সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

আজ সকালে পরিবারের পক্ষ থেকে বনানী কবরস্থানে সৈয়দ আশরাফের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়
ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ রোববার। পারিবারিকভাবে ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে প্রয়াত এই নেতার মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হচ্ছে। আজ সকালে পরিবারের পক্ষ থেকে বনানী কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। সৈয়দ আশরাফের বোন ও কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ সৈয়দা জাকিয়া নূর ফুল দিয়ে সকালে শ্রদ্ধা জানান।

তবে গত বছর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাঁর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানো হলেও এবার জানানো হয়নি।

২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন সৈয়দ আশরাফ। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর।

এক-এগারো–পরবর্তী সময়ে সৈয়দ আশরাফ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০০৯ সালে দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১২ সালের সম্মেলনে তিনি টানা দ্বিতীয়বার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি। ২০১৬ সালের সম্মেলনে তাঁকে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য করা হয়।

সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কিশোরগঞ্জেও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকায় শ্রদ্ধা জানানো শেষে দোয়া মোনাজাতেরও আয়োজন করা হয় পরিবারের পক্ষ থেকে। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কিশোরগঞ্জে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। আয়োজন করা হয়েছে স্মরণসভা ও আলোচনা সভারও। আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন এসব কর্মসূচির আয়োজন করছে।

সৈয়দ আশরাফের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ সদরের বীরদামপাড়ায়। আজ রোববার বাদ জোহর দোয়া, কোরআন খতম ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এলাকাবাসী। জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. শরিফুল ইসলাম জানান, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম স্মৃতি সংসদের আয়োজনে তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রোববার সকালে সদর উপজেলা পরিষদে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। তা ছাড়া বাদ জোহর শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সামনে ও ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদসহ অন্যান্য মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

বাদ আসর কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। তবে কেন্দ্রীয়ভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো কমর্সূচি দেওয়া হয়নি।

সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কিশোরগঞ্জে স্মরণসভা– আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
ছবি: সংগৃহীত

১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারে পিতা সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ডের পর যুক্তরাজ্য চলে যান সৈয়দ আশরাফ। যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। ১৯৯৬ সালে দেশে ফিরে আসেন এবং কিশোরগঞ্জ সদর আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সৈয়দ আশরাফ। পরে তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০০১ সালের ১ অক্টোবরে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় সৈয়দ আশরাফ নির্বাচিত হন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০১৫ সালের ১৬ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। তিনি এক কন্যার জনক। তাঁর স্ত্রী শিলা ইসলাম ২০১৭ সালের অক্টোবরে মারা যান। সৈয়দ আশরাফ ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক।

সৈয়দ আশরাফ ছাত্ররাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ভারতের দেরাদুনে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন সৈয়দ আশরাফ।