শেষ হচ্ছে দুর্গোৎসব, বিজয়ার শোভাযাত্রা হবে না

ছবি: প্রথম আলো

বিজয়া দশমীর পূজার মধ্য দিয়ে আজ সোমবার শেষ হচ্ছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। করোনা মহামারি পরিস্থিতির কারণে এবার সারা দেশে দুর্গাপূজায় চিরাচরিত উৎসবের আয়োজন ছিল না। তবে পূজার ধর্মীয় আচারে কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। অষ্টমীর মতো গতকাল মহানবমীর দিনে রাজধানীর মন্দিরগুলোয় প্রচুর ভক্তের সমাগম ঘটেছিল।

২২ অক্টোবর ষষ্ঠী বিহিত পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয় পাঁচ দিনের শারদীয় দুর্গাপূজা। এবার দেবীর আগমন ঘটেছিল দোলায়। ভক্তদের অঞ্জলি আরতি গ্রহণ করে আজ গজে বিদায় নিচ্ছেন দেবী। গজে বিদায়ের তাৎপর্য হলো ‘শস্যপূর্ণ বসুন্ধরা’, অর্থাৎ ফলে-ফসলে সমৃদ্ধ হবে দেশ। এবার সারা দেশে ৩০ হাজার ২১৩টি পূজা হয়েছে। গত বছর পূজা হয়েছিল ৩১ হাজার ৩৯৮টি। এবার ঢাকা মহানগরে পূজা হয়েছে ২৩২টি।

বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত গতকাল প্রথম আলোকে জানালেন, এবার মহামারির প্রেক্ষাপটে একটু ভিন্নভাবে পূজা উদ্‌যাপিত হলো। শারদীয় দুর্গোৎসব সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। কেবল সাত্ত্বিক ধর্মীয় আচারের মধ্য দিয়ে এবার দেবীর আরাধনা করা হয়েছে। প্রথম দুই দিন মন্দিরগুলোয় ভক্তদের সমাগম কম থাকলেও অষ্টমী ও নবমীতে করোনার ভয়কে জয় করে বিপুলসংখ্যক ভক্তের সমাগম ঘটে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হয়েছে। সারা দেশে পূজামণ্ডপে নিরাপত্তাব্যবস্থা সন্তোষজনক ছিল।

আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল এবার মন্দিরে আলোকসজ্জা ও কোনো সাংস্কৃতিক উৎসব, আরতি হবে না। প্রসাদ বিতরণও করা হবে না। এ ছাড়া দশমীর দিনে বিজয়ার শোভাযাত্রাও এবার হবে না। আজ সকাল ৯টা ৫৭ মিনিট থেকে দশমী বিহিত পূজার লগ্ন শুরু হবে। পূজা শেষে দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পূজার ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে। এরপর রাজধানীর বিভিন্ন মন্দির থেকে তাঁদের সুবিধামতো সময়ে বুড়িগঙ্গা বা নিকটবর্তী কোনো জলাধারে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে।

এদিকে গতকাল নবমী পূজার বিকেল থেকেই রাজধানীর মন্দিরগুলোয় ভক্তরা সপরিবার আসেন দেবী দর্শনে। ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে প্রতিবছরের মতোই এবারও অনেক বড় মণ্ডপ করে পূজার আয়োজন করা হয়। সনাতন সমাজকল্যাণ সংঘ এর আয়োজন করেছে। রাজধানীতে বেশ কয়েক বছর ধরে তাদের মন্দির ও এর সাজসজ্জা দর্শনার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছিল। সনাতন সমাজ কল্যাণ সংঘের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ গতকাল প্রথম আলোকে বললেন, গত বছর এখানে মন্দির করা হয়েছিল ভারতের প্রাচীন মন্দির অজান্তা-ইলোরার আদলে। তার আগের বছর করা হয়েছিল বৃন্দাবনের মন্দিরের আদলে, তার আগের বছর করা হয়েছিল কলকাতার গৌর মঠের আদলে। এবার সাজসজ্জার আয়োজনে আগের ঘটা নেই। তবে প্রতিমা উপস্থাপনায় একটি ভাবনা রয়েছে। দেবী প্রতিমার নেপথ্যে এবার রচনা করা হয়েছে পর্বতের দৃশ্য। সেখানে দেবী মহিষাসুরকে বধ করছেন। তিনি বললেন, এর মধ্য দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে আসুরিক শক্তি যতই প্রবল হোক, এমনকি তা যদি পর্বতপ্রমাণও হয়, তবু দেবী তাকে বিনাশ করে কল্যাণ ও শান্তি বিধান করবেন।

গতকাল সন্ধ্যায় মিরপুর থেকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী সুদীপ ঢালি সপরিবার এসেছিলেন কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের মন্দিরে দেবী দর্শনে। মন্দিরে প্রবেশ করতে হচ্ছে মাস্ক পরে, মণ্ডপের সামনে যেতে হচ্ছে নির্ধারিত দূরত্ব মেনে। এখানে স্বাস্থ্যবিধি বেশ কড়াকড়িভাবে মানা হচ্ছে, বিষয়টি তাঁর ভালো লেগেছে বলে জানালেন।

এখানে গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় ছিল মহানবমী বিহিত পূজা। এরপর বেলা ১১টায় যজ্ঞ করা হয়েছে। বিকেল সাড়ে ৫টায় পুরোহিত লিটন চক্রবর্তী করেছেন চণ্ডীপাঠ। সংঘের সভাপতি সমীর চন্দ বললেন, বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের শর্তগুলো মেনেই এবার পূজার আয়োজন করা হয়েছে।

কৃষিবিদে আজ সাড়ে ৯টায় দশমী পূজার পরে হবে দর্পণ বিসর্জন, প্রতিমা বিসর্জনের যাত্রা শুরু হবে বেলা ১টায়। রাজধানীর অন্যান্য মন্দিরেও গতকাল নবমীর দিনে প্রচুর ভক্তের সমাগম ঘটেছিল। সন্ধ্যা আরতির পর মন্দিরগুলো বন্ধ হয়ে যায়।