পবিত্র আশুরা আজ

আজ ১০ মহররম। বিশ্বজুড়ে মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও শোকাবহ এক দিন আজ। হিজরি বর্ষের প্রথম মাস মহররমের ১০ তারিখ পবিত্র আশুরা হিসেবেও পরিচিত। মহান আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা পাওয়ার আশায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নফল রোজা, নামাজ, দান-খয়রাত ও জিকির-আসকারের মধ্য দিয়ে এই দিনটি পালন করবেন।

আরবি ‘আশারা’ শব্দের অর্থ দশ। আর আশুরা মানে দশম। আর মহররম অর্থ সম্মানিত। হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা কারবালার ময়দানে ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে শহীদ হন।

শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম ইসলামের মহান আদর্শকে সমুন্নত রাখতে হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)–এর আত্মত্যাগ মানবতার ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে। কারবালার এই শোকাবহ ঘটনা অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং সত্য ও সুন্দরের পথে চলতে প্রেরণা জোগায়।

কারবালার বিয়োগান্ত ঘটনা ছাড়াও ইসলামের ইতিহাসে এই দিনে অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। হজরত মুসা (আ.) ফেরাউনের জুলুম থেকে এই

দিনে পরিত্রাণ লাভ করেছিলেন তাঁর অনুসারীদের নিয়ে। ইব্রাহিম (আ.) নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে এই দিনে মুক্তি পান। এমন অনেক তাৎপর্যময় ঘটনা ঘটেছিল এই দিনে।

পবিত্র আশুরা উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। মহিমান্বিত এই দিন পালন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

‘পবিত্র আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ নিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে গতকাল সোমবার বাদ জোহর আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক মো. মুশফিকুর রহমান। প্রধান আলোচক ছিলেন মাদারীপুরের শিবচরের জামেয়াতুস সুন্নাহ মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা নেয়ামত উল্লাহ ফরিদী। আলোচনা শেষে তিনি দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন। আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক মো. আনিছুর রহমান সরকার।

পবিত্র আশুরা উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। জাতীয় দৈনিকগুলো আশুরার তাৎপর্য নিয়ে বিশেষ প্রবন্ধ, নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি রেডিও-টিভি চ্যানেল আজ বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।

আশুরার দিনে পুরান ঢাকার হোসেনি দালানসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে শিয়া সম্প্রদায়ের উদ্যোগে তাজিয়া মিছিল বের হবে। তাজিয়া মিছিলের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও আইনশৃঙ্খলার স্বার্থে পুলিশের পক্ষ থেকে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তাজিয়া মিছিলে দা, ছুরি, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি ইত্যাদি বহন এবং আতশবাজি ও পটকা ফাটানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। এ ছাড়া দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীসহ সারা দেশে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।