আসুক আলো আসুক আনন্দ

২০২০ খ্রিষ্টবর্ষ নানাভাবে আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যতিক্রমী। বছরের শুরু থেকেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণে গোটা বিশ্বই ছিল আতঙ্কগ্রস্ত। এ পর্যন্ত প্রায় ১৭ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন এবং ৬ কোটিরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। প্রতিদিন এর সংখ্যা বাড়ছে। আবার এ সময়ে যে ভূপ্রকৃতি আমাদের বাঁচিয়ে রাখে, সেই প্রকৃতি যেন একটু ‘শ্বাস’ নিতে পেরেছে এবং পরিশোধিত হয়েছে।

পুণ্য পিতা এ বছরকে ‘লাউদাতো সি’–বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এই বর্ষ পালনের উদ্দেশ্য হলো আমরা যেন আমাদের মাতৃস্বরূপ ধরিত্রী, সবার বসতবাড়িকে আপন করে নিই এবং বিশ্বপ্রকৃতির যত্ন করি। ঈশ্বর পৃথিবী সৃষ্টি করে মুগ্ধ হয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, ‘সবই উত্তম হয়েছে’ (আদি ১: ৩১)। মানুষের অতিমাত্রায় ভোগবাদী মনমানসিকতা, অতিকেন্দ্রিকতা, স্বার্থপরতা, লোভ-লালসা এবং উদাসীনতার কারণে বন-বৃক্ষনিধন, বাতাসে অতিমাত্রায় কার্বন ডাই–অক্সাইড ছড়িয়ে পড়া, বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, জলাবদ্ধতা, খাল-ডোবা নিশ্চিহ্ন হওয়া, জীববৈচিত্র্য হ্রাস, বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ুর পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব অনেক বেড়ে গেছে। এতে ক্ষতবিক্ষত ধরিত্রীও যেন প্রতিশোধ নিতে উদ্যত।

গোটা বিশ্বে ধনী-গরিবের ব্যবধান বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রকৃতি ও মানুষের এই দুরবস্থার জন্য মানুষই দায়ী। এর প্রতিকারের জন্য মানুষকে বিবেকী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মানুষকে গণমঙ্গলের কথা চিন্তা করতে হবে।

আজ ২৫ ডিসেম্বর আমরা পালন করছি মানবজাতির মুক্তিদাতা প্রভু যিশুখ্রিষ্টের জন্মতিথি। তিনি এ জগতে এসেছিলেন মানবজাতিকে পাপ, অসত্য ও অন্যায় থেকে মুক্তি দিতে। তিনি ঐশ রাজ্যের সুখবর ঘোষণা করেছেন। তিনি সুস্থতা দান করেছেন অগণিত রোগাক্রান্ত নর-নারীকে। ভালোবাসা, সেবা, ন্যায্যতা, ঈশ্বরের বিশ্বাস ও প্রতিবেশী প্রেমের ওপর ভিত্তি করে তিনি নতুন মানবসমাজ গঠন করেছেন, যে সমাজে থাকবে মিলন, আনন্দ ও ভ্রাতৃত্ব। বর্তমানে আমরা যে সময়ে বসবাস করছি, তখন চারদিকে দেখি হিংসা, রেষারেষি, স্বার্থপরতা, সন্ত্রাস, মারামারি, কাটাকাটি ও যুদ্ধ। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব।

এর মধ্যে আমাদের সবার আকাঙ্ক্ষা, যিশুখ্রিষ্টের আগমন বয়ে আনুক অনেক আশা, সুস্থতা, নতুন জীবন ও আনন্দ। বিশ্ব মুক্ত হোক এই নিষ্ঠুর ভাইরাসের হাত থেকে। সব অসত্য, অন্ধকার, ভয়, মিথ্যা, অত্যাচার দূরীভূত হোক। মানুষ লাভ করুক প্রকৃত সুখ ও শান্তি।


বিজয় এন ডি’ক্রুজ, ওএমআই ঢাকার আর্চবিশপ