১২ জেলায় বিদ্রোহীরা জয়ী

>

ঠাকুরগাঁওয়ে জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা মহিলা দলের আহ্বায়ক ফোরাতুন নাহার। ছবিটি গতকাল ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র থেকে তোলা l প্রথম আলো
ঠাকুরগাঁওয়ে জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা মহিলা দলের আহ্বায়ক ফোরাতুন নাহার। ছবিটি গতকাল ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র থেকে তোলা l প্রথম আলো

জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে ভোটের ফল*

আওয়ামী লীগ ২৫, বিদ্রোহী ১২, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২১

* নির্বাচন হয়েছে ৬১ জেলায়। দুটিতে স্থগিত। একজন স্বতন্ত্র জয়ী। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ীরা আ.লীগের

জেলা পরিষদ নির্বাচনের একতরফা ভোটেও ১৩ জেলায় চেয়ারম্যান পদে হেরেছেন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীরা। এসব জেলার ১২টিতে বিজয়ীরাও আওয়ামী লীগের নেতা, তবে বিদ্রোহী তকমা নিয়ে জিতেছেন। তাঁদের জয়ী করার পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেছেন স্থানীয় মন্ত্রী-সাংসদেরা। একটি জেলায় ​জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।

গতকাল বুধবার দেশের ৬১টি জেলা পরিষদের ভোট গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ভোট স্থগিত আছে বগুড়া ও কুষ্টিয়ায়। তবে সেখানে সদস্য পদে ভোট হয়েছে। এর আগে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত ২১ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। ফলাফলে দেখা গেছে, চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত ব্যক্তিরা জয়ী হয়েছেন ২৫ জেলায়। সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত চেয়ারম্যান হয়েছেন ৪৬ জন। অন্য ১২ জন আওয়ামী লীগের সাবেক ও বর্তমান নেতা।

বিএনপিসহ বড় দলগুলো জেলা পরিষদের নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তবে ৩০ জেলায় আওয়ামী লীগের দলীয় সমর্থিত প্রার্থীর বাইরেও ৫০ জন বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। গতকাল পর্যন্ত ৫৯ জেলায় একজন নারী প্রার্থী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নাম ছাফিয়া খানম, তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন।

কয়েক দিন ধরে এই নির্বাচন উপলক্ষে টাকা লেনদেনের অভিযোগ ওঠে। মন্ত্রী-সাংসদদের অনেকেই আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। ভোটার সংখ্যা কম হওয়ায় প্রার্থীদের অনেকেই টাকা দিয়ে ভোট কেনার চেষ্টা করেন। টাকা লেনদেনের ঘটনায় গ্রেপ্তার ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। বিভিন্ন জেলায় ভোটারদের বিভিন্ন উপহার দেওয়া হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের টিআর, কাবিখার বরাদ্দ দিয়ে বিনিময়ে ভোট কেনার চেষ্টা করা হয়।

এই নির্বাচনের ভোটার ছিলেন ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। তাঁদের ভোটে জেলা পরিষদের একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সাধারণ সদস্য ও পাঁচজন সংরক্ষিত নারী সদস্য নির্বাচিত হলেন।

গতকাল দিনভর আওয়ামী লীগের নেতারা দলটির ধানমন্ডি কার্যালয়ে বসে জেলা পরিষদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচনের খবর জানতে চাইলে সন্ধ্যায় দলের একজন দায়িত্বশীল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফল আমরা আমরাই। তবে কিছু জেলায় দল হেরেছে, জিতেছেন মন্ত্রী-এমপিরা।’ ব্যাখ্যা করে ওই নেতা বলেন, কিছু জেলায় মন্ত্রী-সাংসদেরা বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষ নেওয়ায় দলীয় প্রার্থী জয়ী হতে পারেননি।

আরেকজন নেতা জানান, কিছু জেলায় বিএনপি-জামায়াতের প্রতিনিধিরা বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষ নেওয়ার কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছে। আবার কোথাও কোথাও সাবেক জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করা প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁদের দুর্নীতি-অনিয়ম ছাড়াও দলের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে দূরত্ব কাল হয়েছে।

নির্বাচন শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদের নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোটারের সংখ্যা কম থাকায় গোপনীয়তা রক্ষা করা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ ব্যবস্থা হিসেবে কোনো ভোটার যাতে প্রকাশ্যে ব্যালটে সিল না মারেন এবং ব্যালটের ছবি তুলতে না পারেন, সে জন্য বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়।

অন্যদিকে নির্বাচন শেষে সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের চর্চা অব্যাহত থাকবে।

