শাওয়াল মাসের মাহাত্ম্য ও বিশেষ আমলসমূহ

রমজানের রোজা তাকওয়া অর্জনে সহায়তা করে। শাওয়াল মাসের আমল তাকওয়াকে শাণিত করে। রমজানে পূর্ণ মাস রোজা পালন করা ফরজ, আর তার পরের মাস, অর্থাৎ শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখা সুন্নত। আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে বলেন, ‘যখন তুমি (ফরজ দায়িত্ব পালন থেকে) অবসর হবে, তখন (নফল ইবাদতের মাধ্যমে) তোমার রবের প্রতি মনোনিবেশ করো (সুরা-৯৪ ইনশিরাহ, আয়াত: ৮)।’

শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যারা রমজানে রোজা পালন করল এবং শাওয়াল মাসে আরও ছয়টি রোজা রাখল; তারা যেন সারা বছরই রোজা পালন করল (মুসলিম: ১১৬৪; আবু দাউদ: ২৪৩৩; সহিহ-আলবানি)।’ শাওয়াল হলো আরবি চান্দ্রবর্ষের দশম মাস। এটি হজের তিন মাসের (শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ) প্রথম মাস। তাই এ মাস আমল ও ইবাদতের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। শাওয়াল মাসের ইবাদত আত্মনিয়ন্ত্রণের শক্তি অর্জনে সাহায্য করে; পরিপক্বতা ও স্থিতিশীলতা লাভে সহায়ক হয়।

রমজানের কাজা রোজা থাকলে তা শাওয়াল মাসের ছয়টি সুন্নত রোজা পালনের আগে বা পরে আদায় করা যায়। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘(রমজান মাসে) তোমাদের মধ্যে যে (যত দিন) অসুস্থ থাকবে কিংবা সফরে থাকবে, সে (রমজানের পরে) অন্য দিনগুলোতে (তত দিন) রোজা পালন করবে (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৪)।’ তাই যাঁরা সফরের ক্লান্তির কারণে কিংবা অসুস্থ থাকার কারণে রমজানের সব রোজা রাখতে পারেননি; অথবা যে নারীরা প্রাকৃতিক কারণে (যে কয়টি) রোজা পালন করতে পারেননি, তাঁরা সেগুলো রমজানের পর অন্য সময়ে আদায় করে নেবেন।

আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, রমজান মাসে নারীদের ঋতুকাল শুরু হলে রাসুল (সা.) এ সময়কালে তাঁদের রোজা ছেড়ে দিতে এবং এই রোজা পরে কাজা আদায় করার নির্দেশ দিতেন; কিন্তু নামাজ কাজা আদায় করার কথা বলা হতো না। (ওই অবস্থায় নামাজ মাফ) (বুখারি ও মুসলিম; মিশকাত, হাদিস: ২০৩২)।

রমজানের কাজা রোজা পরবর্তী রমজান মাস আসার আগে যেকোনো সময় আদায় করা যাবে। রমজানের কাজা রোজা রাখার জন্য পরবর্তী রমজানের আগপর্যন্ত যথেষ্ট সময় থাকলে তার আগে যেকোনো প্রকার ওয়াজিব, সুন্নত বা নফল রোজা রাখা যায়। যেমন ফরজ নামাজ আদায় করার আগে সময় থাকলে নফল নামাজ আদায় করা যায়। সুতরাং শাওয়ালের ছয়টি সুন্নত রোজা রমজানের কাজা রোজা আদায়ের আগেও রাখা যাবে। তবে সম্ভব হলে আগে ফরজ রোজার কাজা আদায় করা উত্তম (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ, খ্ল: ২, পৃষ্ঠা: ১৬৬)।

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমার ওপর রমজানের যে কাজা রোজা বাকি থাকত; তা পরবর্তী শাবান ব্যতীত আমি আদায় করতে পারতাম না (বুখারি, হাদিস: ১৯৫০; মুসলিম, হাদিস: ১১৪৬)।’

রমজানে যেহেতু ফরজ রোজা সবাইকে রাখতে হয়, তাই সবার সুবিধার্থে ইফতারের পর একটু বিলম্বে মসজিদে জামাত শুরু করা হয়। রমজান ছাড়া অন্য সময় বিভিন্ন রোজা যেহেতু ব্যাপকভাবে সবাই একসঙ্গে রাখেন না, তাই মাগরিবের জামাতের ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে; দীর্ঘ ইফতারের জন্য যেন জামাত ছুটে না যায়। বরং এসব ক্ষেত্রে মসজিদে পানি বা সামান্য কিছু দিয়ে ইফতার করে মাগরিবের নামাজ জামাতে আদায় করে পরে সুবিধামতো খাওয়াদাওয়া করা বাঞ্ছনীয়। মনে রাখতে হবে, জামাতে নামাজ আদায় করা অন্য সুন্নত নফল অপেক্ষা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ আমল।

শাওয়াল মাসের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ আইয়ামের বিদের সুন্নত রোজা। আম্মাজান উম্মে সালামা (রা.) বর্ণনা করেছেন, প্রিয় নবীজি (সা.) তিনটি আমল জীবনে কখনো ছাড়েননি: এক. তাহাজ্জতের নামাজ, দুই. আইয়ামে বিদের রোজা, তিন. রমজানের শেষ দশ দিনের ইতিকাফ।

রমজানের রোজার অভ্যাস অব্যাহত থাকা অবস্থায় বেশি বেশি নফল রোজা রাখা যায়। বিশেষত, প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবারের সুন্নত রোজা, যা মক্কা মুআজ্জমায় ও মদিনা মুনাওয়ারায় অদ্যাবধি অতীব গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা হয় এবং অত্যন্ত জাঁকজমকের সঙ্গে রাষ্ট্রীয়ভাবে ও স্থানীয় পর্যায়ে ইফতারিরও আয়োজন করা হয়ে থাকে।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]