২৬ মার্চের সহিংসতার ঘটনা সরকারের পরিকল্পিত: মির্জা ফখরুল

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
ফাইল ছবি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে গত ২৬ মার্চ যে ঘটনা ঘটেছে, এটা পুরোপুরি সরকারের পরিকল্পিত। এ অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ২৬ মার্চ তাঁদের (সরকার দলীয় নেতা–কর্মী) উসকানি ছিল সবচেয়ে বেশি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছিল, হাটহাজারীতেও ছিল। তাঁরা পরিস্থিতিটা তৈরি করেছেন। এ পরিস্থিতি তৈরি করে তাঁরা বিরোধী দলের ওপর চড়াও হয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এসব অভিযোগ করেন।

২৬ মার্চ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এলাকায় হেফাজতের কর্মী ও মুসল্লিদের একটি অংশের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নরেন্দ্র মোদির আগমনের প্রতিবাদে সেদিন বায়তুল মোকাররম এলাকায় বিক্ষোভ করছিলেন হেফাজতের কর্মী ও মুসল্লিরা। পরে পুলিশও বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হয়।

ঢাকার ঘটনার এই রেশ বিকেলে গিয়ে পড়ে চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। সেখানেও সহিংসতার ঘটনা ঘটে।

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, ২৬ মার্চের ঘটনা তৈরি করে বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য এখন তারা এটাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে। বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করতে আরেকটা প্রক্রিয়া তারা হাতে নিয়েছে।

বিএনপির এই নেতার অভিযোগ, ফরিদপুরের সালথায় ১৭ হাজার লোকের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাঁদের গ্রামছাড়া করা হয়েছে। বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে সারা দেশে হয়রানি করা হচ্ছে।

মির্জা ফখরুলের ভাষ্য, ‘এভাবে পরিকল্পিতভাবে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সেখানে কোনো দিন কোনো কর্তৃত্ববাদী সরকার, একনায়কতান্ত্রিক সরকার বা ফ্যাসিবাদী সরকার টিকে থাকতে পারে নাই। এটা ইতিহাসে নাই।’

খালেদা জিয়ার অবস্থা আজ দুপুর পর্যন্ত স্থিতিশীল আছে বলে জানান বিএনপির মহাসচিব। করোনার এ সময়ে খালেদা জিয়ার পূর্ণাঙ্গ জামিনের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

সরকারের বিধিনিষেধের এ সময় সীমিত আকারে ব্যাংক খোলা রাখা যেত বলেও মত দেন মির্জা ফখরুল। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারের কোনো সমন্বয় নেই। কোনো পরিকল্পনা নেই। কোনো রোডম্যাপ নেই।

কাল থেকে শুরু হতে যাওয়া লকডাউন নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই যে সাত দিন দিয়েছে, এরপর কী হবে? যারা দিন আনে দিন খায়, তাদের জন্য কী ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের তো ঘরে রাখতে পারবেন না। যার পেটে ভাত নেই, করোনা দিয়ে কী করবে সে, লকডাউন দিয়ে কী করবে। এই শ্রেণির মানুষের সংখ্যা তো অনেক।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, গতবারও দেখেছি, যারা বাসাবাড়িতে কাজ করেছেন, তারা ভিক্ষাবৃত্তির জন্য রাস্তায় বেরিয়ে এসেছেন।

সব দলের লোকদের সম্পৃক্ত করে জাতীয় কমিটি গঠনের মাধ্যমে করোনা মোকাবিলার আহ্বান জানান বিএনপির এই শীর্ষ নেতা। মির্জা ফখরুল বলেন , সরকার জনগণকে সম্পৃক্ত করছে না একটা কারণে যে তারা লুটপাট করবে। হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করে নিয়ে যাবে।

করোনার তথ্য নিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে এবং ভুল ধারণা দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, তারা (সরকার) যে বলছে এতজন সংক্রমিত। পরীক্ষা না হলে শনাক্ত হবে কীভাবে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথাটা মিলে যায়, ‘নো টেস্ট, নো করোনা’। এখন তো তা–ই হচ্ছে। ফখরুলের অভিযোগ, তাঁর বাসার তিনজনকে চেষ্টা করেও তিনি করোনার পরীক্ষা করাতে পারেননি।

সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন রমজানের আগে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর বিষয়েও কথা বলেন মির্জা ফখরুল। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে বাজার সিন্ডিকেটগুলো সবাই আওয়ামী লীগের তথা সরকারের মদদপুষ্ট লোকজন দিয়ে পরিচালিত। এরাই যোগসাজশ করে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। আগে মানুষ টিসিবির ট্রাকে কম মূল্যে জিনিসপত্র পাবে বলে আশা করত। কিন্তু এখন টিসিবিও নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে।

বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, বর্তমান ভোটারবিহীন অবৈধ সরকারের সময় যে ধরনের লাগামহীন দুর্নীতি চলছে, মূলত তারই ধারাবাহিকতায় লুটেরা সরকারের সুবিধাভোগী দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী চক্রের হাতে দৈনন্দিন ভোগ্যপণ্য বাজার ব্যবস্থাপনাও জিম্মি হয়ে আছে। এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণে বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা দূর করার বিকল্প নেই।