নির্বাচন কমিশনের হিসাবে মোট ভোটার ছিল ৬৩ হাজার ১৪৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪৮ হাজার ৩৪৩ এবং নারী ১৪ হাজার ৮০০ জন। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ১৪৬, সংরক্ষিত সদস্য পদে ৮০৬ এবং সাধারণ সদস্য পদে ২ হাজার ৯৮৬ জন প্রার্থী ছিলেন। মোট ভোটকেন্দ্র ৯১৫টি।

মন্ত্রী-সাংসদ জয়ী: পিরোজপুরে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী মো. শাহ আলম পরাজিত হয়েছেন। এখানে বিজয়ী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিদ্রোহী প্রার্থী মহিউদ্দিন মহারাজ। শাহ আলম জেলা পরিষদের প্রশাসক ছিলেন। পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হাকিম হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাংসদ এ কে এম এ আউয়াল দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহ আলমের বিপক্ষে কাজ করেছেন। নির্বাচন কমিশন ও স্পিকারের নির্দেশ অমান্য করে আউয়াল বেশ কিছুদিন ধরে এলাকায় অবস্থান করছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। উল্লেখ্য, বিজয়ী মহারাজ পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সহকারী একান্ত সচিব।

মঠবাড়িয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আশরাফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। দলের একটি অংশের ভোট না পাওয়ায় আমাদের প্রার্থী হেরেছেন।’

জামালপুরে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জয়ী ফারুক আহম্মেদ চৌধুরীকে দলের সমর্থন দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করেছিল জেলা আওয়ামী লীগ। তাঁর পক্ষে অবস্থান ছিল বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের। কিন্তু কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সমর্থন দেয় এইচ আর জাহিদ আনোয়ারকে। এরপরই কেন্দ্র-সমর্থিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় মির্জা আজমসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটা বড় অংশ। জয়ী বিদ্রোহী প্রার্থীর চেয়ে দলীয় সমর্থন পাওয়া প্রার্থী অর্ধেক ভোট পেয়েছেন।

পঞ্চগড়ে আওয়ামী লীগের সাংসদ নুরুল ইসলাম সুজন-সমর্থিত প্রার্থী জয়ী হতে পারেননি। এই জেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ছিলেন আটজন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের চারজন। জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. আমানুল্লাহ। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আবু বকর সিদ্দিক। দুই প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান মাত্র ১৩। অথচ স্থানীয় সাংসদ নুরুল ইসলামের সমর্থন পাওয়া আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী মির্জা সারোয়ার হোসেন পেয়েছেন ১১৯ ভোট। পঞ্চগড়ের আরেক সাংসদ জাসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান-সমর্থিত এমরান আল আমিন পেয়েছেন ১০১ ভোট।

চুয়াডাঙ্গায় সাংসদ আলী আজগার টগরের সমর্থনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী শেখ শামসুল আবেদীন খোকন বিজয়ী হয়েছেন। তিনি ২৬৬ ভোট পেয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ-মনোনীত প্রার্থী দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান পেয়েছেন ২৪৭ ভোট। হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার তাঁকে সমর্থন করেছিলেন।

নড়াইল জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সোহরাব হোসেন বিশ্বাস বিজয়ী হয়েছেন। আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী সৈয়দ আইয়ুব আলী ছিলেন নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী। স্থানীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে ছিল। নড়াইল-১-এর সাংসদ কবিরুল হক বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে ছিলেন। পৌরসভা নির্বাচনেও সাংসদ নিজ দলের প্রার্থীর বিপক্ষে ছিলেন।

শেরপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিশাল ব্যবধানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করে বিজয়ী হয়েছেন ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবীর। হুমায়ুন পেয়েছেন ৫৬৩ ভোট। অপরদিকে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার পাল পেয়েছেন ১৭৬ ভোট। অর্থাৎ ৩৮৭ ভোটে তিনি (চন্দন) পরাজিত হয়েছেন।

সাবেক প্রশাসকের ভরাডুবি: মেহেরপুর আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরেই বহুধাবিভক্ত। এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থীই চারজন। এর মধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থী গোলাম রসুল জয়ী হয়েছেন। পরাজিত হয়েছেন সাবেক প্রশাসক মিয়াজান।

