মহাসপ্তমীতে মণ্ডপে ঘুরে ঘুরে প্রতিমা দেখার আনন্দ, আজ মহাঅষ্টমী

মহাঅষ্টমীতে আজ সারা দেশে অনুষ্ঠিত হবে কুমারীপূজা। বিকেলে সন্ধিপূজা শুরু হয়ে শেষ হবে সন্ধ্যায়।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাসপ্তমীতে ভক্তদের হাতে চরণামৃত দিচ্ছেন পুরোহিত বরুণ চক্রবর্তী। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে
ছবি: দীপু মালাকার

সুনামগঞ্জ থেকে এসেছেন বাদল দাস। সঙ্গে স্ত্রী প্রতিমা তালুকদার আর দুই ছেলে ১০ বছরের সৃজন দাস ও সূর্য দাস। সন্ধ্যায় তাঁরা করজোড়ে প্রণাম জানালেন দেবী দুর্গার পদে। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে সপরিবার প্রবেশ করেছিলেন ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে। গতকাল শনিবার দেবীর চক্ষুদান ও নবপত্রিকা প্রবেশের ভেতর দিয়ে মন্দিরগুলোতে সাড়ম্বরে উদ্‌যাপিত হলো শারদীয় দুর্গোৎসবের দুর্গতিনাশিনী দেবীর মহাসপ্তমী পূজা।

বরাবর সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের বাড়িতেই দুর্গাপূজা উদ্‌যাপন করেন ব্যবসায়ী বাদল দাস। করোনার কারণে গত দুই বছর পূজার আনন্দ তেমন হয়নি। এবার ছেলেরা আবদার করছে পূজায় ঢাকায় আসবে। তাই শুক্রবার ষষ্ঠীর দিনে উড়োজাহাজে করে সিলেট থেকে সপরিবার ঢাকায় এসেছেন। একে তো রাজধানীর জমকালো পূজামণ্ডপগুলোতে ঘুরে ঘুরে প্রতিমা দেখার আনন্দ, তার ওপর জীবনে প্রথম উড়োজাহাজে ওঠার রোমাঞ্চ। ছেলেরা আনন্দে আটখানা। বাদল জানলেন, আরও এক দিন ঢাকায় থেকে নবমীতে গ্রামের বাড়িতে ফিরবেন তাঁরা।

বাদল দাসের মতো দেবীভক্তরা অনেকে গতকাল সারা দিনই সপরিবার প্রতিমা দর্শনে এসেছিলেন। মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সহসভাপতি তাপস কুমার পাল প্রথম আলোকে জানালেন, ঢাকেশ্বরী মন্দিরে সকাল আটটায় সপ্তমী বিহিত পূজা শুরু হয়। এরপর বেলা ১১টার দিকে দেবীর চক্ষুদানের মধ্য দিয়ে অঞ্জলি প্রদান শুরু হয়। অনেক ভক্ত এসেছিলেন অঞ্জলি নিবেদন করতে। বেলা একটায় প্রসাদ বিতরণ করা হয়েছে। সন্ধ্যাপূজা ও আরতি শুরু হয় সন্ধ্যা সাতটা থেকে।

ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজা হয় সাত্ত্বিক রীতিতে। পূজামণ্ডপ মাঠের পূর্ব পাশে আর অনুষ্ঠানের মঞ্চ করা হয়েছে উত্তর পাশে। সামনে ভক্তদের বসার ব্যবস্থা। অনেকে দেবী প্রণাম নিবেদন করে সেখানে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তাপস কুমার পাল জানালেন, এখানে প্রতিমায় বাড়তি কোনো আড়ম্বর থাকে না। দেব–দেবীদের বেশভূষা, অলংকারাদি সবকিছুই করা হয় শাস্ত্র মোতাবেক। দেবী দুর্গার লাল শাড়ি, সরস্বতীর শাড়ি সাদা, লক্ষ্মীর শাড়ি ম্যাজেন্টা রঙের। গণেশের ধুতি থাকে ঘিয়ে রঙের আর কার্তিকের ধুতি নীল। প্রতিমার গড়ন থাকে সহজ সাধারণ। তবে এবার মন্দিরের সামনের অঙ্গন সাজানো হয়েছে শান্তির প্রতীক সাদা পায়রা আর সাদা আলোর ঝাড়বাতি দিয়ে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেশে চলছে যুদ্ধের উন্মত্ততা। উত্তেজনাময় হয়ে উঠেছে পরিস্থিতি। তাই অসুরবিনাশী দেবীর কাছে শান্তির প্রার্থনা করে এবার শান্তির আবহে জাতীয় মন্দির সাজানো হয়েছে।

বিকেল থেকেই রাজধানীর মন্দিরগুলোতে ভক্তদের ভিড় বাড়তে থাকে। ঢাক-কাঁসরের বাদ্য, ধূপের সুরভিত ধোঁয়া, আরতির নৃত্য, ভক্তিগীতি, ভক্তদের প্রণাম আর পরস্পরের প্রতি শুভেচ্ছা বিনিময়ে মন্দিরগুলো জমজমাট হয়ে ওঠে। ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গতকাল বিকেলে এসেছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, জাসদের যুগ্ম সম্পাদক রোকনুজ্জামানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা। তাঁরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি রক্ষার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য দেন।

মন্দিরের পুকুরপাড়ের সামনের চত্বরে সারি সারি দোকান পেতে বসেছে হরেক পণ্যের পসরা। শাঁখা-পলা, দুল-মালার সঙ্গে আছে প্রদীপ, দেব–দেবীর ছোট ছোট প্রতিমা, ধর্মীয় বইসহ বহু রকমের সামগ্রী। অনেকই মগ্ন ছিলেন কেনাকাটায়। শেওড়াপাড়া থেকে যমুনা গ্রুপের কর্মকর্তা নিত্য গোপাল রায় স্ত্রী বনশ্রী রায় আর মেয়ে ঊর্মি রায়কে নিয়ে এসেছিলেন ঢাকেশ্বরীতে। দেবী দর্শন শেষে তাঁর স্ত্রী টুকিটাকি কেনাকাটা করছিলেন মেলার পসরা থেকে। তিনি জানালেন, ঢাকেশ্বরী থেকে জগন্নাথ হলের পূজা দেখে ঘরে ফিরবেন।

জগন্নাথ হলের পূজামণ্ডপেও সন্ধ্যা থেকে প্রচুর ভক্তের সমাগম ঘটতে থাকে। এখানে সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশের ভেতর দিয়ে সপ্তমী বিহিত পূজা শুরু হয়, অঞ্জলি দেওয়া হয় বেলা ১১টায়। এভাবেই আরাধনা আর আনন্দ–উদ্দীপনার ভেতর দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাসপ্তমী উদ্‌যাপন করেছেন ভক্তরা।