হজরত আবু মুসা আল আশয়ারি (রা.)–র গুণ ছিল অনেক। তিনি প্রথম দিকের মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যদের মধ্যে তিনি ছিলেন নেতৃস্থানীয় বিচারক। সবাই বলত: এই উম্মাহর বিচারক চারজন—উমর (রা.), আলী (রা.), আবু মুসা (রা.) ও জায়েদ ইবনে সাবিত (রা.)। আবু মুসা (রা.) মক্কা বিজয় ও হুনাইন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

রাসুল (সা.) আবু মুসা (রা.)–কে ইয়েমেনের গভর্নর করেন। প্রাচীন সময় থেকে ইয়েমেন দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। ইয়েমেন আকসা ও ইয়েমেন। মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.)–কে ইয়েমেন আকসার এবং আবু মুসা (রা.)–কে ইয়েমেন আদনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। দুজনকে বিদায় দেওয়ার সময় রাসুল (সা.) তাঁদের বলেছিলেন, ইয়েমেনবাসীর সঙ্গে কোমল ব্যবহার করতে। কোনো কঠোরতা না করতে। মিলেমিশে বাস করতে।

আরও পড়ুন

সুরা ইয়াসিনে এক কাঠমিস্ত্রির ঘটনা

নিজের দেশ হওয়ায় শুরু থেকেই ইয়েমেনের মানুষদের ওপর আবু মুসা (রা.)–র যথেষ্ট প্রভাব ছিল। তিনি সুষ্ঠুভাবে তাঁর দায়িত্ব পালন করেন। আরেক গভর্নর মুয়াজ (রা.)–এর সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব ছিল। তাঁরা সীমান্তে মিলিত হয়ে নানা বিষয়ে পরামর্শ করতেন।

আবু মুসা আল আশয়ারি (রা.) অত্যন্ত জ্ঞানী ছিলেন। হজরত আলী (রা.) বলতেন, আবু মুসা মাথা থেকে পা পর্যন্ত বিদ্যার রঙে রঞ্জিত। তিনি জ্ঞানীদের সাহচর্যে থাকতে এবং আলোচনা করতে ভালোবাসতেন। জ্ঞানের প্রচার ও প্রসারেও তিনি নানা উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এক ভাষণে তিনি বলেছিলেন, যে ব্যক্তিকে আল্লাহ জ্ঞান দান করেছেন, তার উচিত অন্যদের তা জানানো।

লোকজন জড়ো করে তাঁদের সামনে তিনি ভাষণ দিতেন। পথেঘাটে কারও দেখা পেলে তাদের কাছে রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর বাণী পৌঁছে দিতেন। কেউ অজ্ঞতাপ্রসূত প্রশ্ন করলেও তিনি কোমলভাবে তাকে জবাব দিতেন।

আবু মুসা (রা.) রাতদিন প্রায় প্রতি মুহূর্ত কোরআন পড়তেন ও শেখাতেন। ইয়েমেনের গভর্নর থাকা অবস্থায় একবার মুখাজ বিন জাবাল জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আপনি কীভাবে কোরআন তিলাওয়াত করেন?’ বললেন, ‘রাতে বা দিনে যখনই সুযোগ পাই একটু তিলাওয়াত করে নিই।’

আরও পড়ুন

কিয়ামতের দিন প্রথম কার বিচার হবে

তাঁর সুমধুর কোরআন পাঠ রাসুল (সা.)–এর খুবই পছন্দ ছিল। তাঁর কোরআন তিলাওয়াত শুনলেই রাসুল (সা.) দাঁড়িয়ে যেতেন।

একবার আয়েশা (রা.)-কে সঙ্গে নিয়ে রাসুল (সা.) কোথাও যাচ্ছিলেন। পথে আবু মুসা (রা.)–এর কোরআন পাঠ শুনে তিনি সেখানেই দাঁড়িয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ শোনার পর আবার রওনা দিলেন।

 তাঁর এই অসাধারণ তিলাওয়াতের কারণে রাসুল (সা.) মুয়াজ বিন জাবালের সঙ্গে তাঁকেও নওমু সলিমদের কোরআন শেখাতে ইয়েমেনে পাঠিয়েছিলেন। কোরআনের সঙ্গে সঙ্গে হাদিসের খিদমতেও তাঁর অনেক অবদান ছিল। আবু মুসা আল আশয়ারি (রা.)–র বর্ণনা করা হাদিসের সংখ্যা ৩৬০টি।

তিনি অন্যের জ্ঞানেরও মর্যাদা করতেন। একবার তিনি একজনকে মিরাস (ওয়ারিশ সম্পত্তি)–সংক্রান্ত একটি ফতোয়া দিলেন। লোকটি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)–এর কাছে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি আরেক রকম ফতোয়া দেন। আবু মুসা তা শুনে নিজের ভুল স্বীকার করে বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) জীবিত থাকা পর্যন্ত তোমাদের আমার কাছে আসা উচিত নয়।’ খলিফা উমর (রা.)–র শাসনামলে বসরা শহর প্রতিষ্ঠিত হলে প্রথম গভর্নর হিসেবে তিনি আবু মুসা (রা.)–কে নিযুক্ত করেছিলেন।

আরও পড়ুন

সুরা হাশরের ২২থেকে ২৪ আয়াতের ফজিলত

খলিফা উমর (রা.) তাঁকে বসরার গভর্নর নিযুক্ত করার পর আবু মুসা (রা.) সেখানে গিয়ে সমবেত জনতার সামনে দেওয়া এক ভাষণে বলেন, ‘আমিরুল মোমেনিন আমাকে আপনাদের কাছে পাঠিয়েছেন। আমি আপনাদেরকে রবের কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নত শিক্ষা দেব। আর আপনাদের কল্যাণের জন্য রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখব।’

বসরাবাসীর পানির কষ্ট ছিল। আবু মুসা (রা.)– দজলা নদী থেকে খাল কেটে বসরা শহর পর্যন্ত তার পানি নেওয়ার নির্দেশ দিলেন। ১০ মাইল দীর্ঘ একটি খাল খনন করে বসরাবাসীর পানির কষ্ট দূর করা হয়। ইতিহাসে সেই খাল ‘নহরে আবি মুসা’ নামে প্রসিদ্ধ। হিজরি ২৯ সাল পর্যন্ত তিনি বসরার গভর্নর ছিলেন। মক্কায় হিজরি ৪৪ সালে তিনি ইন্তেকাল করেন।

আরও পড়ুন

গাছের গুঁড়ি কেঁদেছিল, জুমার খুতবা শুনে