শুভ বড়দিন আজ

বড়দিন উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন গির্জায় চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। গতকাল বিকেলে কাকরাইলের সেন্ট মেরি’স ক্যাথেড্রাল গির্জায়ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

কাকরাইলের সেন্ট মেরি’স ক্যাথেড্রাল চার্চে ঢোকার আগে সড়কের মোড়ে বিশাল আকারের এক বেলুন উড়ছে। এই বেলুনের গায়ে লেখা ‘শুভ বড়দিন’।

গতকাল রোববার বিকেলে এই চার্চের প্রবেশমুখেই দেখা গেল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্যকে। নিরাপত্তা তল্লাশি পেরিয়ে ভেতরে ঢুকেই দেখা গেল চার্চের কর্মীরা শেষ মুহূর্তের গোছগাছে ব্যস্ত। গির্জার ফাদার মিল্টন কোড়াইয়া নিজেই বিষয়টি তদারকি করছিলেন। তিনি চারদিক ঘুরে দেখছেন, কোথায় কী বাকি রইল!

শুধু এই চার্চ (গির্জা) নয়, রাজধানীর বিভিন্ন গির্জায় কয়েক দিন ধরেই উৎসবের প্রস্তুতি দেখা গেছে। নানা রঙের বেলুন, নকশা করা কাগজ, ফুল ও জরি ব্যবহার করে গির্জাগুলোকে সাজানো হয়েছে। গির্জার ভেতরে বর্ণিল সাজে সেজেছে ক্রিসমাস ট্রিও। এত সব আয়োজন ২৫ ডিসেম্বরকে (আজ সোমবার) ঘিরে। দিনটি খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। বাংলাদেশে এই উৎসব বড়দিন (ক্রিসমাস ডে) নামে পরিচিত। সারা বিশ্বের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মতো বাংলাদেশের খ্রিষ্টধর্মের মানুষেরাও ধর্মীয় আচার, প্রার্থনা ও আনন্দ-উৎসবের মাধ্যমে দিনটি উদ্‌যাপন করবেন।

বড়দিনের আগের বিকেলে রাজধানীর কাকরাইল ও তেজগাঁওয়ের দুটি চার্চ ঘুরে দেখা যায়, উৎসবের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। ২৪ ডিসেম্বর (গতকাল) সন্ধ্যা থেকেই প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় গেছে বড়দিনের আনুষ্ঠানিকতা।

কাকরাইলের চার্চে গতকাল রাত নয়টায় খ্রিষ্টযাগ বা প্রার্থনা হয়েছে। এটি হয়েছে বাংলা ভাষায়। আরেকটি খ্রিষ্টযাগ হয়েছে রাত ১১টায়, এটি হয়েছে ইংরেজি ভাষায়। এ ছাড়া আজ সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে হবে আরেকটি খ্রিষ্টযাগ। বিকেলে সান্তা আসবে, শিশুদের দেবে নানা উপহার।

গতকাল বিকেলে তেজগাঁওয়ের পবিত্র জপমালা রানীর গির্জায় দেখা যায়, মূল প্রার্থনাকক্ষের বাইরে সারি সারি চেয়ার পাতা। অনেক মানুষ প্রার্থনায় অংশ নেবেন, তাই তাঁদের বসার ব্যবস্থা করা হচ্ছিল। এই চার্চের প্রার্থনাকক্ষে বেলুন, ফুলসহ নানা উপকরণ দিয়ে সাজানো হয়েছে। প্রার্থনাকক্ষের এক পাশে একটি গোশালা করা হয়েছে। আর চার্চ প্রাঙ্গণ সাজানো হয়েছে নানা রঙের বাতিতে। প্রাঙ্গণের এক পাশে বড় আকারের ক্রিসমাস ট্রিও দেখা গেল।

আজ সারা দিন আনন্দ-উৎসব ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে দিনটি উদ্‌যাপন করবেন খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা। দিনটি উপলক্ষে অনেক খ্রিষ্টান পরিবারে কেক তৈরি হবে, থাকবে বিশেষ খাবারের আয়োজন। বড়দিন উপলক্ষে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ লেখা ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশনগুলোতে আজ বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করা হবে। আজ সরকারি ছুটি।

খ্রিষ্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্ট এই দিনে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের বেথলেহেম শহরের এক গোয়ালঘরে জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচার এবং মানব জাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালনা করার জন্য যিশুখ্রিষ্ট জন্ম নিয়েছিলেন।

এই দিনে যিশুখ্রিষ্ট শান্তির বার্তা নিয়েই পৃথিবীতে এসেছিলেন বলে জানান কাকরাইলের সেন্ট মেরি’স ক্যাথেড্রাল চার্চের ফাদার মিল্টন কোড়াইয়া। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এবার তাদের প্রার্থনায় শান্তির বার্তাই থাকবে মূলত। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যুদ্ধ চলছে। ইউক্রেন-রাশিয়া, ইসরায়েল-গাজায় যুদ্ধ চলছে। বাংলাদেশেও রাজনৈতিক অস্থিরতা আছে। এসব থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রার্থনা করা হবে। জনজীবনের শান্তি ফিরিয়ে আনতে এবং বিশ্ব বিবেক যেন জাগ্রত হয়, সে প্রার্থনা তাঁরা করবেন।

খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসবে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন।

সবাইকে বড়দিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সম্প্রীতি ও ঐক্য স্থাপনসহ বর্তমান যুদ্ধবিগ্রহপূর্ণ বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যিশুখ্রিষ্টের শিক্ষা ও আদর্শ অনুসরণীয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বড়দিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, পৃথিবীতে ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজব্যবস্থা প্রবর্তন ছিল যিশুখ্রিষ্টের অন্যতম ব্রত।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে বড়দিন উপলক্ষে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।