গয়েশ্বরের বিতর্কিত মন্তব্য

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়
ফাইল ছবি

খালেদা জিয়ার পর এবার মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। গত শুক্রবার প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীরা নির্বোধের মতো মারা গেছেন। এ ধরনের কথা কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ বলতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুন।
রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ন্যাশনালিস্ট এক্স স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন ‘স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রুহুল কবির রিজভী’ শিরোনামে এক আলোচনা সভায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছিলেন, ‘পাকিস্তানের যারা বেতন-ভাতা খাইছে, শেষ দিন পর্যন্ত, তারা (শহীদ বুদ্ধিজীবী) নির্বোধের মতো মারা গেল, আমাদের মতো নির্বোধেরা প্রতিদিন তাদের শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে ফুল দেয়। না গেলে আবার পাপ হয়। ওনারা যদি এত বুদ্ধিমান হন, তাহলে ১৪ তারিখ পর্যন্ত নিজের ঘরে থাকে কী করে, একটু বলেন তো। আর তা ছাড়া নিজ নিজ কর্মস্থলে প্রতি মাসে পাকিস্তানের বেতন খাইল, এটাও তো কথা বলা যায়, যায় না? পাকিস্তান সরকারের তারা বেতন খাইল, তারা হয়ে গেল মুক্তিযোদ্ধা, আর যারা পালায়ে পালায়ে না খেয়ে বেড়াল তারা হয়ে গেল রাজাকার। তাই না?’

গয়েশ্বর বলেন, যাঁরা ২৫ মার্চ মারা গেছেন, তাঁরা মারা গেছেন না জানার কারণে। আর যাঁরা ১৪ ডিসেম্বর মারা গেছেন, তাঁরা অজ্ঞতার কারণে মারা যাননি। তাঁরা জ্ঞাতসারে অবস্থান করছিলেন।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে গয়েশ্বর রায়ের এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘গয়েশ্বর রায় পাকিস্তানিদের জবান ধার করে কথা বলেছেন। সুস্থ মস্তিষ্কের কোনো মানুষ এ কথা বলতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধের সময় সাড়ে সাত কোটি মানুষকেই কী সীমান্ত পাড়ি দিয়ে যেতে হতো। এ দেশের বুদ্ধিজীবী সমাজ এখানে থেকেই প্রতিরোধ করেছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছেন, লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তাঁরা তো পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করেননি।’ তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এসব বিকৃতি রোধের জন্যই আমরা ‘মুক্তিযুদ্ধ অস্বীকার প্রতিরোধ অপরাধ আইন’ তৈরির দাবি করেছি।
এর আগে গত ২১ ডিসেম্বর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। তাঁর ওই বক্তব্যকে সমর্থন জানান গয়েশ্বর। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া বলেছেন, বিতর্ক আছে। উনি কমও বলেননি, বেশিও বলেননি। বলেছেন সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে। এই বিতর্কের কথাটা ১৯৯১ সালে সংসদেও উঠেছিল। গয়েশ্বর বলেন, এখন আধুনিক প্রযুক্তি আছে। ইচ্ছা করলে সাত দিনের মধ্যে পরিসংখ্যান বের করা যায়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একটি জরিপ করারও আহ্বান জানান তিনি।
গয়েশ্বরের মতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হিথরো বিমানবন্দরে শহীদের সংখ্যা তিন লাখের জায়গায় তিন মিলিয়ন/৩০ লাখ বলেছিলেন। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে এমনটি হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে ৩ লাখ ৭৬ হাজার পরিবারের তালিকা আছে। বাকি ২৭ লাখ কোথায়?

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি বাহাউদ্দিন বাহারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাবেক সাংসদ সৈয়দা আসিফা আশরাফি প্রমুখ বক্তব্য দেন।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির মনে করেন, গয়েশ্বর রায় মুখ ফসকে এ কথা বলেননি। গত রাতে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গয়েশ্বরের চেয়ারপারসন কয়েক দিন আগে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করেছেন। এরপর গয়েশ্বর করলেন। তারা যেভাবে অপমান করলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং শহীদদের এভাবে পাকিস্তানি বা জামায়াতিরাও অপমান করেনি।
শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘এসব বক্তব্য দেওয়ার মাধ্যমে এরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে নাকচ করতে চায়। আমাদের সঙ্গে এখন পাকিস্তানের একটা কূটনৈতিক টানাপোড়েন চলছে। এ সময় খালেদা জিয়া পাকিস্তানিদের আশ্বস্ত করতে চান যে তিনি তাদের পক্ষে আছেন। বিএনপির মতো একটি বড় দল যদি তাদের পক্ষে থাকে, তবে তারা তো আশ্বস্ত হবেই।’

এ ধরনের কথা কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ বলতে পারে নাঃ মুনতাসির মামুন।