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সাংসদ জাহিদুর রহমানের শপথ গ্রহণের প্রেক্ষাপটে গতকাল রাতে গুলশানের কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বৈঠকে বসেন। বৈঠকে জাহিদকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়। রাতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, স্থায়ী কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে জাহিদুর রহমানকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ দলের সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর মৃত্যুতে শোকপ্রস্তাব গৃহীত হয় বৈঠকে।

বিভিন্ন সূত্রের তথ্য, বিএনপি থেকে নির্বাচিত ছয়জন সাংসদের মধ্যে অন্তত পাঁচজন শিগগির সংসদে যোগ দিতে পারেন। এঁরা হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-ও আসনের মো. আমিনুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের মো. হারুনুর রশীদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উকিল আবদুস সাত্তার ও বগুড়া-৪ আসনের মো. মোশাররফ হোসেন। তাঁদের সঙ্গে সরকারি মহলের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে বলে দলীয় সূত্রের দাবি।

উকিল আবদুস সাত্তার ও হারুনুর রশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

মোকাব্বিরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ
দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সাংসদ হিসেবে শপথ নেওয়ায় মোকাব্বির খানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে গণফোরাম। নোটিশের জবাব দিতে তাঁকে ১০ দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু স্বাক্ষরিত ওই নোটিশে বলা হয়, শপথ নেওয়ার বিষয়টি অনৈতিক ও দলের সিদ্ধান্তের পরিপন্থী। শপথের বিষয়ে গণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের সম্মতি নেওয়ার বিষয়ে মোকাব্বির মিথ্যাচার করেছেন বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

গণফোরামের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোকাব্বির ২ এপ্রিল শপথ নেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন নেতা-কর্মীরা। সর্বশেষ গত শুক্রবার দলের বিশেষ কাউন্সিলে মোকাব্বিরের অংশ নেওয়া নিয়ে নেতা-কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এর আগে গণফোরাম থেকে নির্বাচিত আরেক সাংসদ সুলতান মোহাম্মদ মনসুর শপথ নিলে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।