হাইমচরে আ.লীগের সংঘর্ষ, দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ আহত ২০

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচারকে ঘিরে চাঁদপুরের হাইমচরে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষে পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নূর হোসেন পাটোয়ারী ও বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোতালেব জমাদারসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।

আজ সোমবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত দফায় দফায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৯ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। আহতদের মধ্যে মোতালেব জমাদারকে বিকেলে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অন্যদের হাইমচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের আজ দুপুরে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরপর প্রতীক নিয়ে প্রার্থীরা নির্বাচনী এলাকায় প্রচারে নামেন। বেলা একটায় হাইমচরের তেলির মোড়ে বর্তমান চেয়ারম্যান নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নূর হোসেনের সমর্থকেরা মিছিল বের করে। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আনারস প্রতীকের মোতালেব জমাদার সমর্থকদের সঙ্গে তাদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় নূর হোসেন ও তাঁর সমর্থক নীল কমল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন সরদারসহ সাত থেকে আটজন আহত হন। এ ঘটনার পর বেলা আড়াইটায় হাইমচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে বিদ্রোহী প্রার্থী মোতালেব জমাদার গাড়ি নিয়ে উপস্থিত হলে নূর হোসেনের সমর্থকেরা তাঁর ওপর হামলা চালায়। এতে লাঠি ও ইটপাটকেলের আঘাতে মোতালেব জমাদারের মাথা ফেটে যায়। এ সময় উভয় পক্ষে প্রায় আধঘণ্টা সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এই পর্যায়ে উভয় পক্ষের আরও ১০ থেকে ১২ জন আহত হন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এই ঘটনায় হাইমচর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুজন কান্তি বড়ুয়াও আহত হন।

স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাইমচর উপজেলা বাজারের দোকানপাট দুই ঘণ্টার মতো বন্ধ থাকে। এ সময় সংশ্লিষ্ট এলাকায় সাধারণ লোকজনও রাস্তায় বের হওয়া বন্ধ করে দেয়।

চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহেদ পারভেজ চৌধুরী বলেন, হাইমচরের পরিস্থিত কিছুটা স্বাভাবিক হলেও থমথমে পরিস্থিতি কাটেনি। এই ঘটনায় এখনো কাউকে আটক বা কোনো মামলা হয়নি।

হাইমচরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) সুজন কান্তি বড়ুয়া জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ নয় রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েছে। এই মামলায় ইটপাটকেলের আঘাতে তিনি আহত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।

চাঁদপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুজা উদ দৌলা বলেন, মোতালেব জমাদ্দারের বুকের একটি হাড় ভেঙে গেছে। তাঁর মাথাও আঘাত রয়েছে। অন্যদিকে প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, এই সংঘর্ষের ঘটনায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নূর হোসেনের হাতে আঘাত লেগেছে। এতে তাঁর হাত থেকে রক্ত ঝরে। তবে তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়ার পর নিজ পক্ষের কর্মসূচিতে অংশ নিতে পেরেছেন।

বিদ্রোহী প্রার্থী মোতালেব জমাদ্দারের নাতি আকিব জমাদ্দার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর নানা উপজেলা হাসপাতালের সামনে এলে ওই হামলার শিকার হন।

এ ব্যাপারে কথা বলতে নূর হোসেনকে ফোন দেওয়া হয়। তিনি ব্যস্ত আছেন, পরে কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন।

প্রসঙ্গত, আগামী ১৩ জানুয়ারি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) হাইমচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন তিনজন। অন্য প্রার্থী হলেন, বিএনপির ধানের শিষ প্রতীকের ইসহাক খোকন।