করোনাকালেও অর্থনীতির চাকা সচল থেকেছে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ফাইল ছবি

পরপর তিনবার নৌকায় ভোট দিয়ে সরকার গঠনের সুযোগ দেওয়ায় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই কাজ আমরা সহজভাবে করতে পেরেছি তা কিন্তু নয়। এই যাত্রাপথ কখনো সুগম ছিল না। আমাদের অনেক প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হয়েছে। অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছে। আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা, গাড়িতে আগুন, অগ্নিসন্ত্রাস, হরতাল, অবরোধ—সেই অবরোধ বিএনপি এখনো প্রত্যাহার করেনি। উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টির জন্য তারা এসব করেছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসবের সঙ্গে ছিল নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এরপর এসেছে করোনাভাইরাস। সবকিছু সরকার মোকাবিলা করেছে। করোনাকালেও অর্থনীতির চাকা সচল থেকেছে। আজ রোববার একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, লক্ষ্য ঠিক করে কাজ করলে দেশ এগিয়ে যায়। সেটা তাঁর সরকার প্রমাণ করেছে। অনেক চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র থাকবে। সেগুলো মাথায় নিয়েই চলতে হবে। যত সমালোচনা হোক দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে তাঁরা কাজ করে যাবেন। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাবে।

গত শুক্রবার স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে যাওয়ার সুপারিশ পায় বাংলাদেশ। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) এ সুপারিশ করে। তবে বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে বের হতে ২০২৬ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আজ সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া সমাপনী ভাষণের প্রায় পুরোটা জুড়েই ছিল এ প্রসঙ্গ।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এ সুপারিশকে একটি ‘যুগান্তকারী অর্জন, অনন্য উত্তরণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে সরকার গঠনের আগে আওয়ামী লীগ রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা করেছিল। তখন অনেকে ধারণাই করতে পারেননি যে এমন উত্তরণ ঘটতে পারে। এ যাত্রায় অনেক সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছে, অনেক বাধা বিপত্তি এসেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ফলে যেমন অনেক সুবিধা পাওয়া যাবে, তেমনি স্বল্পোন্নত দেশের সব সুযোগ থাকবে না। তবে ২০২৬ সাল পর্যন্ত সময় চেয়ে নেওয়া হয়েছে করোনাকালীন ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য। এ অর্জনে বিশ্বে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

এ অর্জনে সরকারের ভূমিকা তুলে ধরার পাশাপাশি সামনের দিনের লক্ষ্যও তুলে ধরেন সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালে উন্নত–সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করা। এ জন্য আমরা পরিকল্পনা করেছি। এটা বাস্তবায়ন করতে পারলে বাংলাদেশের মানুষ সুন্দর জীবন পাবে।’

এ সময় আবেগাপ্লুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এ দেশ নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। এত অল্প সময়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের স্বীকৃতি পেয়েছিল। তার এত বছর পর এসে উন্নয়নশীল দেশ হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে ১০ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হতো।

বঙ্গবন্ধুর শাসনামলের পর বিভিন্ন সময় ক্ষমতায় থাকা সরকারগুলো দেশের উন্নয়নে কাজ করেনি মন্তব্য করে সংসদ নেতা বলেন, ‘জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল জেনারেল জিয়া, জেনারেল এরশাদ বা বেগম জিয়ার কথা বলেন তারা তো কেউ দেশকে উন্নত করতে চায়নি। ক্ষমতা তাদের কাছে ছিল ভোগের বস্তু ও বিলাসবহুল জীবন। আর তারা ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে দলে টেনে একটি শ্রেণি তৈরি করল। সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কেউ এগিয়ে আসেনি।’

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসার কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর দুই শিশুসন্তানকে বোনের কাছে রেখে তিনি দেশে ফিরেছিলেন একটি লক্ষ্য নিয়ে, যে স্বপ্ন নিয়ে বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করেছিলেন, সেটা পূরণ করা। বঙ্গবন্ধু দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। সে লক্ষ্য নিয়েই তিনি কাজ করছেন।

নিজের লক্ষ্যের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বারবার আঘাত এসেছে, কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বারবার বাঁচিয়েছেন। মানুষের সেবা করার সুযোগ পেয়েছেন বলেই বাংলাদেশকে একটি মর্যাদায় উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছেন।