গুহা সম্পর্কিত সুরার শানে নজুল: ৩
আল-নাদর ইবনে আল-হারিস ছিল কোরাইশদের মধ্যে শয়তান-বিশেষ। ও রাসুলে করিমকে (সা.) সুযোগ পেলেই অপমান করত, তাঁর সঙ্গে প্রকাশ্যে শত্রুভাব পোষণ করত। সে আল হেরায় গিয়েছিল, ওখান থেকে পারস্যের রাজা-রাজড়ার গল্প, রুস্তম-ইসবান্দিয়ারের গল্প শুনে এসেছে। তারপর রাসুলে করিম (সা.) যখন একটা সভা ডেকে সবাইকে আল্লাহ্র কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন, আল্লাহ্র প্রতিশোধ গ্রহণের ফলে অতীতে কোন জনগোষ্ঠীর কী হয়েছিল, তা বলে সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছিল, তখন বক্তব্য শেষ করে রাসুলে করিম (সা.) উপবেশন করার সঙ্গে সঙ্গে উটে দাঁড়াল আন-নাদর। বলল, ‘ওর চেয়ে অনেক ভালো গল্প আমি বলতে পারব, তোমরা আমার কাছে এসো।’ তারপর আন-নাদর পারস্যের রাজার গল্প, রুস্তম আর ইসবান্দিয়ারের গল্প বলা শুরু করল। গল্প শেষ করে সে বলল, ‘কোন দিক দিয়ে মুহাম্মদ আমার চেয়ে ভালো গল্প বলিয়ে, তোমরা বলো?’
আমার জানামতে, ইবনে আব্বাস প্রায়ই বলতেন, এই ব্যক্তির সূত্র ধরে কোরআন শরিফের আটটি আয়াত নাজিল হয়েছিল। ‘আয়াতগুলো আমরা তাকে পড়ে শোনালে সে বলে, পুরাকালের উপকথা।’
এমন উপকথা তাতে আরও আছে।
আন-নাদরের এসব কথা শুনে তারা তাঁকে এবং উকবা ইবনে আবু মুআয়িতকে মদিনার ইহুদি র্যাবাইদের কাছে পাঠাল। বলল, ‘যাও, তাদের কাছে মুহাম্মদের কথা জিজ্ঞেস করে এসো, তার বর্ণনা তাঁদের কাছে দিয়ো, সে যা যা বলে, তার বিবরণ দিয়ো। তারা সব জানে, কারণ তারাই ঐশী গ্রন্েথর প্রথম সম্প্রদায়, নবীদের সম্পদে তাদের যে জ্ঞান আছে, তা আমাদের নেই।’
তারা তাদের কথামতো র্যাবাইদের কাছে গেল। বলল, ‘আপনারা তাওরাতের লোক, আমরা আপনাদের কাছে এসেছি, আপনারা আমাদের বলে দেবেন কেমন করে আমরা আমাদের গোত্রের এই লোককে গ্রহণ করব।’
র্যাবাইরা বললেন, ‘আমরা তিনটি জিনিসের কথা বলব, সেগুলো আপনারা তাঁকে জিজ্ঞেস করবেন। তিনি যদি সঠিক জবাব দিতে পারেন, জানবেন তিনি একজন খাঁটি নবী। আর যদি যথার্থ জবাব দিতে না পারেন, জানবেন এই লোক এক প্রতারক, তখন তাঁকে নিয়ে যা খুশি আপনারা করতে পারেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করবেন, প্রাচীনকালে কয়েকজন যুবক অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল, তাদের আসলে কী হয়েছিল। এ বিষয়ে খুব সুন্দর একটা গল্প আছে। এক শক্তিশালী দিগ্বিজয়ী ছিলেন—যিনি পূর্ব ও পশ্চিমের সমস্ত সীমায় পৌঁছেছিলেন—তাঁর কথা তাঁকে জিজ্ঞেস করবেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করবেন আত্মা কী। যদি তিনি জবাব দিতে পারেন, তাঁকে অনুসরণ করবেন। কারণ, তাহলে বুঝতে হবে, তিনি একজন পয়গাম্বর। জবাব দিতে না পারলে জানবেন সে লোক এক প্রতারক, অতএব তাঁকে আপনারা কী করবেন, আপনারাই ভালো জানেন।’
লোক দুজন ফিরে এল মক্কায়। কোরাইশদের বলল, মুহাম্মদকে ঠিক করার কায়দা তারা জেনে এসেছে। তিনটি প্রশ্নের কথা তারা বলল।
তারা মুহাম্মদের কাছে এল, তিন প্রশ্নের উত্তর দিতে বলল তাঁকে। তিনি তাদের বললেন, ‘আপনাদের প্রশ্নের উত্তর কাল আমি দেব।’ কিন্তু তিনি ‘আল্লাহ্ যদি চান’ অর্থাৎ ‘ইনশাল্লাহ্’ বললেন না। ওরা চলে গেল।
লোকশ্রুতি অনুযায়ী, পনেরো দিন অতিক্রান্ত হলো, এ বিষয়ে কোনো ওহি এল না, জিবরাইল (আ.)-ও এলেন না। মক্কার লোক তখন দুষ্ট প্রচারণায় মেতে উঠল। তারা বলতে লাগল, ‘মুহাম্মদ বলেছিল পরদিনই জবাব দেবে, কিন্তু আজকে পনেরো দিন, আমরা কোনো জবাব পেলাম না।’
এতে ভীষণ ব্যথিত হলেন নবী করিম (সা.)।
অনুবাদ: শহীদ আখন্দ
প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ‘সিরাতে রাসুলুল্লাহ (সা.)’ বই থেকে