জানা গেছে, দলের সমর্থন পেয়েছেন সাবেক প্রশাসক মিয়াজান আলী। প্রশাসক হিসেবে জনপ্রিয়তা দেখাতে পারেননি। এর ওপর মেহেরপুরের দুজন সাংসদ দুই মেরুতে অবস্থান নেন। সাংসদ মকবুল হোসেন দলীয় প্রার্থী মিয়াজানের পক্ষ নেন। আর ফরহাদ হোসেন দোদুল সমর্থন দেন বিদ্রোহী প্রার্থী জিয়াউদ্দিনকে। দুই সাংসদের প্রার্থীই পরাজিত হয়েছেন। জয়ী হন এই দুই প্রার্থীর বাইরে থাকা গোলাম রসুল। তাঁকে সমর্থন দিয়েছিলেন মেহেরপুর-১ আসনের সাবেক সাংসদ জয়নুল আবেদীন।

জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক প্রথম আলোকে বলেন, হয়তো দল-সমর্থিত ব্যক্তি যখন জেলা প্রশাসক ছিলেন সে সময় তাঁর আমলনামা খারাপ ছিল। এ জন্য তিনি হেরেছেন।

সুনামগঞ্জে বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা মুকুট জয়ী হয়েছেন। দলের সমর্থন পাওয়া সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক এনামুল কবীর ইমন অর্ধেক ভোট পেয়েছেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, নুরুল হুদা মুকুট ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন। দলের সাধারণ সম্পাদক পদ চেয়েও পাননি। ফলে তৃণমূলের নেতারা তাঁর প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। এ ছাড়া প্রশাসক থাকা অবস্থায় ইমনের সঙ্গে নেতাদের দূরত্ব তৈরি হয়।

নীলফামারীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়নাল আবেদীন ৪৪২ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। পরাজিত হয়েছেন দলের সমর্থন পাওয়া ও সাবেক প্রশাসক মমতাজুল হক। স্থানীয় লোকজন মনে করছেন, প্রশাসক থাকাকালে দলীয় নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন না করার কারণে তিনি পরাজিত হয়েছেন। জয়নাল আবেদীন জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা হিসেবেও কিছুটা সুবিধা পেয়েছেন।

অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে গাইবান্ধা জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থক প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছে। এখানে চেয়ারম্যান পদে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ শামস-উল-আলমকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু বিদ্রোহী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক মণ্ডল। ভোট ভাগাভাগি হওয়ার কারণে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর পরাজয় ঘটে। স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান সরকার ৩৮৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ-সমর্থিত সৈয়দ শামস-উল-আলম পান ৩৭০ ভোট এবং একই দলের মোজাম্মেল হক মণ্ডল পান ৩০৬ ভোট।

সরকারবিরোধীরা বিদ্রোহীর পক্ষে: রাজশাহী ও চাঁদপুরে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীর কপাল পুড়েছে বিএনপি-জামায়াতের ভোটে। রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী মাহবুব জামান ৩২৭ ভোটে ধরাশায়ী হয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সরকারের কাছে। সেখানে মোট ভোটার ১ হাজার ১৭১ জন। বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত ভোটার পাঁচ শতাধিক। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, এই ভোটগুলোর প্রায় সবই পেয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী। এমনকি আওয়ামী লীগেরও অনেক ভোট গেছে বিদ্রোহী প্রার্থীর বাক্সে।

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আকবর আলী বলেন, তাঁদের দলীয় লোকজন স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। বিএনপির ভোটাররা কাকে ভোট দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভোট দুই দিকেই ভাগ হয়ে গেছে। আবার আওয়ামী লীগের লোকজনও সবাই তাঁদের দলের সমর্থিত প্রার্থীকে ভোট দেননি।

চাঁদপুরে আওয়ামী লীগ কাউকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন করেনি। তিনজন প্রার্থী সেখানে দাঁড়িয়েছিলেন। এর মধ্যে ওচমান গনি পাটোয়ারীকে সমর্থন দেন জেলার চারজন সাংসদ। আর নুরুল আমিন রুহুলকে সমর্থন দেন সাবেক মন্ত্রী দীপু মনি, মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও রফিকুল ইসলাম। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগও অনানুষ্ঠানিকভাবে রুহুলকেই সমর্থন দিয়েছিল। এখানে ওচমান গনি পাটোয়ারী বিজয়ী হন।

স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, বিএনপির ভোটও ওচমানের পক্ষে যায়।

নির্বাচন শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আমরা আমাদের মেয়াদে অনেক নির্বাচন করেছি। আনফরচুনেটলি গুটিকয়েক জায়গায় অনিয়ম, ব্যতিক্রম বা শান্তি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। কিছু পকেটে নির্বাচন করা ছিল বড় সমস্যা। তারপরও বলব নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে।’