সংখ্যালঘুরা কেন ভারতে চলে যাচ্ছে, জানতে চান ফখরুল

গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আজ দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
ছবি: প্রথম আলো

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার পরও কী কারণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরা ভারতে চলে যাচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এটাই কারণ যে, এ সময়ে তাদের ওপর নির্যাতনের পরিমাণ আরও বেড়ে গেছে এবং লক্ষ্যই হচ্ছে তাদের সম্পত্তি দখল করা, তাদের মালামাল লুট করা।

রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেন। সুনামগঞ্জের শাল্লায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার ঘটনায় বিএনপির প্রতিনিধিদলের প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এ সময় প্রতিনিধিদলের প্রধান বি​এনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ ও নির্বাহী পরিষদের সদস্য নিপুণ রায় উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় দাবি করে সংখ্যালঘুদের রক্ষক তারা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে তারা নাকি ভালো থাকে। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা নিজেরাই দেখছেন, এ সরকারের সময় সংখ্যালঘু নির্যাতন, যত সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটেছে, অতীতে কখনো ঘটেনি। রামু থেকে শুরু করে এ শাল্লা পর্যন্ত প্রতিটি ঘটনায় কিন্তু নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতারা।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘তা শুধু আজকের ঘটনা না, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের পরও কিন্তু তারা (আওয়ামী লীগ) একই ঘটনা ঘটিয়েছে। তখনো কিন্তু সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখল করার, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার ঘটনাগুলোর নেতৃত্ব দিয়েছিল আওয়ামী লীগের নেতারাই। সে জন্যই আমরা বারবার বলছি, আওয়ামী লীগ মুখে বলে তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে চায়, সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষা করতে চায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা শত্রু সম্পত্তি আইন বাতিল করেনি এবং তাদের ন্যায্য অধিকারগুলো দেয়নি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কেন আজকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার পরও কী কারণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকের ভারতে চলে যাচ্ছে? এ কারণে যে সংখ্যালঘুরা নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। তাদের সম্পত্তি দখল করা, মালামাল লুট করা হচ্ছে। বছর দুই আগেও আমার ঠাকুরগাঁওয়ের একজন প্রভাবশালী এমপি কয়েক শত একর জমি দখল করে নিয়েছেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আওয়ামী লীগ এ ঘটনাগুলো আড়াল করতে চায়।’

শাল্লায় যুবলীগের নেতা স্বাধীন মেম্বারের নেতৃত্বে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘অথচ উল্টো ওবায়দুল কাদের (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) বললেন, শাল্লার ঘটনায় বিএনপি নেতৃত্ব দিয়েছে। এর মূল লক্ষ্য জনগণকে বিভ্রান্ত করা। প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগ কখনোই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষে ছিল না।’

সংবাদ সম্মেলনে বি​এনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, বিএনপির প্রতিনিধিদল ২০ মার্চ শাল্লার ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম নোয়াগাঁও পরিদর্শন করে অবর্ণনীয় ধ্বংসলীলা দেখে। তাঁরা শাল্লা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গনেশ চন্দ্র দাস, বর্তমান চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার, স্থানীয় অশোক তালুকদার, রমাকান্ত দাস, শিপ্রা রানী ও মিনতিসহ গ্রামের অন্তত ৫০ ব্যক্তির সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন।

নিতাই রায় চৌধুরী দাবি করেন, প্রশাসনের গাফিলতি ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের প্রচ্ছন্ন মদদে এ ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে। প্রশাসন তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পরবর্তী সময়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে দুটি মামলা করা হয়। আসামিদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক।

নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে, তখনই সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন, বাড়ি–জমি দখল ও লুণ্ঠন শুরু হয়। এর আগে রামু, নাছিরনগর, পাবনার হেমায়েতপুর, নাটোরের বড়াইগ্রাম, ​ফরিদপুর, ভোলা, মাগুরাসহ সারা দেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। কোনো ঘটনারই এখন পর্যন্ত বিচার হয়নি। শাল্লার ঘটনায় নিরপরাধ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়, সে দিকে দৃষ্টি রাখতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।