'সার্বিক ঐক্যের' চেষ্টা চালাচ্ছেন কাদের সিদ্দিকী

কাদের সিদ্দিকী
কাদের সিদ্দিকী

জোট গঠন আর সম্প্রসারণের নানা মেরুকরণে এই মুহূর্তে কাদের সিদ্দিকীকে নিয়ে চলছে জোর আলোচনা। এখন পর্যন্ত কোন জোটে যাবেন, সেটা পরিষ্কার করেননি কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী। ড. কামালের ঐক্যফ্রন্ট আর বি চৌধুরীর যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনা করেছেন তিনি। তাঁর চাওয়া বি চৌধুরী ও ড. কামালসহ সবাইকে নিয়ে সার্বিক ঐক্য।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোন জোটে তাঁরা যোগ দেবেন, সেটা নিয়ে কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাজ করছে। এর পেছনে দলের নেতা–কর্মীদের চাপের বিষয়টিই মূল ভূমিকা রাখছে। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত ঐক্যফ্রন্টে বিএনপি থাকায় নেতা–কর্মীরা নেতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

দলের নেতা–কর্মীদের নেতিবাচক মনোভাবের পেছনে রয়েছে বাসাইল পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির ভূমিকা। সেখানে মাত্র তিন শতাধিক ভোটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হন। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নেতা–কর্মীদের ধারণা, বিএনপি সেখানে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগকে সমর্থন দিলেও দলটির একজন কেন্দ্রীয় নেতার ভূমিকার কারণে বিএনপির কেউই মাঠে নামেননি। স্থানীয় একটি নির্বাচনে বিএনপির এ ভূমিকার কারণে জাতীয় পর্যায়ে বিএনপিকে বিশ্বাস করতে ভয় পাচ্ছেন দলের কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নেতা–কর্মীরা। তাই কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে এ বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছেন স্থানীয় নেতারা।

দলের একটি সূত্র বলছে, তাঁদের দলের নেতা–কর্মীদের একটি বড় আবেগ বঙ্গবন্ধুকেন্দ্রিক। কিন্তু জাতীয় ঐক্যের প্রধান শরিক বিএনপির অনেকের মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নেতিবাচক ধারণা থাকায় সেখানে যোগ দেওয়ার বিষয়ে দ্বিধা–দ্বন্দ্ব রয়েছে। তবে ড. কামাল হোসেন সেখানে থাকায় ওই দ্বিধা কিছুটা হলেও কমেছে।

দলের আরেকটি সূত্র জানায়, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান ড. কামাল হোসেন হওয়ায় দলটির শীর্ষ নেতাসহ অনেকেই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সহমর্মী। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ড. কামাল হোসেন তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকেছেন।

এরই মধ্যে কাদের সিদ্দিকী আলোচনা করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা গতকাল বুধবার কাদের সিদ্দিকীর মোহাম্মদপুরের বাসায় বৈঠক করেছেন। বৈঠক শেষে ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বহু আগে থেকেই আমাদের প্রতি কাদের সিদ্দিকীর সমর্থন আছে। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ আমাদের সঙ্গে থাকবে কি না, তা ৩ নভেম্বর জানা যাবে।’

এর আগে গতকাল মতিঝিলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কাদের সিদ্দিকী জানান, তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান জানতে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। জেলহত্যা দিবসের ওই আলোচনা অনুষ্ঠানেই পরিষ্কার করা হবে আসন্ন নির্বাচনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ কী পদক্ষেপ নেবে বা কোন জোটে যাবে। আলাচনা সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন ড. কামাল হোসেন। তিনি আভাস দেন, এই আলোচনায় বি চৌধুরীকেও নিয়ে আসবেন। দেশে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তিনি সবাইকে নিয়ে একটি সার্বিক ঐক্য চান।

সূত্র জানিয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইলে নিজের নির্বাচনী এলাকায় গেছেন কাদের সিদ্দিকী। সেখানে দলীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলবেন রাজনৈতিক নানা বিষয়ে। রাজনৈতিক অবস্থান কী হতে পারে, সে বিষয়েও আলোচনা হবে সেখানে। পরে ঢাকায় দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সূত্রটি মনে করছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বি চৌধুরীর যুক্তফ্রন্টের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা চালাচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে তাঁর সার্বিক ঐক্যের ধারণা সফল করার চেষ্টা করবেন প্রবীণ এ রাজনীতিক। দুই পক্ষকে এক করা সম্ভব না হলে তিনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেবেন, নাকি তাঁদের সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচিতে থাকবেন, সেটার জন্য অপেক্ষা করতেই হবে। গতকালের সংবাদ সম্মেলনে কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, ‘প্রতিমুহূর্তে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তিত হচ্ছে। রাজনীতিতে কোনো শেষ কথা নেই।’

কাদের সিদ্দিকী আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে আমার চাওয়া একটি বিশ্বাসযোগ্য, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। ওই নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আবারও ক্ষমতায় আসেন আমার আপত্তি নেই। তাই সবাইকে নিয়ে ঐক্য চাই। সার্বিক ঐক্যের এই চেষ্টা আমি চালিয়ে যাব। আমার অবস্থান জানাব ৩ নভেম্বর।

এদিকে সংলাপের উদ্যোগকে সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে মনে করছে কৃষক শ্রমিক জনতা দল। দলের যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, সংলাপের মতো ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত ও সাহসী পদক্ষেপ বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা বলেই নিতে পেরেছেন। তিনি বলেন, এ সংলাপের জন্য দলের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীকে ৬৪ দিন ফুটপাতে ও ৩০৮ দিন ঘরের বাইরে থাকতে হয়েছে। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংলাপে বসার এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অবরোধ প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলেন কাদের সিদ্দিকী।

জানতে চাইলে কাদের সিদ্দিকী বলেন, সংলাপ শুরু হওয়াই ইতিবাচক একটি দিক। সংলাপ থেকে কিছু না এলেও বলা যাবে গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে। কারণ, সংলাপের ঘোষণা আসার পর থেকে কিছুটা স্বস্তি, কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছে।