হরতাল ডেকে পথে ছিল না জামায়াত
মানবতাবিরোধী অপরাধে দলের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখার প্রতিবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছিল জামায়াতে ইসলামী। তবে রাজধানী ঢাকাসহ অধিকাংশ জেলাতেই মাঠে নামেননি জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা। বরং বেশির ভাগ এলাকায় সড়ক-মহাসড়ক নিয়ন্ত্রণে নেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
রাজধানীর কোথাও কোনো মিছিল, সমাবেশ কিংবা পিকেটিং করতে দেখা যায়নি জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের। হরতাল সমর্থকেরা না থাকলেও ফার্মগেট, মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর, শাহবাগ মোড়সহ নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
বিভিন্ন স্থানে পুলিশের তল্লাশিকেন্দ্র বসানো হয়েছিল। পুলিশের পাশাপাশি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) টহল দিতে দেখা গেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মুনতাসিরুল ইসলাম গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, হরতালে নাশকতার কোনো ঘটনা ঘটেনি। কাউকে গ্রেপ্তারও করা হয়নি।
রাজধানীতে অন্যান্য দিনের মতো গতকাল সকাল থেকে কর্মব্যস্ত লোকজনকে বের হতে দেখা যায়। দোকানপাট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ছিল। বাস, অটোরিকশা, রিকশাসহ গণপরিবহনের চলাচল ছিল স্বাভাবিক। ফার্মগেট, বনানী, শ্যামলী, মিরপুর, গুলিস্তানসহ ব্যস্ত এলাকায় যানজটেও বসে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। অবশ্য প্রাইভেট কার কিছুটা কম চলাচল করে।
তবে বেলা ১১টার আগ পর্যন্ত গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ আন্তজেলা বাস টার্মিনাল থেকে অল্পসংখ্যক বাস ঢাকা ছেড়ে যায়। তবে হরতালে ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক ছিল।
চট্টগ্রাম নগরে মাঠে ছিলেন না জামায়াতের নেতা-কর্মীরা। রাজপথ দখলে নেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নেন। বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা নগরজুড়ে টহল দেন। সকালে নগরের চেরাগীপাহাড় মোড়ে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা হরতালবিরোধী মিছিল-সমাবেশ করেন। সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম বেলা ১১টায় নিউমার্কেটের অদূরে দোস্ত বিল্ডিং চত্বরে হরতালবিরোধী সমাবেশ করে। জেলার পটিয়ায় হরতালবিরোধী মিছিল ও সমাবেশ করে পৌর আওয়ামী লীগ।
তবে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার দেওদিঘি বাজার এলাকায় গতকাল ভোরে হরতালের সমর্থনে শিবিরের কর্মীরা ঝটিকা মিছিল বের করেন। পুলিশ আসার আগেই তাঁরা সেখান থেকে পালিয়ে যান।
বরিশালে হরতাল সমর্থনে সকাল সাতটায় নগরের কাশিপুর বরিশাল-ঢাকা-মহাসড়কের চৌমাথা এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেছে জামায়াত-শিবির। পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি।
চাঁদপুরে হরতাল চলাকালে ভোরে শহরের ওয়্যারলেস এলাকায় চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের পাশে দুর্বৃত্তরা বিদ্যুতের মূল খুঁটির নিচে আগুন দিয়েছে। খবর পেয়ে দ্রুত পুলিশ এসে আগুন নিভিয়ে ফেলে। চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, পুরোনো ময়লা-আবর্জনায় কেউ হয়তো আগুন দিয়েছে। এটা নাশকতামূলক তৎপরতা নয়।
নওগাঁয় গতকাল ভোরে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে শিবিরের তিন কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন আলিমউদ্দিন, জসিমউদ্দিন ও রিপন প্রামাণিক। তাঁরা নওগাঁ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী।
ফরিদপুরে ঢাকা ছাড়া অন্যান্য আন্তজেলা রুটে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। জামায়াত-শিবিরের কোনো নেতা-কর্মীকে পিকেটিং করতে দেখা যায়নি। জেলা জামায়াতের আমির আবদুত তাওয়াব বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে আলফাডাঙ্গা উপজেলায় জামায়াতের দুই কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শেরপুর ও সিরাজগঞ্জে হরতালে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ রুটে সব রকম যানবাহন চলাচল ছিল স্বাভাবিক। হরতালের সমর্থনে জেলার কোথাও পিকেটিং হয়নি। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মহাসড়কসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল জোরদার ছিল।
নীলফামারীতে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও জেলার অভ্যন্তরে যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক। খোলা ছিল দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
এ ছাড়া কুড়িগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেটেও নিরুত্তাপ হরতাল পালিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ জেলাগুলোতে হরতালবিরোধী মিছিল করে।