শুদ্ধি অভিযানে শুদ্ধ হবে দল, কাউন্সিলরদের ভাবনা

আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় নেতা-কর্মীদের ভিড়। গতকাল দুপুরে।  ছবি: প্রথম আলো
আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় নেতা-কর্মীদের ভিড়। গতকাল দুপুরে। ছবি: প্রথম আলো

দুর্নীতিবাজ ও বিতর্কিত ব্যক্তি এবং অনুপ্রবেশকারীদের দল থেকে বাদ দিতে তৃণমূল পর্যন্ত শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে আসা কাউন্সিলররা। তাঁরা বলছেন, হাতে গোনা কয়েকজন নেতার জন্য দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হতে পারে না। শুদ্ধি অভিযানে দল শুদ্ধ হবে। তাই এই অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে।

আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে যোগ দিতে আসা ময়মনসিংহ, পাবনা, কুড়িগ্রাম, লক্ষ্মীপুরসহ ১২ জেলার ২৫ জন কাউন্সিলরের সঙ্গে দলের নতুন নেতৃত্ব, শুদ্ধি অভিযান নিয়ে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা সবাই শুদ্ধি অভিযানের পক্ষে নিজেদের জোরালো অবস্থান তুলে ধরে বলেন, দলের নেতা-কর্মীরা গ্রেপ্তার হলেও সমৃদ্ধ দেশ গড়ার স্বার্থে এর বিকল্প কিছু নেই।

সারা দেশ থেকে আওয়ামী লীগের ৭ হাজার ৭৩৭ জন কাউন্সিলর গতকাল শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। বেলা তিনটায় সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলেও সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ আশপাশের এলাকায় জড়ো হতে থাকেন কাউন্সিলর ও নেতা-কর্মীরা।

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, বিতর্কিতদের দলের সব স্তর থেকে বাদ দিতেই শুদ্ধি অভিযান উপজেলা পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। একই উপজেলার দপ্তর সম্পাদক কাজিম উদ্দিন বলেন, অভিযানে দলের নেতারা গ্রেপ্তার হলেও তাঁদের আপত্তি নেই। সন্ত্রাসী ও দুর্বৃত্তরা পড়বে অভিযানে।

মুষ্টিমেয় লোকের জন্য দল খারাপ হতে পারে না বলে মন্তব্য করেন লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক হারুনুর রশিদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দেশের স্বার্থে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, দলের কিছু খারাপ লোকের জন্য দেশ, জাতি ভুগতে পারে না।

শুদ্ধি অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে তা অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছেন পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. হাসান আলী খান, টাঙ্গাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. হযরত আলী ও কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক মো. ওমর ফারুক। তাঁরা সবাই কাউন্সিলর হিসেবে সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।

 কাউন্সিলররা আশা করছেন, শুদ্ধি অভিযানের মধ্য দিয়ে পরিবর্তনের যে বাতাস বইতে শুরু করেছে, কেন্দ্রীয় কমিটিতেও তার প্রভাব পড়বে। সৎ, যোগ্য, ত্যাগী নেতাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাখার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

একাধিক কাউন্সিলর বলেন, গত তিন বছরে অনেক জেলা-উপজেলা-ইউনিয়নে সম্মেলন হয়নি। শেষ মুহূর্তে তড়িঘড়ি করে বেশ কিছু জেলায় (৩২টি) সম্মেলন হয়েছে। জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন করে যাঁরা নির্বাচিত হয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসবেন, তাঁরা যেন তৃণমূলে নিয়মিত সম্মেলনের উদ্যোগ নেন।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার জন্য আওয়ামী লীগের কাউন্সিলরদের চাওয়াকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক—সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, রাজনীতি দুর্বৃত্তদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। সব দলেই শুদ্ধি অভিযান চালানো প্রয়োজন। একটি আমূল সংস্কার না হলে দেশের সামনে চরম বিপদের আশঙ্কা আছে।

শেখ হাসিনার বিকল্প নেই

আওয়ামী লীগের গত ৮ থেকে ১০টি জাতীয় সম্মেলনে কাউন্সিলর হিসেবে যোগ দেওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে কয়েকজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই। তিনি দলের সভাপতি থাকতে না চাইলেও কাউন্সিলররা তাতে রাজি হবেন না। এর আগেরবারও তিনি পদ ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। এবারও তিনি দলের সভাপতি হবেন।

কাউন্সিলররা জানান, আজ শনিবার সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে কাউন্সিলরদের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব নির্ধারিত হবে। তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন কাউন্সিলরদের প্রস্তাবিত নামের মধ্য থেকে নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক চূড়ান্ত করবেন। তবে দুই পদেই একক প্রার্থীর নাম প্রস্তাব হতে পারে বলে মনে করছেন কাউন্সিলররা। যে কারণে ভোটাভুটির প্রয়োজন হবে না ।

বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আকরাম হোসেন এ নিয়ে ১০ বার দলের জাতীয় সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দেশ ও দলের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই।

নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে নতুন কমিটি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার চমক দিতে পারেন বলে মনে করছেন কাউন্সিলররা। দল পরিচালনায় সৎ, যোগ্য নেতৃত্ব প্রত্যাশা করছেন পাবনার সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরীফ মুনিম আহমেদ।

কাউন্সিলররা বলেন, ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর এবং এক–এগারোর সময় অনেক নেতাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ভবিষ্যতে সংকট এলে তা মোকাবিলা করতে পারবেন এমন নেতৃত্ব এবারের সম্মেলনে খুঁজে বের করতে হবে।