বাঙালির রঙের উৎসব দোল পূর্ণিমা

ছবি: প্রথম আলো

বাঙালির সনাতন হিন্দুদের পার্বণের কোনো শেষ নেই। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি পার্বণ হচ্ছে দোল দোল পূর্ণিমা বা দোল উৎসব। দোলকে রঙের উৎসব বলা হয়, যা ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে উদ্‌যাপিত হয়। কোথাও এই দোল পূর্ণিমাকে দোল যাত্রা বলে। আবার ফাল্গুনী পূর্ণিমাকেও দোল পূর্ণিমা বলা হয়ে থাকে। মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যের জন্ম হয়েছিল এই পূর্ণিমার তিথিতে, তাই দোল পূর্ণিমাকে গৌরী পূর্ণিমা বলা হয়। দোল পূর্ণিমা অনেক পৌরাণিক ঘটনা। এই তিথিতে বৃন্দাবনে আবির ও গুলাল নিয়ে শ্রী কৃষ্ণ, রাঁধা এবং তার গোপীগনের সঙ্গে হোলি খেলেছিল আর সেই ঘটনা থেকে উৎপত্তি হয় দোল খেলা।

শাস্ত্র অনুসারে বৈষ্ণবীয় উৎসবের শেষ উৎসব দোল উৎসব। ফাল্গুনী পূর্ণিমায় উদ্‌যাপিত এই উৎসবের উল্লেখ মেলে বিভিন্ন পুরাণে।

ছবি: প্রথম আলো
আরও পড়ুন
ঠিক ফাল্গুনী পূর্ণিমার আগের দিন শুক্লা চতুর্দশী তিথিতে শ্রীকৃষ্ণ ও বলরাম মিলে ওই দুই দৈত্যকে হত্যা করেন। এর পর সন্ধ্যার সময় শুকনো কাঠ, খড়কুটো দিয়ে তাদের আগুনে পুড়িয়ে দেন। সেই দিন থেকে ন্যাড়া পোড়া প্রচলিত হয়। এইভাবে শ্রীকৃষ্ণ দুই দৈত্যের অত্যাচার থেকে মথুরাসাবীকে মুক্তি দিলেন। মথুরাবাসী তাদের এই মুক্তির দিনটি শ্রীকৃষ্ণ ও বলরামের সঙ্গে রঙে রঙে উদ্‌যাপন করেন। সে দিন থেকেই শুরু হয় এই দোল উৎসব।
ছবি: প্রথম আলো

দ্বাপর যুগের কথা। সেই সময় দুই দৈত্যের অত্যাচারে মথুরাবাসী অত্যন্ত সন্ত্রস্ত ছিলেন। সব সময় তারা ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছিলেন। সে সময়ে সকল মথুরাবাসী এক হয়ে শ্রীকৃষ্ণের কাছে তাদের এই অত্যাচারের কথা বর্ণনা করেন এবং এই অত্যাচারের হাত থেকে তাদের রক্ষা করতে অনুরোধ করেন।

ঠিক ফাল্গুনী পূর্ণিমার আগের দিন শুক্লা চতুর্দশী তিথিতে শ্রীকৃষ্ণ ও বলরাম মিলে ওই দুই দৈত্যকে হত্যা করেন। এর পর সন্ধ্যার সময় শুকনো কাঠ, খড়কুটো দিয়ে তাদের আগুনে পুড়িয়ে দেন। সেই দিন থেকে ন্যাড়া পোড়া প্রচলিত হয়। এইভাবে শ্রীকৃষ্ণ দুই দৈত্যের অত্যাচার থেকে মথুরাসাবীকে মুক্তি দিলেন। মথুরাবাসী তাদের এই মুক্তির দিনটি শ্রীকৃষ্ণ ও বলরামের সঙ্গে রঙে রঙে উদ্‌যাপন করেন। সে দিন থেকেই শুরু হয় এই দোল উৎসব।

ছবি: প্রথম আলো
আরও পড়ুন
এখানে বলে রাখা ভালো যে, দোল এবং হোলি একই রকম মনে হলেও এ দুটি মূলত আলাদা অনুষ্ঠান। সাধারণত দোলের পরের দিন হোলি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। দোল নিতান্তই বাঙালিদের। আর হোলি অবাঙালি হিন্দুদের উৎসব। বাঙালি সমাজে দোলযাত্রাকে বসন্তের আগমনী বার্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই উৎসবের মাধ্যমে বসন্তকে স্বাগত জানানো হয়। যা কৃষি মৌসুমের সূচনা করে, অশুভের বিরুদ্ধে শুভ শক্তির বিজয় এবং চিরন্তন প্রেমের ঘোষণা করে। বাংলায় বসন্ত মানেই পলাশ ফুল যা বসন্তেরই মূর্ত প্রতীক।
ছবি: প্রথম আলো

