তাহাজ্জুদের শ্রেষ্ঠ সময়

.
.

রমজান ইবাদতের মৌসুম। রমজানে সাহরির সুবাদে তাহাজ্জুদ পড়া খুবই সহজ। সাহরির সময়ই তাহাজ্জুদের সময়। তাই রমজানে তাহাজ্জুদের অভ্যাস গড়ে তোলা যেতে পারে। যেহেতু সাহরি খাওয়ার জন্য ছোট-বড় প্রায় সবাই ঘুম থেকে ওঠেন, তাই সবাইকে তাহাজ্জুদ পড়তে উৎসাহিত করা যায়। তাহাজ্জুদ নামাজ নবীজি (সা.) নিয়মিত পড়তেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় নবী (সা.)-কে উদ্দেশ করে বলেন: ‘এবং রাত্রির কিছু অংশ তাহাজ্জুদ কায়েম করবে, ইহা তোমার এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে (মাকামে মাহমুদে)।’ (আল-কোরআন, পারা: ১৫, সুরা-১৭ বনি ইসরাইল, আয়াত: ৭৯)। তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত; অতিরিক্ত হিসেবে একে নফলও বলা হয়। এই নামাজ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জন্য অতিরিক্ত কর্তব্য ছিল। এর রাকাত সংখ্যা আট, বারো থেকে বিশ পর্যন্ত উল্লেখ পাওয়া যায়। চার রাকাত বা দুই রাকাত পড়লেও তা তাহাজ্জুদ হিসেবে পরিগণিত হবে। এই নামাজকে ‘সালাতুল লাইল’ বা ‘কিয়ামুল লাইল’ নামাজও বলা হয়।
পাঁচ ওয়াক্ত নির্ধারিত নফলের মধ্যে তাহাজ্জুদ সর্বোৎকৃষ্ট আমল। তাহাজ্জুদ নামাজের সঙ্গে সাহরির কার্যত, শব্দগত ও অর্থগত মিল বা সম্পর্ক রয়েছে। হজরত আলী (রা.) বলেন: যাঁরাই আল্লাহর নৈকট্য লাভে ঊর্ধ্বারোহণ করেছেন; তাঁরাই সাহার বা শেষ রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়েছেন। (দিওয়ানে আলী (রা), নাহজুল বালাগা)। তাহাজ্জুদ নামাজের আগে-পরে কোরআন শরিফ তিলাওয়াত করা খুবই উপকারী। এ সময় সুরা মুজাম্মিল, সুরা মুদ্দাচ্ছির, সুরা মুলক, সুরা ওয়াকিআহ, সুরা দুখান, সুরা আর রহমান, সুরা ইয়াসিন, সুরা হাশর ও সুরা কাহাফ এবং অন্যান্য সুরা তিলাওয়াত করা অত্যন্ত বরকতময় ও ফলদায়ক। এটি দোয়া কবুলের সর্বশ্রেষ্ঠ
সময়। প্রতি রাতে এ সময় আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে নেমে আসেন এবং বান্দার ফরিয়াদ শোনেন।
মধ্যরাতের পরে বা রাতের দুই-তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হলে তাহাজ্জুদ নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয়। রাত দুইটার পর থেকে ফজরের নামাজের ওয়াক্ত আরম্ভ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত। সাহরির সময় শেষ হলে তথা ফজরের ওয়াক্ত শুরু হলে তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত শেষ হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জমানায় তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য আলাদা আজান দেওয়া হতো। এখনো মক্কা শরিফে ও মদিনা শরিফে এই নিয়ম চালু আছে। তাহাজ্জুদের আজানের পরেও (ফজরের আজানের আগ পর্যন্ত) সাহরি খাওয়া যায়। তাহাজ্জুদ নামাজ একা পড়াই উত্তম। তাই অন্য সব সুন্নত ও নফল নামাজের মতো তাহাজ্জুদ নামাজের সুরা কিরাআত নিম্ন স্বরে পড়তে হয় এবং এর জন্য ইকামাতেরও প্রয়োজন হয় না।
নফল ইবাদত বিশেষ উদ্দেশ্য বা প্রয়োজন ছাড়া গোপনে করাই বাঞ্ছনীয়। তবে ‘তাহাজ্জুদ নামাজ অন্ধকারে পড়তে হয়’ বা ‘তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লে জিন আসে’ অথবা ‘তাহাজ্জুদ নামাজ শুরু করলে নিয়মিত আদায় করতে হয়’ এ ধারণা সঠিক নয়। তবে কারও ঘুমের ব্যাঘাত যেন না হয় এবং প্রচারের মানসিকতা যেন না থাকে; এ বিষয়ে যত্নশীল ও সতর্ক থাকতে হবে। তাহাজ্জুদ নিয়মিত আদায় করতে পারলে তা অতি উত্তম।
তাহাজ্জুদ নামাজের কিরাআত হলো সবচেয়ে দীর্ঘ। এই নামাজে যত ইচ্ছা তত দীর্ঘ কিরাআত পাঠ করা যায়। এতে রাকাত দীর্ঘ করার জন্য এবং তিলাওয়াতের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য একই রাকাতে বিভিন্ন সুরা ও বিভিন্ন আয়াত পড়া যায় এবং একই রাকাতে একই সুরা বারবার অনেকবার পড়া যায়। নফল নামাজে কিরাআতে তিলাওয়াতের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা জরুরি নয়। নফল নামাজে রুকু, সিজদাসহ প্রতিটি রুকন বা পর্ব দীর্ঘায়িত করা সুন্নত ও মোস্তাহাব। এ জন্য রুকু ও সিজদায় তাসবিহ অনেক অনেকবার পড়া যায় এবং অন্যান্য পর্বে বেশি পরিমাণে বিভিন্ন দোয়া মাসুরা (যা কোরআন ও হাদিসে আছে) পাঠ করা যায়।
তেল, সুরমা ও সুগন্ধির ব্যবহার
রোজা অবস্থায় দিনের বেলায় প্রয়োজনে তেল, সুরমা ও সুগন্ধি ব্যবহার করা যায়। এতে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। মাথায়, চোখে, মুখে, কানে, নাকে বা শরীরের যেকোনো জায়গায় তেল ব্যবহারের একই বিধান। তবে রোজায় বা রমজানের বাইরে পুরুষদের রাতের বেলায় শোয়ার আগে সুরমা ব্যবহার করা সুন্নত; দিনের বেলায় সুরমা ব্যবহার করা পুরুষের জন্য সব সময়ই মকরুহ।
নারীরা দিনে বা রাতে সব সময় সুরমা ব্যবহার করতে পারবেন।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি, সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম।
[email protected]