তবে দোল উৎসব মূলত হিন্দু বৈষ্ণবদের উৎসব। বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী, এ দিন শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে রাধিকা এবং তার সখীদের সঙ্গে আবির খেলেছিলেন। সেই ঘটনা থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি। এ কারণে দোলযাত্রার দিন এ মতের বিশ্বাসীরা রাধা-কৃষ্ণের বিগ্রহ আবিরে রাঙিয়ে দোলায় চড়িয়ে নগর কীর্তনে বের হন। এ সময় তারা রং খেলার আনন্দে মেতে ওঠেন।

বৈষ্ণব কবি গোবিন্দ দাসের রচনায় তার নানা উল্লেখ মেলে। ‘‘খেলত ফাগু বৃন্দাবন-চান্দ।। ঋতুপতি মন মথ মন মথ ছান্দ। সুন্দরীগণ কর মণ্ডলী মাঝ। রঙ্গিনি প্রেম তরঙ্গিনী সাজ।। আগু ফাগু দেই নাগরি-নয়নে। অবসরে নাগর চুম্বয়ে বয়নে।।’’

তবে শুধু দেবতাকে রাঙিয়ে তোলা নয়, দোল উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে জীবনের নানা রং। দোল উৎসবে যেমন মিশে আছে উদ্‌যাপনের বৈচিত্র্য, তেমনই বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে দেখা যায় এই উপলক্ষে মেলাও।

আরও পড়ুন
কোথাও এই দোল পূর্ণিমাকে দোল যাত্রা বলে। আবার ফাল্গুনী পূর্ণিমাকেও দোল পূর্ণিমা বলা হয়ে থাকে। মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যের জন্ম হয়েছিল এই পূর্ণিমার তিথিতে, তাই দোল পূর্ণিমাকে গৌরী পূর্ণিমা বলা হয়। দোল পূর্ণিমা অনেক পৌরাণিক ঘটনা। এই তিথিতে বৃন্দাবনে আবির ও গুলাল নিয়ে শ্রী কৃষ্ণ, রাঁধা এবং তার গোপীগনের সঙ্গে হোলি খেলেছিল আর সেই ঘটনা থেকে উৎপত্তি হয় দোল খেলা।
ছবি: প্রথম আলো

আধুনিক বাংলায় দোল উৎসবের সূচনা করেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯০৭ সালে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট ছেলে শমীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুরু করেছিলেন ঋতুরঙ্গ উৎসব। সেদিন শান্তিনিকেতনের প্রাণ কুঠিরের সামনে শুরু হয় এ উৎসব। এখন অবশ্য সেদিনের প্রাণ কুঠি শমীন্দ্র পাঠাগার হিসেবে পরিচিত। সেই ঋতুরঙ্গ উৎসবই আজকের বসন্ত উৎসব। আগে বসন্তের যেকোনো দিন অনুষ্ঠিত হতো এ উৎসব। পরবর্তীকালে অবশ্য বসন্ত পূর্ণিমার দিনই অনুষ্ঠিত হয় এ উৎসব।

এ উৎসব অবশ্য ঋতুরাজ বসন্তে স্বাগত জানানোর উৎসব। বাঙালির কাছে এই দোল উৎসবের এক বিশেষ আবেগ রয়েছে। বছরের এই একটা দিনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন মানুষ। মথুরাসাবীর মতন এই বিশেষ দিনে দেশবাসী রঙের খেলায় মেতে ওঠেন। শহরের মানুষের সঙ্গে গ্রাম বাংলার মানুষ যেন মিলেমিশে এক হয়ে যায়, এই উৎসব ধনী-দরিদ্র সকলের জন্য। এই উৎসবে গা ভাসিয়ে দেন সকলে।

এখানে বলে রাখা ভালো যে, দোল এবং হোলি একই রকম মনে হলেও এ দুটি মূলত আলাদা অনুষ্ঠান। সাধারণত দোলের পরের দিন হোলি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। দোল নিতান্তই বাঙালিদের। আর হোলি অবাঙালি হিন্দুদের উৎসব। বাঙালি সমাজে দোলযাত্রাকে বসন্তের আগমনী বার্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই উৎসবের মাধ্যমে বসন্তকে স্বাগত জানানো হয়। যা কৃষি মৌসুমের সূচনা করে, অশুভের বিরুদ্ধে শুভ শক্তির বিজয় এবং চিরন্তন প্রেমের ঘোষণা করে। বাংলায় বসন্ত মানেই পলাশ ফুল যা বসন্তেরই মূর্ত প্রতীক।

চিররঞ্জন সরকার : কলাম লেখক